২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রেকর্ড পরিমাণ দামেও খুশি নয় গোলাপ চাষিরা

রেকর্ড পরিমাণ দামেও খুশি নয় গোলাপ চাষিরা - ছবি: নয়া দিগন্ত

ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালিতে গোলাপের দাম রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও খুশি নয় সেখানকার চাষিরা। কুঁড়ি পচা রোগ ও বৈরী আবহাওয়ায় গোলাপ উৎপাদনে ধস নেমেছে বলে দাবি করছেন তারা।অ

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি এলাকার ফুলচাষিরা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে গোলাপের। এখানে প্রতিপিস গোলাপ ১৮টাকায় বিক্রি করছে চাষিরা। সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে এটির দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার ফুলচাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাহারী ফুলের মেলায় কৃষকের মুখে স্বপ্নের ঝিলিক। বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরাও ভিড় জমিয়েছে। বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উৎসব ঘিরে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সাপ্তাহিক বুধবার সেখানে বসে জমজমাট ফুল বাণিজ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা কিনেছেন নানা প্রজাতির ফুল। বাজারে সব রকমের ফুলের দাম বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল গোলাপের দাম। আড়ৎদাররা জানালেন, প্রতি পিস গোলাপ ১৮টাকা, রজনীগন্ধা ২-৪ টাকা, গøাডিওলাস তিন থেকে আট টাকা, জারবেরা পাঁচ থেকে ১৫টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২ থেকে ৩টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও গাঁদা ফুল প্রতি হাজার একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা, জিপসি ও রথস্টিক ফুল ১৫ থেকে ২০টাকা আঁটি (মানভেদে) বিক্রি হয়েছে।

হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন জানান, চার বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। সকালে গদখালির বাজারে দুই হাজার পিস গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন। প্রতি পিস ফুলের দাম পেয়েছেন ১৮ টাকা। গোলাপের দাম আরও বাড়বে বলে আশাবাদী।

তিনি আরো বলেন, গোলাপের কুঁড়িপচা রোগ চাষীদের শেষ করে দিয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবার ফলন তিনভাগের দুইভাগ কমেছে। ভালাবাসা দিবস আর বসন্তবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে ৬ হাজার পিস গোলাপ বিক্রির টার্গেট রয়েছে।

পাটুয়াপাড়া গ্রামের চাষী আলমগীর হোসেন জানালেন, সাত বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এরমধ্যে গোলাপ ফুল রয়েছে ৩বিঘা জমিতে। এবার গোলাপের উৎপাদনে ধস নেমেছে। কাঁচাপাতা ঝরা ও কুঁড়িপচা রোগে উৎপাদন ৮০-৯০ শতাংশ কমেছে। এজন্য গোলাপের দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ১৫ বছর ধরে ফুলচাষ করছি, কখনো ১৮ টাকা পিস গোলাপ বিক্রি করতে পারিনি। এবার ফুলের দাম আরও বাড়বে। রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি করলেও চাষির বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবেনা।

গদখালির পাইকারী ফুল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ভালবাসা দিবসে গোলাপ, বসন্তবরণে জারবেরা আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এক সপ্তাহে ফুলের দাম বেড়েছে। আগামি তিন চারদিনে আরও বাড়বে ফুলের দাম। চাষিদের কাছ থেকে কিনে সাতক্ষীরা, ফরিদপুরে সরবরাহ করছি।

ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, এবার গোলাপ ফুল উৎপাদন কম হচ্ছে। বাজারে চাহিদা বেশি। এজন্য দামও চড়া। ফুলের ব্যবসা করছি পনের বছর। এত বেশি দামে কখনো গোলাপ কিনি নাই।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বৃষ্টিপাতের প্রভাব ফুলের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। এছাড়াও গোলাপ ক্ষেতে ভাইরাস লেগে উৎপাদনে ধস নেমেছে। ভাইরাসের আক্রমণে গোলাপের কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য চাহিদার তুলনায় গোলাপ মিলছে না। সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement