১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘরে না এসে ভিসি কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন : আবরারের বাবা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যেয়ে তোপের মুখে রায়ডাঙ্গা গ্রামে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

শেষ পর্যন্ত আবরারের বাড়িতে না ঢুকে সামনের রাস্তা থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রহরায় তিনি দ্রুত চলে যান। আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজকে মারধর এবং আবরারের মামাতো ভাবী তমাকে আহত করার অভিযোগ উঠেছে।

তমাকে কুমারখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।

ভিসির সাথে ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা।

এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে পৌছান বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। সেখান থেকে ডিসি ও এসপিসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিসি আসার সংবাদ পেয়ে আবরারের বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকে গ্রামবাসী। মুহুর্তেই কয়েক হাজার নারী-পুরুষ আবরারের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওই গ্রামে যান উপাচার্য। সেখানে গিয়ে রায়ডাঙ্গা কবরস্থানে আবরারের কবর জিয়ারত করেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রুপ নেয়। ভিসিকে নিরাপত্তা দিতে কয়েকশ পুলিশের সাথে সেখানে অবস্থান নিতে থাকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। করব জিয়ারত শেষে আবরারের বাড়ির দিকে আসতে থাকে ভিসির গাড়ি বহর।

আবরারের বাড়িতে ঢোকার মুখে আবরারের ভাই ফাইয়াজ ভিসির নিকট জানতে চান, আমার ভাইয়ার খুনিদের এখন কেন বহিস্কার করা হয়নি। এসময় তিনি নিরব ছিলেন, ফাহাদের হত্যা সম্পর্কে আরো প্রশ্ন করতেই ভিসি কোন জবাব না দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান।

এসময় স্থানীয় জনগন ফাহাদের খুনিদের বিচারের দাবীতে শ্লোগান দিতে থাকেন। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিসি ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দিতে থাকে। ভিসির গাড়ির বহরে থাকা এসপির গাড়ি ঘুরাতে দেরি হওয়ার সুযোগে আবরার ফাহাদের মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী তমা এসপির গাড়ির সামনে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকিয়ে দেয়। এসময় মহিলা পুলিশ এসে তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তমা গাড়ির সামনে রাস্তা শুয়ে পড়েন।

এসময় পুলিশ তাকে ধরে রাস্তার পাশে নিয়ে গেলে পুলিশ সুপার দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। পুলিশের সাথে তমার দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তি হলে তমা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুমারখালী হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা গ্রামবাসী বিক্ষোভ করে।

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পিতা বরকতউল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী আর সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারে মারা হয় আর আমার ছেলেকে যারা নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের কেন ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে না? সরকারের উচিত ছিল এতদিনে ফাহাদের খুনিদের ক্রসফায়ারের আওতায় আনা।

বিকেলে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে বুয়েটের ভিসি ফাহাদের বাড়িতে এসেও দেখা না করে চলে যাওয়ায় ক্ষোভের সাথে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ভিসি মহোদয় সম্মানীয় ব্যক্তি তিনি আমার বাড়ির দরজায় এসে ঘরে না ঢুকে কেন চলে গেলেন। তিনি কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আমার ছেলের লাশ দেখাতো দূরের কথা ছেলের জানাজা নামাজেও শরিক না হয়ে নানান প্রশ্নের জম্ম দিয়েছেন।

ফাহাদের পিতা বলেন, আমরা এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষ, ভিসি মহোদয় বাড়িতে আসবেন শুনে এলাকাবাসী দারুন খুশি হয়েছিল। এলাকাবাসী ভিসির নিকট ফাহাদের খুনিদের শাস্তির দাবী জানাতে বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। সেখানে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছিল। তারপরেও তিনি আমার ও ফাহাদের মায়ের সাথে দেখা না করে চলে গেলেন এতে আমার পরিবার দারুনভাবে মর্মাহত।

আমরা ছেলে হারানোর বেদনায় যখন শোকে কাতর, তখন ভিসি মহোদয়ের এই ধরনের আচরনে আমরা দারুনভাবে ব্যথিত মর্মাহত।

ফাহাদের পিতা সাংবাদিকদের আরো বলেন, খুনি ছাত্রদের আজীবনের জন্য বুয়েট থেকে বহিস্কার করতে হবে আর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রমাণ পাওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

ফাহাদের ছোট ভাই ফাইয়াজ আহত অবস্থায় সাংবাদিকদের বলেন, আমি ভিসি স্যারের নিকট জানতে চাইলাম আমার ভাইয়ার খুনিদের এখন কেন বহিস্কার করা হয়নি, এসময় তিনি নিরব ছিলেন, আমি আমার ভাইয়ের হত্যা সম্পর্কে আরো প্রশ্ন করতেই তিনি কোন জবাব না দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যাওয়ার মুহুর্তে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। আমার মামাতো ভাবীকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করা হয়।

ফাইয়াজ বলেন, ভিসি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে আমাদের বাড়ির দরজার কাছ থেকে ফিরে গিয়ে আমাদের কষ্টের মধ্যে ফেলে গেল। এই ভিসির ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই, স্বেচ্ছাই পদত্যাগ করতে হবে।

ফাহাদের মা রোকেয়া বেগম জানান, আমি ফাহাদের মা বলছি ভিসি আমার বাড়ির মেহমান, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমি নিজেই নিতাম। প্রয়োজনে আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতাম। ভিসিকে অসম্মান করার মত এগ্রামে কেউ নেই। ভিসির আচরণ প্রথম থেকেই রহস্যজনক মনে হয়েছে। উনি এত কষ্ট করে এসে আমাদের সাথে দেখা না করে চলে গেলেন আর পুলিশ আমার ছেলেকে আঘাত করলো আর বেটার বউয়ের শ্লীলতাহানি করলো প্রকাশ্যে এর বিচারের দাবী জানাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাহাদের বন্ধু বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জানান, ফাহাদের খুনের ঘটনার পর থেকেই বুয়েটের ভিসির রহস্যজনক আচরণ আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তাকে দ্রুত পদত্যাগ করত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement