২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডুমুরিয়ার ঘ্যাংরাইল নদীতে নয়নাভিরাম কাঠের সেতু

ডুমুরিয়ার ঘ্যাংরাইল নদীতে নয়নাভিরাম কাঠের সেতু - নয়া দিগন্ত

‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুইপা ফেলিয়া’ কবি গুরু ররীন্দ্রনাথের এই কথাটির সত্যতার স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি গ্রামীণ কাঠের সেতু। ডুমুরিয়ার কুলবাড়িয়া- নিচুঁখালির গাঁ বেয়ে যাওয়া ঘ্যাংরাইল নদীর উপর ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য নির্মিত সেতুটি হাজার হাজার মানুষের দুর্দশা লাঘবের পাশাপাশি দৃষ্টি নন্দনও বটে। শালতা নদীর উজান থেকে নেমে আসা প্রবাহমান পানির প্রচন্ড স্রোতধারার পাশাপাশি সেতুটির নয়নাভিরাম দৃশ্যটি যে কারো মনজুড়ায়।

ডুমুরিয়া উপজেলার কুলবাড়িয়া- নিঁচুখালিসহ ৫-৬টি গ্রামের ঘ্যাংরাইল নদী পারাপারে জনদুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। ঝুঁকিপূর্ণভাবে এক বাঁশের সাঁকো আর নৌকায় করে হাজার হাজার মানুষ কোনমতে নদী পার হতো। প্রচন্ড এ দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ১ যুগ ধরে এখানে একটি সেতু এবং রাস্তা নির্মাণের জন্য জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।

বর্তমান উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্নয়ন তহবিল হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৫০ ফুট ইটের রাস্তা নির্মাণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন। নির্মাণ শেষে ২৫ জুন রাস্তাটি উদ্বোধনের দিন জনগণ উপজেলা প্রশাসনের কাছে বাকি ৪৫০ ফুট রাস্তা এবং নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহনাজ বেগম আরও ২ লক্ষ টাকা উপজেলা এডিবি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই কাঠের সেতুটির নক্সা তৈরি করেন। দৃষ্টিনন্দন সেতুটি দ্রুত নির্মাণে জনগণের কাছে দর্শনীয় এবং মোহনীয় হয়ে উঠেছে। দেখতে আগন্তুকদের কাছে যেন সাগর তীরের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট এটি।

বিকেল বেলায় সেতুতে ঘুরতে আসা কলেজছাত্র ইমরান হোসেন, বুলবুল আহমেদ কাজল, কৌশিক সরকার, শেখ তুহিন, শারমিন জলি, রেবেকা খাতুনসহ অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ইউপি সদস্য আঃ হালিম মুন্না ভাইয়ের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হল। তার মত উদ্যোগী সদস্য যদি বাংলাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকতো তাহলে উন্নয়নের কমতি থাকতো না। রাস্তা এবং দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতুটি তৈরি করায় এটা মিনি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে সাগর তীরের নয়নাভিরাম দৃশ্য এটি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মুন্না বলেন, সুষ্ঠু তদারকি এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে ইটের রাস্তা এবং বাঁশ ও কাঠ দিয়ে দৃষ্টি নন্দন ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যসম্পন্ন সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। ১৭ জুলাই বুধবার উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে কাঠের নির্মিত সেতুটি উদ্বোধন করেন। তাছাড়া অপরূপ সৌন্দর্যের এই নিদর্শন এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু গ্রামীণ পর্যটন স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এমনকি সেতুর উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তোলারও ভিড় জমে উঠেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ শাহনাজ বেগম বলেন, আমি মনে করি ব্রীজটি নির্মাণে কৃষকদের ধান, মাছ সবজিসহ সকল ধরনের ফসল তারা সহজে বাজারে নিতে পারবেন। এতে প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাম হবে শহর যেখানে গ্রামের মানুষেরও শহরের মানুষদের মতো জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে। তারই প্রেক্ষিতে সলিং রাস্তাসহ এই ব্রীজ স্থাপনের সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ এই দৃষ্টিনন্দন, নয়নাভিরাম অত্যাবশকীয় এই ব্রীজ। একদিকে যেমন জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে অন্যদিকে এই নয়নাভিরাম ব্রীজ, জলাশয়সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য পরিবেশে সুন্দর একটা বিকেল, অপূর্ব এক সন্ধ্যা উপভোগ করতে পারবে। মানসিক উৎকর্ষ সাধনের এক আধার বলা যেতে পারে, যেখানে একটি সুন্দর সময় অতিবাহিত করার মাধ্যমে মনের সকল হীনম্মন্যতা, হীন চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থেকে মাদকমুক্ত, কলুষমুক্ত যুবসমাজ গড়তে পারবে, তারাই হবে আমাদের আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা।

ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও তরুণ সমাজসেবক গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, সবার নজর কেড়েছে কাঠ এবং বাঁশের সেতুটি। ডুমুরিয়ার উপজেলা আটলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত ঘ্যাংরাইল নদীতে ১২’শ ফুট রাস্তা এবং কাঠের সেতুটি ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। দুই পারের মানুষের পারাপারের জন্য ওই সেতুটি নির্মাণের ফলে অন্ততঃ ৫-৬ গ্রামের মানুষের পারাপারসহ ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধাও বাড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement