১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চৌগাছায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মশক নিধন কার্যক্রমে ধীরগতি

চৌগাছায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মশক নিধন কার্যক্রমে ধীরগতি - নয়া দিগন্ত

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এর সাথে পৌরসভার মশক নিধন অভিযান চলছে ঢিমেতালে। কেবলমাত্র লোক দেখানো কিছু স্প্রে আর মাইকিংয়েই সীমাবদ্ধ পৌরসভার মশক নিধন অভিযান। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রাম থেকে গত কয়েকদিনে ৮/১০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলার সরকারি মডেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৭ সিটের একটি ইউনিট করা হয়েছে।

রোগী বেশী হওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসাথে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যেও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আক্রান্ত ৩১ রোগীর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে সনাক্ত করা হয়েছে ১৭ জন এবং ক্লিনিকে ১৪ জন। এসব ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬ জন। অন্যরা যশোরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ২১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতলে ১৪১ এবং ক্লিনিকে ৭৩ জন সনাক্ত করা হয়।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার গ্রামে গ্রামে মশক নিধন অভিযান পরিচালনাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ও স্বরূপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর, আন্দারকোটা গ্রামে ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ২৫টি বাড়ি থেকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এ সময় মশক নিধনে সেমকো কোম্পানীর আকিক কীটনাশক ছিটানো হয়। বর্তমানে উপজেলা হাসপাতালটির সাত সিটের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১৫ জন ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের চারজন। তবে জনসাধারণের দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া হিসেবের চাইতে রোগীর সংখ্যা বেশি।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশিষ মিশ্র জয় বলেন, আমি শহরের নিরিবিলি পাড়ায় বসবাস করি। এ পর্যন্ত আমার পাড়ায় প্রায় ৬০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকায় আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে পৌর শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও মশক নিধন কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। লোক দেখানো লিফলেট বিতরণ, মাইকিং আর মাঝে মাঝে ফগার মেশিন দিয়ে দু-একটি বাড়ির আশেপাশে ধোঁয়া ছেড়ে কর্তৃপক্ষ দায় শোধ করছে। ফলে পৌর শহরে বসবাসকারী বেশীরভাগ নাগরিক মশক নিধন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পৌরসভার সচিব গাজী আবুল কাশেম জানান, ডেঙ্গু মশক নিধন করতে আমরা পৌর নাগরিগদের সচেতন করার জন্য লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও দুটি ফগার মেশিন দিয়ে ঔষধ স্প্রে করে যাচ্ছি। রোগীর তালিকা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ১৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর আছে।

এ ব্যাপারে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানান, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে কিন্তু চৌগাছায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমাদের হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তারা এখন আশঙ্কামুক্ত।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই চৌগাছা হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের জয়দেব (৪৫), একইদিনে আরাজী সুলতানপুর গ্রামের ইমদাদুল (২৭), ২৭ জুলাই আড়পাড়া গ্রামের আলতাফ আলী (২৮), একইদিন খড়িঞ্চা গ্রামের পরান কুমার (৫০), ২৮ জুলাই ভর্তি হন মাড়ুয়া গ্রামের ফেরদৌস (১৯), ৪ আগস্ট চাঁদপাড়া গ্রামের সুমন (২৮), একইদিন নিয়ামতপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪২), ৫ আগস্ট ভর্তি হন যাত্রাপুর গ্রামের আলমগীর (৩২), ৬ আগস্ট ভর্তি হন মির্জাপুর গ্রামের সেলিম (২২) ও গোপালপুর গ্রামের আব্দুর রহিম (৩১)।

৯ আগস্ট ভর্তি হন রসুলপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম (৫০) ও পৌরসভার নিরিবিলি পাড়ার জুই (২২), ১১ অগস্ট ভর্তি হন নিরিবিলি পাড়ার সাদিয়া খাতুন (২৩), ১৪ আগস্ট ভর্তি হন পৌরসভার বিশ্বাসপাড়ার নার্গিস বেগম (৩০), একইদিন ভর্তি হন নিয়ামতপুরের আজিমা বেগম (৫৫), ১৫ আগস্ট ভর্তি হন শার্শার পারুইকুপি গ্রামের রাবেয়া খাতুন (৩৭), জামিরা গ্রামের সুমন (৩৭) ও বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের আব্বাস আলী (৪৫), তাদেরকে ১৫ আগস্ট রেফার করা হয়।

১৬ আগস্ট ভর্তি হন পৌরসভার বেলেমাঠ গ্রামের খাইরুজ্জামান (২২), একইদিন নিয়ামতপুরের মনিনুল ইসলাম (৪০) ভর্তি হলে পরদিন রেফার করা হয়। ১৮ আগস্ট ভর্তি হন গুয়াতলী গ্রামের হাশেম আলী (৫০), ১৯ আগস্ট ভর্তি হন যশোর সদরের সাড়াপোল গ্রামের মুরসালিন (১), টেঙ্গরপুরের জুলফিকার আলী ভূট্টো (৫২), পৌরসভার বিশ্বাসপাড়ার ইমন হোসেন (১০), বলিদাপাড়ার দাউদ হোসেন (৫০), ২০ আগস্ট ভর্তি হন চৌগাছা বাজারের সাথী বেগম (৪০), একইদিন পৌরসভার পাঁচনমনা গ্রামের আশুরা বেগম (৫০), ২১ আগস্ট পৌরসভার কালিতলার রিমি খাতুন (২৭), ঝিকরগাছার বাগডাঙ্গা গ্রামের লুৎফর রহমান (৭৪), গুয়াতলীর শফিকুল ইসলাম (৩০), একই গ্রামের আব্দুর রহিম (৩),একইদিন ভর্তি হন স্বরূপদহের জাহেদ আলী (৬৫) ও টেঙ্গরপুরের গাফফার (৫৬)।

২৩ আগস্ট ভর্তি হন নারায়ণপুরের ফাতেমা খাতুন (২৫) ও হাকিমপুরের আরিফ হোসেন (২৫), ২৪ আগস্ট ভর্তি হন পাতিবিলার রাধারাণী (২০), জামদিয়ার হেনা পারভীন (৫৫) ও আন্দারকোটার নার্গিস বেগম (৫০), একইদিন ভর্তি হন বাগারদাড়ি গ্রামের অহিদুল ইসলাম (৪৫), ২৫ আগস্ট মহেশপুরের মিজানুর রহমান (২৮), সাদিপুরের বিশারত আলী (৫৫), চৌগাছা বাজারের মহিদুল ইসলাম (৫৪) ও সুমা (১৩), বাগারদাড়ির আল-আমিন (২৫), ২৬ আগস্ট ভর্তি হন ফুলসারার সুলতান হোসেন (১৬), কমলাপুরের হায়দার আলী (৪৮), জগদীশপুরের সাধনা রাণী (১৯) ও পাঁচনমনা গ্রামের জয়নুল আবেদীন (২৬)।

২৭ আগস্ট ভর্তি হন ইদ্রাকপুরের অজয় কুমার (১১), পৌরসভার ইছাপুর গ্রামের মঞ্জুয়ারা বেগম (৫০) পৌরসভার বেলেমাঠের বিল্লাল হোসেন (৩৫), ২৮ আগস্ট ভর্তি হন মির্জাপুর গ্রামের রুমা খাতুন (৩০), চৌগাছা বাজারের অভিজিৎ (৩৬), বড়খানপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান (১৮) ও হাবাশপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৬৭)।

এছাড়া এ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যশোরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ৪৪ জন। তারা হলেন- হাসান (৩০), তুষার (২৫), সুরাইয়া (২২), হাসিনা (১৪), মিনাক্ষী রাণী (২৫), আসাদুজ্জামান, হাশেম আলী, মহেশপুরের আলী হোসেন (১৭), মির্জাপুরের হুমায়রা (২০), তৌহিদুল (২৬), সেলিম (৫০), নার্গিস (৩০), ডাকবাংলো পাড়ার জিকু (৩০), রহমত আলী (৪৬), আব্বাস আলী (৪৫), শোভা (১৭), সেন্টু (৩৫), আনিছুর (৫০), মুরসালিন (১), মিনাক্ষী (২৫), রেবেকা (৪৫), ইমন (১০), রেবেকা (২৮), মাসহাফিয়া (৬), রিমা (১৩), দাউদ (৫০), শফিকুল (৩০), জাহেদ আলী (৬৫), আব্দুর রহিম (৩২), হেনা পারভীন (৫৫), নার্গিস (৫০), আজাদ (৪৫), অভিজিৎ (৩৬), মিজানুর (২৮), সুলতান (১৬), সারতনন্নেছা (৪৫), আদরী (৩৫), আরিফুজ্জামান (৭), সেলিনা (৫৫), আদম আলী (৬০), অমি (১৪), ওয়াজেদ আলী (৫৫)।


আরো সংবাদ



premium cement