২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন ভিক্ষুক স্ত্রী

- ছবি : নয়া দিগন্ত

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পাল্লা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাশেম শেখ। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে ৪৮ বছর পার হতে যাচ্ছে। এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি তার। জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। তার সে ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। গত মাসের ১৯ তারিখ ৯৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর শোক আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি স্ত্রী মহিরণ নেছা।

জরাজীর্ণ দো’চালা টিনের ঘরে মহিরণের বসবাস। বয়সের ভারে শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে গেছে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে তার অভাবের সংসার চলেনা। প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। অনেক সময় সাহায্য চাইতে বের হতে পারেননা।

একারণে কোনদিন দুই বেলা আবার কোনদিন না খেয়েও থাকতে হয়। স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। তার ইচ্ছা মারা যাওয়ার আগে স্বামীর স্বীকৃতি।

রক্তাক্ত রণাঙ্গনে আবুল হাশেম শেখের অংশগ্রহণ এবং সতীর্থদেরকে নানাভাবে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। মহম্মদপুর ও শালিখা বাহিনীর যুদ্ধকালীন আঞ্চলিক অধিনায়ক বীরপ্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়া কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্রসহ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও রয়েছে আবুল হাশেমের।

মহিরণ নেছা বলেন, “একাত্তরে তার স্বামী নৌকায় করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে বেড়াতেন। পাহারা দিতেন নৌকায় রাখা যুদ্ধের সামগ্রী। পানি ও খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানানভাবে সহযোগিতাও করতেন ।”

তিনি আরো বলেন, “কেউ আমার খোঁজ নেয়না। আমি খুবই অসুস্থ। চিকিৎসা করার টাকা পয়সা নাই। ভিক্ষা করতে যাব তাও যেতে পারিনা। এর আগে আমার স্বামীর নামে ভাতা চালু ছিল। কয়েকবার টাকাও পেয়েছি। পরে আবার তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।”

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই মিয়া বলেন, “আবুল হাশেম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তিনি যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন এটা সত্য। যেহেতু আদালতের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই পক্রিয়া স্থগিত রয়েছে সেহেতু এখন কারো কিছু করার নেই। ”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আমি সবে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং ওই পরিবারকে সাহায্য- সহযোগিতা করা হবে। ”


আরো সংবাদ



premium cement