১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খুলনায় চাঞ্চল্যকর ব্যাংক কর্মকর্তা মেয়ে-বাবা হত্যাকাণ্ডে ৫ জনের ফাঁসি

খুলনায় চাঞ্চল্যকর ব্যাংক কর্মকর্তা মেয়ে-বাবা হত্যাকাণ্ডে ৫ জনের ফাঁসি - নয়া দিগন্ত

খুলনায় চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণের পর হত্যা এবং তার বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস চৌধুরীকে হত্যার ঘটনায় ৫ আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসাথে তাদের  প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং লাশ গুম চেষ্টার অভিযোগে আরো ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোহা. মহিদুজ্জামান মঙ্গলবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ধর্ষণের মামলায়ও ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানার বুড়ো মৌলভীর দরগাহ রোডের বাসিন্দা শেখ আব্দুল জলিলের ছেলে সাইফুল ইসলাম পিটিল (৩০) ও তার ভাই মো. শরিফুল ইসলাম (২৭), মো. আবুল কালামের ছেলে মো. লিটন (২৮), অহিদুল ইসলামের ছেলে আবু সাঈদ (২৫) এবং মৃত সেকেন্দারের ছেলে মো. আজিজুর রহমান পলাশ (২৬)। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আসামি শরিফুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। রায় ঘোষণাকালে শরীফুল বাদে অন্য চার আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ জানান, হত্যাকাণ্ড মামলায় ২২ জন ও গণধর্ষণের মামলায় ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। আসামীদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে। মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৫ জনের মধ্যে ৪ জন গ্রেফতার হয়। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় পিটিলের স্ত্রী আসমা খাতুন, নোয়াব আলি গাজী ও আসলাম মিস্ত্রি নামের একজন সন্দেহভাজনকে। তাদের মধ্যে লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নির্মম ঘটনা। লিটন ও সাঈদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন অফিসে আসা-যাওয়ার পথে আসামীরা কুপ্রস্তাব দেয়াসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন। এর প্রতিবাদ করায় ঘটনার দিন রাতে দেয়াল টপকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ৫ আসামি। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রথমে পারভীনের বাবাকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করা হয়। পাশের রুমে থাকা পারভীনকে ৫ জন মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকির মধ্যে বাবা ও মেয়ের মরদেহ ফেলে দেয়। পরে ঘরে লুটতরাজ চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

আইনজীবী ফরিদ আহমদে মামলার নথির বরাত দিয়ে জানান, কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে উত্ত্যক্ত করতো এলাকার কয়েকজন বখাটে সন্ত্রাসী। তাদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণ ও তার পিতা ইলিয়াস চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। নগরীর লবণচরা থানার বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার ৩ নম্বর গলির ঢাকাইয়া হাউজ এ.পি ভিলা নামের বাড়িতে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার মধ্যে নৃশংস এ জোড়া হত্যার ঘটনা ঘটে। বাবা ও মেয়েকে হত্যার পর বাড়ির ভিতরে সেফটি ট্যাংকের মধ্যে লাশ ফেলে দেয় খুনিরা। পরে তারা ওই ঘরের টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় লবণচরা থানায় পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদি হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করেন। পারভীন সুলতানাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগে ২২ সেপ্টেম্বর আরও একটি মামলা দায়ের হয়। ২০১৬ সালের ৯মে হত্যাকাণ্ডের ও একই বছরের ২৪ মার্চ গণধর্ষণের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো. কাজী বাবুল ৫ জনকে অভিযুক্ত করে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী নিহত ইলিয়াস চৌধুরীর ছেলে ও পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান। একই সঙ্গে পলাতক আসামি শরিফুলকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ। সহায়তায় ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী সাব্বির আহমেদ, অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তসলিমা খাতুন, অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা। 


আরো সংবাদ



premium cement