২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সৌদি আরবে আকামা জটিলতায় হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক

পুলিশি অভিযানে ধরা পড়লে ১৫ দিনের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে
-

বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবে পাড়ি জমানো বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে হাজার হাজার কর্মী আকামা জটিলতায় পড়েছেন। কোম্পানি থেকে তাদের আকামা করে দেয়ার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ কোম্পানি সেটি করছে না। এর কারণে বৈধভাবে যাওয়ার পরও আকামা জটিলতার কারণে বহু শ্রমিক এখন অবৈধ হয়ে লুকিয়ে কাজ করছেন। এরমধ্যে যারা পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ছেন তাদের সৌদি সরকারের জাকাত ফান্ডের খরচে ১৫ দিনের মধ্যে বিমানের টিকিট দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে যাওয়া শ্রমিকরা বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে কেউ যেনো সৌদি আরবে আসার চিন্তাও না করে। এলে শুধু পদে পদে বিপদ আর বিপদ রয়েছে বলে হুঁশিয়ার করেন তারা।
এ দিকে ঢাকা থেকে রিক্রুটিং এজেন্সির পাঠানো শতাধিক শ্রমিক প্রতিদিন আকামা সমস্যা, কোম্পানিতে কাজ না থাকাসহ নানা সমস্যা নিয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভিড় করছেন। দূতাবাসের লেবার উইংয়ের কর্মকর্তারা তাদের সমস্যা সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন বলে জানা গেছে। লেবার উইংয়ের এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বর্তমানে সৌদি আরবে বিদেশী শ্রমিকদের আকামাসহ যেসব সমস্যা বিরাজ করছে, সেটি দূতাবাসের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। এসব অভিযোগের বিষয়টি ঢাকায় লিখিতভাবে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এসব সমস্যার সমাধান সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের হস্তক্ষেপ ছাড়া হবে না। তবে রিয়াদের অদূরে এবিভিরক নামক একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে লেবার উইংয়ের তত্ত্বাবধানে কাজ না থাকা ৫০০ শ্রমিককে (রিপ্লেস) বিভিন্ন পদে চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবে পাড়ি জমানো একাধিক প্রতারিত শ্রমিক গতকাল নয়া দিগন্তকে টেলিফোনে জানান, ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে যাওয়ার পরও চাকরি নেই এমন শ্রমিকের এখন অভাব নেই। বর্তমানে সৌদি আরবের পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। নির্মাণপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে আছে। আর যেগুলো সচল সেগুলোও সেøা। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বিপদের মধ্যে আছে। আকামা নেই, কাজ নেই, বেতন নেই এমন ৫০-১০০ জন শ্রমিক গড়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ দূতাবাসে ভিড় জমাচ্ছেন। তারা বলছেন, ঢাকা থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের দালালরা এখানকার ফাইভ স্টার হোটেলের ছবি দেখিয়ে ৫-৬ লাখ টাকা নিয়ে সৌদি আরব পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যাওয়ার পর জানতে পারেন, আসলে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। ক্লিনিংয়ের কাজে বেতন ১০০০ রিয়ালের কথা বলে নিলেও শ্রমিকরা ৫০০ রিয়ালের বেশি বেতন পাচ্ছেন না। নারী শ্রমিকরাও সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তবে আগের তুলনায় অনেক কম।
গতকাল বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, আকামা সমস্যা সেখানে জটিল আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার শ্রমিক অবৈধ হয়ে পড়ছে। তারা সমস্যা থেকে উত্তরণে দূতাবাসে এসে ভিড় করছে। কিন্তু এই সমস্যা দূতাবাসের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে সৌদি আরবে জীবনযাত্রার মান অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বাংলাদেশীসহ প্রবাসী বিদেশী শ্রমিকরা এখন স্বেচ্ছায় দেশটি থেকে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আকামা খরচ কোম্পানির দেয়ার কথা। একজনের আকামা তৈরি করতে ৮-৯ হাজার সৌদি রিয়াল। বাংলাদেশী টাকায় পৌনে ২ লাখ টাকার মতো। এর সাথে ‘টেবিল খরচ’ মিলিয়ে দুই লাখ টাকা পড়ে যায়। কিন্তু কোম্পানিতে যেখানে কাজই ঠিকমতো নেই সেখানে মালিক আকামার খরচ দেবে কিভাবে? ফলে শ্রমিকরা অবৈধ হয়ে পড়ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা অবৈধ হয়ে পড়ছে তারা পালিয়ে কাজ করছে। এরমধ্যে পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে গেলে তাদের ডেপুটেশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর ১৫ দিনের মধ্যে সৌদি আরব সরকারের জাকাতের ফান্ডের টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে অনেকেই দেশে চলে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement