১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে যেভাবে পারছেন বাড়ি ফিরছেন

বাস-ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়; লঞ্চে ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী বহন; মহাসড়কে যানজট
ট্রেনের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। ছবিটি গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তোলা : নূর হোসেন পিপুল -

ট্রেন, বাস আর লঞ্চে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। ছাদেও ঘরমুখো অসংখ্য মানুষের ভিড়। কোনো কোনো লঞ্চে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ যাত্রী তোলা হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না কর্তৃপক্ষও। তারাই সুযোগ করে দিচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের। আর যারা আগে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি তাদের আরো দুর্ভোগ। তারা যে যেভাবে পারছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। কেউ কেউ রাজধানীতে চলাচলকারী লোকাল বাসগুলো ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। আবার অনেকে চড়েছেন খোলা ট্রাকে।
গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সব টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে ছুটে আসেন আগে থেকে টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা। কিন্তু বেশির ভাগ বাস ও ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন ছাড়তে পারেনি। যাত্রীরা জানিয়েছেন, মহাসড়কে চরম যানজটে তারা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ব্যাংকার আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি মেহেরপুরের উদ্দেশে বেলা সাড়ে ৩টায় গাবতলী দিয়ে বাসে ওঠেন। বিকেল ৬টায়ও তিনি সাভার ছাড়াতে পারেননি।
ঢাকা থেকে বেশির ভাগ ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঈদে ট্রেনের যাত্রা নির্বিঘœ ও ঝামেলামুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তেমনটা হয়নি। গত বছরের মতো এবারো ঢাকার কমলাপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনে ঝক্কিঝামেলা আর শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়েই তাদের বাড়ির পথে রওনা হতে হয়েছে।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আগাম টিকিটের যাত্রীরা প্রথম দুই দিন স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে চড়ে গন্তব্য রওনা হতে পারলেও বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ভোগান্তি আর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। যা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যার কারণে হাজার হাজার মানুষকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এবারের ট্রেন যাত্রায় গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল কমলাপুর স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। এ দিন অনেক ট্রেনেরই শিডিউল ঠিক ছিল না। যার দরুণ বেশির ভাগ ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে গেছে। শুধু বৃহস্পতিবার নয়, আগের দিন অর্থাৎ বুধবারও ১২টি ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে গেছে।
কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত সোয়া ১০টায় লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি রাত পৌনে ২টার পর স্টেশন ত্যাগ করেছে। আর ওই ট্রেনের টিকিট কাটা যাত্রীদের অনেক সিটই বিনা টিকিটের ও স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটা যাত্রীরা দখল করে রাখেন। এতে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়। পরে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল প্রথমে বগি থেকে নেমে যেতে মাইকিং করে। না শোনায় হালকা লাঠিচার্জ করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপরই প্রথম শ্রেণীর বগির টিকিট কাটা যাত্রীরা তাদের সিটে বসতে সক্ষম হন।
গতকাল বৃহস্পতিবার কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, সকাল থেকেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এ দিন অনেক ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পরে স্টেশনে প্রবেশ করে। যার কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে।
টিকিটকাটা যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, অনেক কষ্ট করে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন। তারপরও রীতিমতো যুদ্ধ করে ট্রেনে চড়তে হয়েছে। বগির ভেতর শুধু করিডোরে নয়, সিটের হাতলেও অনেক যাত্রীকে বসতে হয়েছে। ফলে নড়াচড়া করার সুযোগও ছিল না তাদের।
বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটগামী ঈদ স্পেশাল এবং খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেন দু’টি নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর স্টেশন ছেড়ে যায়। লালমনিরহাটের লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেন সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা। ছাড়ে বেলা ১১টায়। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছেড়েছে। নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল ৮টায়। আধা ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস কমিউটার ট্রেন সকাল সাড়ে ৯টার পরিবর্তে ৯টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে গেছে। জামালপুরের তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আধা ঘণ্টা দেরি করে সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস ২০ মিনিট দেরি করে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ছেড়েছে। ৫৯টি ট্রেন কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ঢাকা ছাড়ে। গতকাল পাঁচটি বিশেষ ট্রেনসহ মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল নির্ধারণ করা ছিল।
কমলাপুর স্টেশনে স্বজনদের সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে তুলে দিতে এসেছিলেন সেগুনবাগিচা থেকে রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, সিল্কসিটি বেলা ২টা ৩০ মিনিটে ছাড়ার কথা। কিন্তু সেটি ছেড়ে গেছে ৫টা ৪৫ মিনিটে। এই সময় পর্যন্ত শুধু ভোগান্তি আর ভোগান্তি। অনেকে গেছে বাদুড়ঝোলা হয়ে। একই অবস্থা দেখেছি কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনে। এটি বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ছাড়ার কথা। কিন্তু ছেড়েছে ৫টা ২০ মিনিটে। প্রতিবারই স্টেশনে কেন এমন সমস্যা হয় বলে তিনি আক্ষেপ করেন ? এর আগে বুধবার রাত ১টায় কমলাপুর স্টেশনের ৭ নম্বর প্লাটফর্মে দেখা যায়, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে হাজার হাজার যাত্রী ঠায় বসে থাকলেও ট্রেন ছাড়ছে না। এই ট্রেনটি রাত ১০টায় ছাড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু সেটি রাত পৌনে ২টার পর ছেড়ে যায়।
স্টেশনে এ প্রতিবেদক দেখতে পান প্রথম শ্রেণীর একটি বগিতে যাদের সিট তাদের অনেকেই নির্ধারিত সিটে বসতে পারেননি। এগুলো দখল করে ফেলেন বহিরাগত (সিট ছাড়া) ও স্ট্যান্ডিং টিকিটকাটা যাত্রীরা। পরে বিষয়টি স্টেশন ম্যানেজারকে জানালে তিনি এসে আরএনবিকে নির্দেশ দেন দ্রুত বগি খালি করতে। পরে আরএনবির সদস্যরা মাইকিং করে বলতে থাকেন, আপনাদের যাদের টিকিট নেই তারা দ্রুত নেমে পড়ুন। নতুবা আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবো। এরপরই লাঠি হাতে নিরাপত্তাকর্মীরা প্রথম শ্রেণীর নন-এসি বগিতে উঠে মৃদু লাঠিচার্জ শুরু করেন। এরপরই টিকিট ছাড়া যাত্রীরা নামতে বাধ্য হন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই শত শত নারী-পুরুষকে ট্রেনের ছাদে বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় ছাদের কোনায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসে থাকা এক যাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, এই প্রথম ট্রেনে বাড়িতে যাচ্ছি ঈদ করার জন্য। টিকিট পাচ্ছি না। কোনো উপায় নেই। বাড়িতে যেতেই হবে। যাক যা হওয়ার হবে। তবে কমলাপুর স্টেশনে গত বছরে চেয়ে এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা কড়াকড়ি থাকলেও প্রধান গেটে দায়িত্বরত আরএনবির সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়েই বিনা টিকিটে শত শত যাত্রী কৌশলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। যার কারণে টিকিটকাটা যাত্রীদের সিটে বসতে সমস্যা হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে ঘরমুখোদের নির্ধারিত আসনে বসে গন্তব্য যেতে কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, কয়েকটি ট্রেন সামান্য দেরি করেছে। দুয়েকটি ট্রেনে দেরি হলেও একে শিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে না। তবে ঈদের সময় ১৫-২০ মিনিট দেরি করে যাওয়া বড় কিছু বিষয় নয়, আমাদের কাছে আগে যাত্রীদের নিরাপত্তা। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে নির্ধারিত গতির চেয়ে কমগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিটি ট্রেনই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এক একটি স্টেশনে নির্ধারিত যাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে। প্রচণ্ড ভিড়ে যাত্রীদের ওঠা-নামায় বেশি সময় লাগছে। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে জানতে চাইলে রেলপথ সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। এক ঘণ্টা কিংবা ৩০ মিনিট বিলম্বে ট্রেন চলাচল করাটাকে খুব একটা দুর্ভোগ বলা যাবে না।
সদরঘাটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
সদরঘাট থেকে সংবাদদাতা শামীম হাওলাদার জানান, রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চযাত্রীদের চরম ভোগান্তি। এলোপাতাড়ি লঞ্চ বার্দিং ও লঞ্চে আরোহণের সিঁড়ি অপ্রতুল থাকায় এ ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এ দিকে, অ্যাডভেঞ্চার ৯ ও অগ্রদূত ৭ লঞ্চের তলা ফেটে যাওয়ায় হুড়োহুড়িতে আরো বেশি ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের ৪১টি রুটে চলাচল করছে লঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ও পুরনোসহ তিনটি টার্মিনাল। এসব টার্মিনালে ১৩টি পন্টুন রয়েছে। আর নির্ধারিত স্থানে লঞ্চ বার্দিং না করায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
গতকাল ১৪ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে এডভেঞ্চার ৯ পন্টুনে ভিড়তে গিয়ে লঞ্চের তলা ফেটে যায়। লঞ্চে পানি উঠছে তলিয়ে যাবে এমন কথা জানাজানি হলে সব যাত্রীকে নামতে বললে একপর্যায়ে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। এ সময় কয়েক যাত্রী আহত হন। বর্তমানে রিপেয়ারিংয়ের কাজ চলছে। তবে ক্যাবিন যাত্রী ছাড়া অন্য যাত্রীদেরও প্রচণ্ড ভিড়। গত ১০ দিন আগে অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চ- ৯ উদ্বোধন করে কর্তৃপক্ষ। লঞ্চের মালিক ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সিরাজ নয়া দিগন্তকে বলেন, বেলা ৩টার দিকে লঞ্চ বার্দিংয়ের সময় তলা ফেটে যায় এমন তথ্য ফোনে তাকে জানানো হলে, তাৎক্ষণিক রিপেয়ারিংয়ের নির্দেশ দেই। তবে যথাসময়ে ছাড়তে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। হাসান নামে এক যাত্রী এ প্রতিবেদককে জানান, মাসখানেক আগে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসছি ঢাকায়। আজ নতুন লঞ্চ অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার জন্য বেলা আড়াইটায় নৌকা দিয়ে উঠি লঞ্চে। পরে এমন ঘটনার সম্মুখীন হলে, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে বাম পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। তা ছাড়া তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে জানান। এদিকে, বরগুনা রুটে চলাচলরত অগ্রদূত ৫ নামে একলঞ্চের তলা ফেটে যায়। পরে যাত্রীরা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। তার মধ্যে দু’জন নদীতে পড়ে যান। পরে তারা সাঁতরিয়ে কিনারে উঠতে সক্ষম হন। অন্যদিকে সুরভী ৮ লঞ্চের থাকায় ওইপাড়ে পিছনে থাকা দু’টি নৌকা ও একটি ফলের ট্রলার ডুবে যায়। তবে নৌকা ও ট্রলার কিনারে থাকায় সব মাঝি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন। নৌপুলিশের এক সদস্য জানান, সুরভী টার্মিনালে ঢোকার চেষ্টা করে আবার পিছনে যায়। পরে পিছনে থাকা একটি ফলভর্তি ট্রলার ও দুটি নৌকার ক্ষতি হন। তবে মাঝিরা মিলে নিয়ন্ত্রণে নেয় ডুবন্ত ট্রলারটি।
সরেজমিন আরো দেখা গেছে, যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। টাইমিংয়ের সব লঞ্চ টার্মিনালে না থাকায় পন্টুনে ঢোকার সব গেট বন্ধ করা হয়েছে। ঘাটে থাকা লঞ্চগুলো ছাড়লে গেট খুলে দেয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। আর তারা দ্বিতীয় তলায় যাত্রী বিশ্রামাগারে যেতে বলছেন মাইকিং করে। তবে তা মানছে না যাত্রীরা। গেট ভাঙতে চাচ্ছেন যাত্রীরা। আর বাধা দিচ্ছে পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে শত শত যাত্রী লঞ্চে উঠতে না পারায় চেঁচামেচি করছেন। পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না বলে দেখা গেছে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর লঞ্চযাত্রী মোহন এ প্রতিবেদককে বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছি। লঞ্চে উঠতে দিচ্ছে না পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মী। তিনি বলেন, বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, চার সন্তান ও এক বছরের দু’টি সন্তান নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় সন্তানরা কান্নাকাটি করছে। তা ছাড়া যাত্রীদের ভিড়ে বসার কোনো জায়গা নেই। নির্ধারিত সময়ের আগে টার্মিনালে কিছু লঞ্চ এলোপাতাড়ি বার্দিং করে রাখা হয়েছে। ওই লঞ্চে একাধিক লঞ্চ পার হয়ে যাত্রীরা বিপজ্জনকভাবে আরোহণ করছে। জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা পন্টুন ও টার্মিনাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পটুয়াখালী ও গলাচিপার জন্য নতুন টার্মিনাল ৭ নম্বর ঘাটের ১, ২, ৩, ৪ ও ৭ নম্বর পল্টুন। পুরাতন টার্মিনাল, লালমোহন, আমতলী, পয়সারহাট, মুলাদী, ঘোমা, ভাসানচর, ভাণ্ডারিয়া, তুষখালী, রয়েন্দা, বরগুনা, বেতুয়া, হাতিয়া কালাইয়া, দৌলতখাঁ, বোরহানউদ্দিন, মনপুরা, ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দিকে, লঞ্চগুলো রাখা হয়েছে এলোপাতাড়ি। নিয়মকানুন থাকলেও তোয়াক্কা করছে না লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। এ দিকে দশ থেকে বারো গুণ বেশি যাত্রী উঠানো হয়েছে লঞ্চে। অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়ার নির্দেশ থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। উল্টো যাত্রীদের দোহাই দিচ্ছে তারা। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী দেখা গেছে। ছাদেও তিল রাখার জায়গা নেই। তার মধ্যে রেডসান ৫, মর্নিংসান ৫, ফারহান ৯, রাজদূত ৭, মহারাজ ও সুরভী নয়সহ প্রায় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়েছে। সদরঘাট টার্মিনালের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক আলমগীর কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকালের চেয়ে আজ লঞ্চে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। তা ছাড়া দু’টি লঞ্চের তলা ফেটে গেছে। কর্তৃপক্ষ রিপেয়ারিং করছে। আশা করি লঞ্চ দু’টি ছেড়ে যেতে পারবে। এলোপাতাড়ি লঞ্চ বার্দিংয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement