২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতিতে তিন বন্ধুর মধ্যে সবচেয়ে সফল তরিকুল ইসলাম

খালেদুর রহমান টিটো, তরিকুল ইসলাম ও আলী রেজা রাজু। - সংগৃহীত

তরিকুল ইসলাম, খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজু। তিন বাল্যবন্ধু। ষাটের দশকে অবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়ন করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তাদের হাতেখড়ি। এরপর দীর্ঘ পথচলায় কখনো তারা ছিলেন একই ছাতার নিচে। কখনো পথ হয়ে গেছে আলাদা। প্রতিপক্ষ হয়ে একে-অন্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন নির্বাচনে। যশোর-৩ সদর আসন থেকে এমপি হয়েছেন তিনজনই। অথচ এ তিন নেতা মধ্যে রাজু আর তরিকুল আজ নেই। আর টিটো রাজনীতিতে এখন কঠিন সময় পার করছেন। আজীবন আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করে আসা তিন বন্ধু । টিটো বর্তমান সময়ের পেশিশক্তি আর কালো টাকার রাজনীতির কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন অনেকেই। রাজনীতিতে তিন বন্ধুর মধ্যে সবচেয়ে সফল তরিকুল ইসলাম। বিএনপির প্রতিটি শাসনামলেই মন্ত্রী হয়েছেন তিনি। দলটির জন্মলগ্ন থেকেই একটানা রয়েছেন বিএনপির সঙ্গে। জেল খেটেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। দলের দুঃসময়ে সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন মহাসচিবের দায়িত্বও। মৃত্যু আগে তিনি বিএনপি স্থায়ী কমিটিন সদস্য ছিলেন।

খালেদুর রহমান টিটো জাতীয় পার্টিরমন্ত্রী হয়েছিলেন। দলটির মহাসচিবও ছিলেন। একসময় জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে রাজনীতিই ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ২০০৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দলটির মনোনয়ন নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বন্ধু তরিকুল ইসলামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন।

আলী রেজা রাজু একসময় বিএনপির যশোর জেলা সভাপতি ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি। মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়ার দ্বন্দ্বে তিনিও বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। প্রার্থী হয়ে পরাজিত করেছিলেন বন্ধু তরিকুল ইসলামকে। যশোরের যে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিহাস, তা লিখতে গেলে সিংহভাগ জুড়েই থাকবে এ তিন বন্ধুর কথা। যশোরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রায় সবটাতেই রয়েছে এ তিন বন্ধুর কমবেশি অবদান। বর্ষীয়ান এ তিন নেতার মধ্যে আজ রাজু আর তরিকুল নেই। যশোর উন্নয় আর রাজনীতিরে সব চেয়ে সফল যিনি তিনি হলেন তরিকুল ইসলাম।

তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে জন্মগ্রন করেন। পিতা আলহাজ্জ্ব আব্দুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। তরিকুল ইসলাম দুই পুত্র সন্তানের জনক। অমিত আর সুমিত। ছোট চেলে আমিত বিএনপির খুলনা বিভাগীয়সহসংগঠনিক সম্পাদক। স্ত্রী নারর্গিস ইসলাম তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। তিনি যশোর সরকারী সিটি কলেজে বাংলা বিভাগের উপাধ্যাক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তরিকুল ইসলামের ১৯৫৩ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আই. এ. এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে বি. এ. (অনার্স) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ নয় মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় গ্রেপ্তার হন।

১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ভাসানী ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন বরেণ্য এ রাজনীতিক।

জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে পর্যায়ক্রমে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে পদোন্নতি পান।

১৯৭৩ সালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তরিকুল ইসলাম নাম লেখান জনপ্রতিনিধির খাতায়। ১৯৭৮ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত ও ১৯৮১ সালে সড়ক ও রেলপথ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী চরিত্র হলেও ভোটের রাজনীতিতে তার রয়েছে মিশ্র অভিজ্ঞতা। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে বিএনপি সরকার গঠন করলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান । পরের বছর হন পূর্ণমন্ত্রী। ১৯৯৪ সালের উপ-নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককালের দুই বন্ধুর মুখোমুখি হন তিনি। বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যাওয়া আলী রেজা রাজু ও জাতীয় পার্টির খালেদুর রহমান টিটোর সঙ্গে লড়ে পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলী রেজা রাজুকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তরিকুল। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পর্যায়ক্রমে খাদ্য, তথ্য ও সর্বশেষ বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ঘুরে আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেয়া এককালের বন্ধু খালেদুর রহমান টিটোর কাছে পরাজিত হন তিনি। বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় প্রার্থী হননি তিনি। তরিকুল ইসলাম যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত

সকল