২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পিতার সাথেও প্রতারণা করেছে সেই ভুয়া এএসপি

পিতার সাথেও প্রতারণা করেছে সেই ভুয়া এএসপি - নয়া দিগন্ত

যশোর শহর থেকে আটক হওয়া আইজিপির চিফ প্রোটকল অফিসার ও সহকারী পুলিশ সুপার পরিচয়দানকারী রাকেশ ঘোষ তার নিজের পিতা ও পরিবারের সাথেও প্রতারণা করেছে। তার পিতা সন্তোষ ঘোষ অভিযোগ করে এ কথা বলেন। অপরাধী হলে তার আইনানুযায়ী বিচারেরও দাবি করেছেন তিনি। একইসাথে তাকে যারা এই পথে এনেছে তাদেরও বিচারের দাবি জানান সন্তোষ ঘোষ।

শনিবার সকালে রাকেশের বাবার বাড়ি চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের বহিলাপোতা গ্রামে গেলে এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয়দের সামনে গলাছেড়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, মনে করেছিলাম ছেলে চাকরি পেয়েছে। এখন আমার অভাবের সংসারে সুখ আসবে। আমার স্ত্রী (রাকেশের মা) হার্টের রোগী। এবার তাকে সুচিকিৎসা করাবো। তাতো আর হলো না বাবা। ও আমার সাথেও প্রতারণা করেছে। আগেও রাকেশ আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাংকে জমানো ডিপিএসের টাকা প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে।

পুলিশের অফিসার পদে চাকরি পেয়েছে বলে সে আমার থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে। আমি জমি বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েছি। ২০১০ সালে উপজেলার আন্দারকোটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বানিজ্য বিভাগে এসএসসি পাশ করে। ২০১২ সালে চৌগাছা শহরের তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অনার্স শেষ করে। ছেলেকে লেখাপড়া শিখালাম। আর ওসহ পুলিশ পরিচয়ে অন্যরাও আমার সাথে এমন প্রতারণা করল ?

তিনি বলেন, রাকেশের ফোনে সবসময় কল এসেই যেত। মনে হতো সে যেন বড় কোন অফিসার বা কেউ হবে। আমাকে বলেছিলো চৌগাছা থানায় এক সময় দায়িত্বপালনকারী এএসআই শহিদ আমাকে চাকরি দিয়ে দিচ্ছেন। আমার প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে একদিন সন্ধ্যায় দুটি মোটরসাইকেলে চেপে পাঁচজন পুলিশের পোশাক পরা লোক আমার বাড়িতে আসে। ছেলের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য। তারা আমাকে বলেন, আপনার ছেলে বড় পদের অফিসার হতে যাচ্ছে।

তাদের কাছ থেকে আমি এএসআই শহিদের মোবাইল নম্বর (০১৭২০৫৬১৫৩১) নেই। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কোন চিন্তা করবেন না, আপনার ছেলের চাকরি হয়ে গেছে। এরপর একদিন আমি যশোর-কুষ্টিয়া সড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার থেকে ছেলেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার জন্য রাজশাহীগামী বাসে উঠিয়ে দেই। সেখানেও একজন পুলিশের পোশাক পরা সদস্য ছিলেন। এত কিছুর পরও এভাবে প্রতারিত হলাম ?

এ সময় গ্রামের শৈলেন ঘোষ, সুবোধ ঘোষসহ নারী-পুরুষরা রাকেশের পিতার কথার সাথে একমত পোষণ করেন। সন্তোষ ঘোষ বলেন, আজ সকাল সাতটা আটত্রিশ মিনিটেও এএসআই শহিদের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আপনার ছেলের বিষয়ে আপনার ছেলেই ভাল জানে।

স্থানীয়রা বলছেন, রাকেশ এলাকায় ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত। তারা জানেন সে পুলিশের এসআই হয়েছে। এখন ট্রেনিংয়ে আছে। তারা আরো বলেন, গ্রামের কেউ ছোটখাটো কোন পুলিশি বা অন্য ঝামেলায় পড়লে সে থানায় ফোন করে মিটিয়ে দিতো। এর জন্য কারো কাছ থেকে কোন টাকা নিতো না। ক’দিন আগে গ্রামের দু’ব্যক্তি গাঁজাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়। পুলিশের সাথে কথা বলে রাকেশ তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়।

স্থানীয়রা আরো জানান, তার পিতা ও কাকারা এলাকায় নিরিহ হিসেবেই পরিচিত। তবে রাকেশ চাকরি পাওয়ার খবর রটিয়ে দেয়ার পর থেকে তার পিতা দুধ বিক্রি বন্ধ করে একটু ভদ্রস্থভাবে চলাফেরা শুরু করেন। আর তার মা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বলে বেড়াতেন আমার ছেলে মেধাবী। চাকরি পেতে হলে মেধাবী হতে হয়। চাকরির খবর রটানোর আগে রাকেশ যশোরে পাসপোর্ট অফিসের চাকরি করে বলেও এলাকায় ছড়িয়েছিল। তখনও এলাকার বিভিন্নজনের পাসপোর্ট অফিসের নানা কাজ সে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমাধান করে দিত।

রাকেশের বিষয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার তালা থানায় কর্মরত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক শহিদ মোবাইল ফোনে বলেন, তার চাকরি বা চাকরিজনিত কোন বিষয়েই আমার জানা নেই। তার সাথে যশোরে চাকরিরত অবস্থায় পরিচয়। তিনি হঠাৎ একদিন বলেন ৩৭ তম বিসিএস এ তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই একজন বিসিএস কর্মকর্তাকে আমরা সম্মান করি। সেভাবেই তাকে সম্মান করতাম। তার সাথে চা খেয়েছি। এরপর একদিন তার ছোট বোনের বিয়েতে যেতে আবদার করে। পরিচয়ের সূত্র ধরেই আবদার মেটাতে সেখানে গিয়েছি। কিছুদিন আগে অর্থাৎ মাস তিনেক হবে তিনি প্রশিক্ষণের দিনক্ষণও বলেছিলেন।

এএসআই শহিদ আরো বলেন টাকার বিষয় আমি জানি না। এর আগেও তার পিতা আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলেছি যদি তার চাকরি হয়ে যায় তাহলে অল্প-স্বল্প খরচ খরচার জন্য যেন না আটকে যায়। তিনি আমাকে বলতেন তার ছেলের চেয়েও আমাকে বেশি বিশ্বাস করেন। রাকেশ বলতে পারবেন তার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক বা এর মধ্যে আমি আছি কি না?

চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিব বলেন, এগুলো সবই ভুয়া হতে পারে। রাকেশ ঘোষ নামের কোন ব্যক্তির পুলিশ ভেরিফিকেশন চৌগাছা থানা পুলিশ করেনি। এএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে এএসপি পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা থাকতে হয়। 


আরো সংবাদ



premium cement