২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেশবপুরে সরকারদলীয় নেতাদের অবৈধ পশুহাট

প্রতীকি ছবি - সংগৃহীত

কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া বাজারের পাশে একটি বাগানে অবৈধ পশুহাট বাসিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের এই কর্মকান্ডে নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। ফলে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মশিয়ার রহমান দফাদার, আব্দুর রশিদ, আব্দুল আলীম ওরফে কিনু, মোজাহার হোসেন, খলিলুর রহমানসহ কতিপয় নেতাকর্মী সাতবাড়িয়া বাজারের পাশে একটি বাগানের ভেতর একটি পশুহাট গড়ে তোলে।

সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সামছুদ্দীন দফাদার অবৈধ এই পশুহাটের উদ্বোধন করেন। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।

এ হাটে আশপাশের গোবিন্দপুর, বাঁশবাড়িয়া, রঘুরামপুর, তালার জাতপুর, মনিরামপুরের শয়লা, চালুয়াহাটি, বরনডালিসহ ৩০/৪০ গ্রামের মানুষ গরু, ছাগল বিক্রি করতে আসেন। প্রতি হাটের দিন প্রায় ১০০টি গরু ও অর্ধশতাধিক ছাগল কেনা বেচা হয়ে থাকে এখানে।

ফলে প্রতি হাটের দিন ভূয়া পাসের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। যা আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতার মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল এর হাট/বাজার ব্যবস্থাপনা ২২৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নতুন হাট/বাজার স্থাপন করতে হলে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত পশুহাট স্থাপন করা যাবে না। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন মিললে হাটটি ইজারা দেয়ার পর এর কার্যক্রম চালাতে হবে।

কিন্তু এসবের কোন তোয়াক্কা না করেই বিগত ৮ মাস ধরে অবৈধভাবে চলছে এই পশুহাট। ফলে বছরে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গত শনিবার সাতবাড়িয়া পশুহাটে আসা গোবিন্দপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জয়নাল সরদার জানান, এই হাটে বিক্রি হওয়া প্রতিটি গরুর জন্য ২০০ টাকা এবং প্রতিটি ছাগলের জন্য ৫০ থেকে ৮০ টাকা পাস খরচ দিতে হয়। তারপরও এখানে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। অন্যের বাড়ি থেকে পার্শ্ব সংযোগ নিয়ে কন্ট্রোল রুমে একটি বাল্ব জ্বালানো হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও মেহেরপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, জেনারেটরের ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ চলে গেলে হাটে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। তখন এ বাজারে আসা শত শত মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যোগাযোগ, পয়নিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

এ ব্যাপারে নিজেকে পশুহাটের মালিক দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা মশিয়ার রহমান দফাদার বলেন, আশপাশে আর কোন পশুহাট না থাকায় উপজেলা নির্বাহি অফিসারের (ইউএনও) মৌখিক অনুমতি নিয়ে দেড়মাস আগে এখানে হাটটি বসানো হয়েছে। ওই হাটের নিজস্ব ২১ শতক সম্পত্তি ছাড়াও আরও দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তার ওপর সবেমাত্র হাটটি স্থাপন করা হয়েছে। এখনও নিজস্ব বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে হাটুরেদের সুবিধার্তে হাটে একটি মসজিদ, ২ চান্নি, বাথরুম ও অগভীর নলকুপ বসানো হয়েছে।

সাতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন দফাদার জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতিতে এই হাট উদ্বোধন করা হয়েছে। সকল কাগজপত্র অনুমোদনের জন্য দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের নামে ওই হাটের জন্যে ২১ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement