২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুষ্টিয়ায় স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা মামলার ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

-

কুষ্টিয়ার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা মামলার তিন আসামিকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আলোচিত এ মামলার কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদাললের (নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল) বিচারক মুন্সী মো: মশিয়ার রহমান এ রায় দেন।

রায় ঘোষনার সময় আসামী সাব্বির খান এজলাসে উপস্থিত ছিল বাকি দুই আসামি হেলাল উদ্দিন ড্যানী ও আব্দুর রহিম শেখ পলাতক রয়েছে। রায় ঘোষণার পর নিহত স্কুলছাত্র হৃদয়ের মা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, পলাতকদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবী সেই সাথে ফাসির রায় দ্রুত কার্যকরের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।

আদালতের রায়ে জানা যায়, আসামি সাবিব্বর খান, পিতা- গফ্ফার খান, ডা: আইনুদ্দিন সড়ক, কালিশংকপুর, কুষ্টিয়া, আসামি হেরাল উদ্দিন ওরফে ড্যানি পিতা- আজম আলী, হাউজিং এ ব্লক ও আসামি আব্দুর রহিম শেখ, পিতা- মৃত মসলেম শেখ, ক্যানাল পাড়া, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া। প্রত্যেককে ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয় এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা, সেই সাথে ২০১এর ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ। অনাদায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। তিন আসামিকে শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৮ ধারায় মৃত্যুদন্ডাদেশ ও ১ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়।

যে হত্যাকান্ড পুরো কুষ্টিয়াবাসীকে আতঙ্ক করে তুলেছিল সেই ২০১১ সালের ২৩ মে। অপহরণের ১৩৪ দিন পর ভেড়ামারা থেকে উদ্ধার করা হয় কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ৮ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র মুতাসসিম বিন মাজেদ ওরফে হৃদয়ের (১৪) গলিত লাশ। ভেড়ামারা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ১০ মাইল নামক স্থানে মাটির নিচে পুঁতে রাখাবস্থায় নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। তৎকালীন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলামের নির্দেশে এবং কুষ্টিয়ার পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতে এ লাশ উদ্ধার করে। পরনের কালো রঙের জিন্স প্যান্ট এবং কালো রঙের বেল্ট দেখে নিহতের মা তাসলিমা খাতুন তার একমাত্র ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ লাশের গলিত অংশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ মে সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার মোল্লা তেঘরিয়া পূর্বপাড়া এলাকা থেকে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ৮ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র মুতাসসিম বিন মাজেদ ওরফে হৃদয়কে (১৪) সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের চার দিন পর অপহরণকারীরা হৃদয়ের মা তাসলিমা খাতুনের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ হিসাবে ১২ লাখ টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে বহু দেন-দরবার শেষে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহরণকারীরা হৃদয়কে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়।

অপহরণকারীদের কথামত ওই বছর ২ জুন গোপনে নির্দিষ্ট স্থানে ২ লাখ টাকা পৌঁছে দেয় হৃদয়ের মা তাসলিমা খাতুন। এতেও মন গলেনি সন্ত্রাসীদের। কথামত অপহরণকারীরা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি। এরপর হৃদয়ের মা বাদি হয়ে কুষ্টিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০’র ৭/৮ ধারা আইনে মামলা করে। যার নং ৪২ তাং ৩১/০৫/২০১১। সে সময় হৃদয়কে উদ্ধারে মরিয়া হয়ে এ পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠান।

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়া হাউজিং এলাকা থেকে আজব আলীর ছেলে অপহরণকারী হেলাল উদ্দীন ওরফে ড্যানীকে (২২) গ্রেফতার করে। আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হৃদয়কে অপহরণ করার কথা অপকটে স্বীকার করে জানায়, ভেড়ামারার ১০ মাইল এলাকার মসলেম শেখের ছেলে আব্দুর রহিম ওরফে ইপিআর’র মাধ্যমে অপহৃত হৃদয়কে হত্যা করে ভেড়ামারা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ১০ মাইল নামক স্থানে ফখরুলের ইটভাটার পাশে মিজানুর রহমানের জমিতে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার ভোর ৪টা থেকে হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে অভিযান শুরু করে কুষ্টিয়া পুলিশ। এসময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার সি এ হালিম, কুষ্টিয়া মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার সরোয়ার জাহান, ভেড়ামারা থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ আজম খাঁন, সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

মামলায় সরকারি কুশলী ছিলেন অ্যাড. আকরাম হোসেন দুলাল ও আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. সুব্রত চক্রবর্তী, অ্যাড. মীর আরশেদ আলী ও অ্যাড. আমিরুল ইসলাম।


আরো সংবাদ



premium cement