ফিরছে কর্মব্যস্ত মানুষ

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে শেকড়ের টানে গ্রামে যাওয়া মানুষগুলো। ট্রেন, বাস বা লঞ্চে করে ঢাকায় ফিরছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। নিজ এলাকা থেকে যানবাহনের ফিরতি টিকিট পেতে বেগ পেতে হলেও গতকাল হাইওয়েতে তেমন কোনো দুর্ভোগে পড়তে হয়নি তাদের। কিন্তু ঢাকায় ফিরেই যানবাহনের জনভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে অনেককেই। যানবাহন সঙ্কট, বাড়তি ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবগুলোর দৌরাত্ম্য যেন আগের অবস্থানে ফিরে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন রুটের লোকাল ও সিটিং বাস ছিল অনেক কম, যা পাওয়া গেছে তা-ও আবার দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছে। তবে অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন থাকলেও প্রয়োজনের চেয়ে তার সংখ্যা ছিল অনেক কম। তা ছাড়া সব ধরনের যাত্রী অ্যাপসভিত্তিক এই যানবাহনের সুবিধা ভোগ করতে পারেননি। ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের অভিযোগÑ হাইওয়েতে তেমন কোনো অসুবিধা না হলেও ঢাকায় ফিরেই বরাবরের মতোই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। গতকাল মঙ্গলবার কমলাপুর রেল স্টেশন, গাবতলী বাস ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, ঈদুল ফিতরের তিন দিন ছুটি শেষ হয়েছে গত রোববার। সোমবার থেকে শুরু হয় প্রথম কর্মদিবস। তবে ঈদের তিন দিনের সাথে অনেকেই আরো দুই-তিন দিন করে ছুটি নিয়েছেন। সে হিসাবে গতকাল মঙ্গলবার অনেকেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন। কমলাপুর রেল স্টেশন, গাবতলী বাস ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। টিকিট বিক্রি সূত্রে পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী শুক্র-শনিবার পর্যন্ত যাত্রীদের ঢাকামুখী ঢল থাকবে।
গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের ঢাকায় ফেরার দৃশ্য। ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাওয়া কর্মজীবী মানুষ বিভিন্ন পরিবহনে করে গাবতলী বাস টার্মিনালসহ ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালে নামছেন। সবার চোখে-মুখে ঈদের আমেজ। কিন্তু রাজধানীর বুকে পা রাখার সাথে সাথেই যেন সেই আমেজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রাজধানীর বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন বা লঞ্চ থেকে টার্মিনালে নেমে বাসায় পৌঁছানোই যেন তাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যশোর থেকে ঈগল পরিবহনে করে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে গাবতলী পৌঁছেন আরাফাত রহমান। তার বাসা রামপুরায়। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে রামপুরাগামী বাস নেই বললেই চলে। অ্যাপস ভিত্তিক যানবাহন উবার কল করেও ভালো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করছেন, যাত্রীর চেয়ে উবারের গাড়ি অনেক কম রয়েছে। আর এ সুযোগে সিএনজি অটোরিকশাগুলোও আগের চরিত্রে ফিরে গেছে। দ্বিগুন ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি তাদের পছন্দ মতো জায়গা ছাড়া কেউ যেতে চাইছে না। বাস থেকে নেমে প্রায় আধা ঘণ্টা তিনি যানবাহনের জন ছোটাছুটি করেছেন।
গোপালগঞ্জ থেকে কমফোর্ট লাইন পরিবহনের একটি বাসে করে গাবতলী টার্মিনালে পৌঁছানো আরিফুর হমান বলেন, অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন আসার পর সিএনজি অটোরিকশা বা ট্যাক্সিক্যাবগুলোর দৌরাত্ম্য কমে গিয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর যাত্রীদের প্রয়োজনের চেয়ে অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন কম হওয়ায় সিএনজি অটো চালকদের খামখেয়ালি আগের রূপ নিয়েছে। চালকদের পছন্দমতো জায়গা না হলে তারা যেতে চায় না এবং যেতে চাইলে ভাড়া দ্বিগুণ নয়, তিন-চার গুণ বেশি দাবি করছে।
এ দিকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাস ছিল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। কিছু কিছু বাস চললেও সেগুলো চালক ও হেলপাররা মালিকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কন্ট্যাক্টে চালাচ্ছে। এতে করে ২০ টাকার ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আদায় করছে। যাত্রীদের অনেকেই যানবাহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন বাস টার্মিনালের আশপাশের রাস্তায়। গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া ৮ নম্বর পরিবহনের হেলপার রাশেদ বলেন, ঈদের কয়েক দিন আগের নিয়মে বাস চলবে না। কারণ এ বাসগুলো চালক ও হেলপাররা মালিকদের এককালীন টাকা দিয়ে চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন। কারণ এ সময়ে বেশির ভাগ চালক ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে যান। মালিকেরা গাড়ি চালানোর লোক না পেয়ে বাস বসিয়ে রাখেন। যে ক’জন চালক ঢাকায় থাকেন তারা ভাড়া নিয়ে গাড়ি চালান।
অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন উবারের চালক সেলিম জানান, ঈদের সময় বেশির ভাগ চালকই গ্রামে চলে গেছে। যে যানবাহনগুলো রয়েছে তা প্রয়োজনের চেয়ে কম। যার কারণে অনেকেই হয়তো সময় মতো যানবাহনের সেবা পাচ্ছেন না। তবে তারা চেষ্টা করছেন যাত্রীদের সাধ্যমতো সেবা দেয়ার।