২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

খুলনার ৮৫ শতাংশ ইলিশের পেটে ডিম!

- ফাইল ছবি

প্রজনন মৌসুমে বিরতির পরও খুলনার বাজারে আনা ৮৫ শতাংশ ইলিশের পেটে ডিম  রয়েছে। এতে আগামী বছর কম ইলিশ সরবরাহ আশঙ্কা থাকছে। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ইলিশের ডিম ছাড়তে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার নগরীর ৫নং ঘাট ও রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তে অন্তত ১০ হাজার মণ ইলিশ এসেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে এর মূল্য ছিল ১২শ’ টাকা। ২২দিন বন্ধ থাকার পর বলেশ্বর নদী ও সুন্দরবন সংলগ্ন ‘আলোর কোল’ থেকে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে আসা ইলিশ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গত কয়েক বছর ধরে ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন করতে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রতি বছর জেলেদের জালে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে। বিগত বছরগুলোতে ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে ১৫ শতাংশের পেটে ডিম ভর্তি থাকত। এবারের প্রায় ৮৫ শতাংশের ইলিশের পেটে ভর্তি ডিম রয়েছে।

মৎস্য কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, প্রজননকাল বৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতে দক্ষিণ অঞ্চলে অনাবৃষ্টিতে কাটে। চলতি বছরের জুন মাসে ১৪৩ মিলিমিটার এবং জুলাই মাসে ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত বছর জুন মাসে এ অঞ্চলে ২২০ মিলিমিটার এবং জুলাই মাসে ৩৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। গত কয়েক বছর ঋতু চক্রে তারতাম্য ঘটছে। তাপদাহের কারণে ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়ে কম।

 

গত শুক্র ও শনিবার বরগুনার চরদুয়ানি, ছকিনা, তালতলি, মহিপুর, আলীপুর, পটুয়াখালীর রাঙাবালি এবং বাগেরহাটের রায়েন্দা থেকে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার ৬ হাজার ৭২৪ কেজি এবং শনিবার ৫ হাজার কেজি ইলিশ খুলনার আড়তে আসে।

আড়তদাররা জানান, বাগেরহাটের বলেশ্বর ও সুন্দরবন সংলগ্ন ‘আলোরকোল’ থেকে ডিম ভর্তি ইলিশ আসছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খুলনার আড়তে ৪৮৩ মেট্রিক টন ইলিশ আসে। গত দু’দিনের আমদানিকৃত ইলিশ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এবং খুলনা শহরের দশটি বাজারে সরবরাহ হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন খুলনার ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ২২ দিন বন্ধ থাকার পর ইলিশ আসতে শুরু করেছে। আগামী মাস পর্যন্ত ইলিশ আসা অব্যাহত থাকবে। এবার ধরা পড়া ইলিশের প্রায় ৮৫ শতাংশের  পেটে ডিম রয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণ প্রতি ২২ হাজার টাকার স্থলে ১৮ হাজার টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণ প্রতি ২৪ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ হাজার টাকা, ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩২ হাজার টাকার স্থলে ২৬ হাজার টাকা এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ মণ প্রতি ৪০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৩৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর ৫নং ঘাট এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১২শ’ টাকার বিক্রি হয়েছিল।  এখন তা ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমায় ক্রেতার আগ্রহ বেড়েছে। শনিবার ৩০ কেজি ইলিশ কিনে বিকালের মধ্যে ১৫ কেজি বিক্রি করেছেন তিনি।

দেশের ইলিশের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা করেছেন আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ড ফিসের গবেষকরা।

ইকো ফিস প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব জানান, ইলিশের প্রজনন বৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া এবং অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম থাকায় তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন।

নিষেধাজ্ঞার আগে খুলনা নগরীর নতুন বাজার, রূপসা ঘাট, বড় বাজার, শেখপাড়া বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, নিউ মার্কেট, বৈকালী বাজারে আশাতীত ইলিশের আমদানি ছিল। শুক্র ও শনিবার স্থানীয় সন্ধ্যা বাজার ও নিউ মার্কেট বাজারে ডিম ভর্তি ইলিশের চাহিদা বেশি ছিল। জেলেরা আশাবাদী এ মাসের অমাবশ্যা ও পূর্ণিমায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। সূত্র : ইউএনবি।


আরো সংবাদ



premium cement