২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১.৫ লাখ মেট্রিক টন

যশোরে নষ্ট বোরো বীজতলা : দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কৃষক

যশোরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো বীজতলা, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কৃষক। ছবিটি মনিরামপুর উপজেলার একটি মাঠ থেকে তোলা - নয়া দিগন্ত

ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে যশোরের বোরো বীজতলার চারা গাছে পচন ধরে নষ্ট হচ্ছে। এতে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আসন্ন বোরো চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক। এ অবস্থায় বীজতলা রক্ষায় উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষকদেরকে পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে বলা হলেও তেমন একটা কাজ হচ্ছে না বলে জানান কৃষকরা। ফলে চারার অভাবে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন তারা।

কৃষকেরা জানান, গত ক’দিন থেকে প্রচন্ড ঘন কুয়াশা ও তীব্র শৈত্য প্রবাহের কারণে বোরো বীজতলার চারা (অংকুরিত চারা গাছ) ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। প্রথমে বীজতলার চারা হলুদ ও ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে পচে যায়। এছাড়াও চারা গাছের শিকড়েও পচন ধরে চারা বীজতলায় শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে যশোর জেলার আটটি উপজেলায় ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিমান জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করতে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর, সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ক’দিনের বয়ে যাওয়া অব্যাহত ঘন কুয়াশা এবং শৈত্য প্রবাহের কারণে ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়ে বোরো বীজতলার চারা গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে এবং চারা গাছের শিকড় পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, মাঘ মাসের ১৫/২০দিনের মধ্যেই বোরো চাষ শুরু হবে। বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করতে হবে। কিন্তু বীজতলার চারার শতকরা ৫০/৬০ ভাগ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বোরো চাষ নিয়ে কৃষকেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করলেও বোরো আবাদ দেরি হয়ে যাবে। ফলে ধানের ফলন কম হবে। এতে করে কৃষকেরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

শার্শা উপজেলার শালকোণা গ্রামের কৃষক সাহেব আলী জানান, এবার তিনি ৪কাঠা জমিতে বোরোর বীজতলা করছেন। একই গ্রামের শাহিনুর আলম করেছেন ৫ কাঠা জমিতে। তাদের ক্ষেতের বীজতলা লালচে রঙ আকার ধারণ করছে। তারা জানান, তাদের গ্রামের বেশিরভাগ চাষির বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীতের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে তাদের ধারণা।

যশোরের মণিরামপুরের জলকর রোহিতা গ্রামের চাষি আবুল খায়ের এ বার তিন কাঠা জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু গজানোর পর চারাগুলো লালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও তিনি বীজতলা নিরাপদ রাখতে পারছেন না।

আবুল খায়ের বলেন,‘বীজতলা রক্ষার জন্য অন্য বারের তুলনায় এবার চারগুণ বেশি খরচ করিছি। টিকাতে পারিনি। সব চারা লালচে হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। এবার বোরো চাষ করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’

একই গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেন। তারও ৩ কাঠা জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন,‘পাতোখোলায় (বীজতলায়) গেলে কান্না আসে।’

জলকর রোহিতা গ্রামের চাষি জয়নাল বলেন,‘আমরা তিনজনে মিলে ১০ কাঠা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি। পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।’

শুধু এই উপজেলায় নয়, এরকম অন্যান্য উপজেলার কৃষকদের জমির বোরোর বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, শীতের সকালে রোদ থাকায় বোরোর বীজতলা তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। মাত্র কয়েকজন চাষির এই অবস্থা হয়েছে।

চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মনিরামপুরের জলকর রোহিতার মতো উপজেলার খেদাপাড়া, গালদা, চাঁদপুর, দীঘিরপাড়, হানুয়ার, হরিদাসকাঠি, মহাদেবপুর, খানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বীজতলা রক্ষা করতে পারছেন না কৃষকরা। ঠান্ডাজনিত কারণে এবার বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি উপজেলা কৃষি অফিসের।

এমন পরিস্থিতিতে আশামিল বা রিডোমিল গোল্ড কিংবা থিয়োভিট নামে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অফিস। এই ক্ষেত্রে কৃষকরা বিকেলে বীজতলায় গরম পানি ঢুকিয়ে সকালে বের করে দিলে প্রতিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরককুমার সরকার বলেন, তীব্র শীতের কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। যারা অফিসে আসছেন, তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক এমদাদ হোসেন জানান, আমাদের বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ফলনও ভালো হবে। তীব্রশীতে কিছু কৃষকের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে দিনের বেলা প্রচুর রোদ থাকায় ক্ষেত ক্ষতির মুখে পড়বে না। তারপরও যেসব কৃষক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement