২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের ছেলের দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার

পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা
-

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের (৫৫) দ্বিখণ্ডিত লাশ রেললাইন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় পুলিশ রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাগিচাসংলগ্ন রেললাইন থেকে সুমনের দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। সুমন জাহিদের মৃত্যু হত্যাকাণ্ড নাকি দুর্ঘটনা, এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে স্বজনদের অভিযোগ সুমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুমনের বড় ভায়রা এ টি এম এমদাদুল হক বুলবুল জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় কে বা কারা তাকে উত্তর শাজাহানপুরের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপরই রেললাইনের পাশে তার লাশ পাওয়া যায়। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি অফিসে চলে যান। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টায় সুমন জাহিদের স্ত্রী টুইসির ফোন পেয়ে দ্রুত তাদের বাসায় ছুটে যান। তার পরিবারের কাছ থেকে শুনেছেন, সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন সুমন জাহিদ। পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ভায়রার দাবি, তাকে এর আগেও বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। দুই বছর ধরে তিনি অনেকবার হুমকি পেয়েছেন। তাই তারা ধারণা করছেন, পরিকল্পিতভাবে সুমনকে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক জানান, সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ওসি আরো বলেন, সুমনের লাশ রেললাইনের ওপর পড়েছিল। রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে যারা থাকেন, তারা প্রায়ই সুমনকে এই এলাকায় দেখতেন।
রেললাইন থেকে সুমন জাহিদের দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নিয়ে যান রেলওয়ে থানার এসআই আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, আনুমানিক সকাল ১০টায় আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। রেললাইন ঘেঁষেই সুমন জাহিদের লাশ পড়ে ছিল। আমরা ধারণা করছি, ট্রেনের চাকা তার গলার ওপর দিয়ে গেছে। তবে কোন ট্রেন তা আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।
সুমন জাহিদ সর্বশেষ ফারমার্স ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। বড় সন্তান উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে ও ছোট সন্তান নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। সুমন শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র ছেলে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের তিন দিন আগে সেলিনা পারভীনকে বাসা থেকে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করে।
সুমন জাহিদের একজন ঘনিষ্ঠ স্বজন কাজী মো: বখতিয়ার টুইংকেল বলেন, সন্দেহ করছি হত্যা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকে ওকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। পুলিশ জানত। নিরাপত্তাও দেয়া হচ্ছিল। পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরারও পরামর্শ দিয়েছিল।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর বলেন, আট বছর বয়সে মাকে হারানোর পর সুমনের সংগ্রাম শুরু। জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে তিনি একসময় ঢাকা শহরে বেবিট্যাক্সি চালিয়েছেন। তিনি এত দুর্বল লোক নন যে, রেললাইনের নিচে মাথা দেবেন।
এ দিকে গতকাল বিকেলে সুমন জাহিদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশের পিঠে, মাথায়, মুখের সামনে, গালে ও নাকে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে মনে হচ্ছে শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়েছে ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে। সুমনকে অজ্ঞান করে রেললাইনের ওপর রেখে গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল মাহমুদ বলেন, হতে পারে। তিনি বলেন, ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন একসাথে করে এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়া হবে। তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে কিভাবে মারা গেছেন। নিহতের শ্যালক কাজী সারোয়ার জানান আজিমপুরে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement