২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সেই ভণ্ড পীরের আস্তানায় সীলগালা

সেই ভণ্ড পীরের আস্তানায় সীলগালা - সংগৃহীত

ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে কথিত সেই ভণ্ড পীরের আস্তানায় অবশেষে সীলগালা করা হয়েছে। রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ শাহনাজ বেগম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাবিল হোসেন এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনে।

দীর্ঘদিন ধরে চুকনগর হাইস্কুল রোডের একটি সারের দোকানে আস্তানা গড়ে সহজ সরল মহিলা রোগী জড়ো করে বাত ও কোমরে ব্যথ্য, চর্মরোগ, পিত্তথলি পাথর, গ্যাস্টিক, জন্ডিস,অর্শ্ব,এলার্জি, জিনের আছর, সাপে কাটাসহ চিকিৎসার প্রতারণা করে আসছিলেন। এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েও তিনি রোগী দেখছিলেন।

খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার চুকনগরে কথিত পীর বাবার নাম আঃ লতিফ (৩৫)। রো¯Íমপুর গ্রামের মোকতার মোড়লের ছেলে। চুকনগর হাইস্কুল রোডের একটি ঘরে তার আস্তানায় প্রতিদিন শত শত ভক্ত রোগী পানি, তেল, কলার মোচা পড়াসহ নানা তদবীর নিতে আসে পীর বাবার সান্নিধ্যে।

সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা এবং বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। টেবিলের উপর থাকে পানি তেল ও দুধের বোতল, কলার মোচা, মাটি মাদুলীসহ নানা তদবীরের সামগ্রী। তার আস্তানায় ৪টি সাইন বোর্ড ছিল। যার একটিতে লেখা ছিল শিক্ষাগত যোগ্যতা, একটিতে রোগের চিকিৎসা ফি। আরেকটি সাইন বোর্ডে লেখা- আল্লাহর রহমত চাই, আপনাদের সহযোগিতা চাই, ২০১৯ সালে হজ্ব করতে চাই।

এ সব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সাইন বোর্ডগুলো সরিয়ে ফেলেন আস্তানা সাময়িক বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পর আবারও এ ব্যবসা শুরু করেন। তার চিকিৎসার নামে প্রতারণার বিষয়ে রো¯Íমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তি মণ্ডলের সাথে তিনি কয়েকমাস আগে মেরুদন্ডের হাড়ের ব্যথা নিয়ে হুজুরের কাছে গিয়েছিলেন বলে জানান; তবে মাসাধিককাল যাবৎ তেল-পানি ব্যবহার করে সুস্থ হতে না পেরে তিনি বর্তমানে ভারতের ডাক্তার দেখাচ্ছেন বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুকনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক বলেন স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অনেক রোগীর ভিড় দেখে পায়ের ব্যথার জন্যে আমিও গিয়েছিলাম, কিন্তু ১৫দিন তেল-পানি ব্যবহারে কোন ফল না পেয়ে অবশেষে অন্য ডাক্তার দেখাচ্ছি। ভণ্ড ফকিরের অপচিকিৎসা বিষয়ে দৈনিক নয়াদিগন্তসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ শাহনাজ বেগম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাবিল হোসেন তার আস্তানায় অভিযান চালান। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিল হোসেন বলেন; বিকেলে আমরা ওই ব্যক্তির ঘরে গিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছি। সোমবার তার বৈধ কাগজপ্রত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছি।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ শাহনাজ বেগম বলেন, আজ রোববার বিকেলে আমরা তার ঘরে সীলগাল করে দিয়ে এসেছি।

আরো পড়ুন : ‘টাকার বিনিময়ে যে কেউ সহজে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে’
মনির হোসেন
সরকার পরিবহন সেক্টরকে এখনো শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেনি। কিন্তু এখানে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ আছে। আজকে পরিবহন সেক্টরে যে সমস্যা বিরাজ করছে এর দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের দাবিকে আমি যৌক্তিক মনে করি। আর নিরাপদ সড়ক হলে আমাদের জন্যও ভালো হবে। তবে দুঃখের বিষয়, বেশির ভাগ মানুষই সচেতন না। ওভার ব্রিজ আছে, কিন্তু কেউ ব্যবহার করছেন না। হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছেন। হাইওয়েতে রাস্তার পাশে বসছে হাটবাজার। যখন দুর্ঘটনা ঘটছে তখন ড্রাইভারের দোষ দেখছি, মালিকের দোষ দেখছি। নিরাপদ সড়ক করতে হলে চালক-হেলপারদের শুধু দোষারোপ করলে চলবে না, সচেতন হতে হবে সব শ্রেণীর মানুষকে।

ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল বাস সার্ভিস ব্যবসায় সুনাম অর্জনকারী শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী সুভেংকর ঘোষ রাকেশ গত সপ্তাহে নয়া দিগন্তকে এ কথা বলেন। বর্তমানে তার ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে প্রায় ৪৫০ এসি/নন এসি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটও রয়েছে।


সড়ক-মহসড়কে হ-য-ব-ল অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে করণীয় হচ্ছে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এখানে কত রকমের ভেহিক্যাল চলে। বিশেষ করে যারা যাত্রী তাদের সবার সাথে কথা বলতে হবে। যারা হেঁটে যাচ্ছেন, প্রক্যেককে সচেতন হতে হবে। একটা গাড়িতে অনেক যাত্রী থাকে। একেকজনের একেক মত। নিরাপদে চলতে গেলে সময়ের হিসাব করা যাবে না। এই জিনিসটা সবাইকে ভাবতে হবে। কারণ একটা ড্রাইভারেরও কিন্তু পরিবার আছে। সে-ও কিন্তু চায় না দুর্ঘটনা ঘটুক। কারণ সে-ও তো দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। রাকেশ বলেন, হাইওয়েতে একটা গাড়ি দুই লেন দিয়ে চলে। তার মধ্যে বাজারের সাইটে রিকশা-ভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়। এগুলো কেউ চিন্তাও করেন না। কিন্তু যখনই এক্সিডেন্ট ঘটে তখনই এসব ইস্যু চলে আসে। তখন প্রতিবাদের ভাষা হয় ভাঙচুর, আগুন, রাস্তা অবরোধ। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু এখনো চলছি ব্রিটিশ আইনে। ট্রাফিক আইনে কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি। গাড়ির চালকদের লাইসেন্স প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাড়ির চালকদের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের তদন্ত (কোয়ারি) হচ্ছে না। এখন জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা নিয়ে মারামারি হচ্ছে। আমরা গাড়ির মালিকেরা পড়েছি তাদের মাঝখানে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাস কোম্পানিগুলোর এ পর্যন্ত কোনো বিধিমালা নেই। কোনো গাইড লাইন দেয়া হয়নি। সবাইকে বিধির আওতায় আনতে হবে। ড্রাইভার রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটাবে আর তার জরিমানা আমি বাড়ি বসে দেবো, এটাতো হতে পারে না। শুধু আমি না, এর সাথে ট্রাকের মালিকেরা সম্পৃক্ত। বেবি টেক্সির মালিক সম্পৃক্ত, একটা মোটরসাইকেল যিনি চালাচ্ছেন তিনিও সম্পৃক্ত। সবাইকে সচেতন হতে হবে। একটা হাইওয়ের পাশে যিনি দোকান বসান তাকেও সচেতন হতে হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে পরিবহন সেক্টরে কোনো মাফিয়া নাই। এখানে আছে শ্রমিক। আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাজাহান খান সাহেব, বিএনপি এলে নেতৃত্ব দিবেন শিমুল বিশ্বাস সাহেব। কোনো পার্থক্য নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমার শ্যামলী এনআর ট্রাভলসের যত গাড়ি আছে একটা গাড়িরও কাগজপত্র ফেল নাই।

শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের মালিক আরো বলেন, রাস্তায় কিন্তু দুর্ঘটনা হঠাৎ করে ঘটে। দুর্ঘটনা কিন্তু কেউ করে না। আমরা যারা মালিক, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে গাড়ি নামাই। টার্গেট থাকে মুনাফা উঠানো। এই মুনাফা পেতে হলে দুই রকমের ব্যবসায়ী হতে হয়। এক সঠিক পথে অর্জন। আরেক ভেজাল পথে। পরিবহন ব্যবসায় ভেজালভাবে মুনাফা অর্জনের সুযোগ নাই। তিনি বলেন, একটা ড্রাইভারের সাথে থাকেন হেলপার। কিন্তু ওই হেলপারকে আমরা নিয়োগ দেই না। নিয়োগ দেন ড্রাইভার। কারণ একটা ড্রাইভারের সাথে যদি একটা হেলপারের আন্ডারস্ট্যান্ডিং না থাকে, তাহলে গাড়ি চালানো কিন্তু দুষ্কর হয়ে যায়।

ড্রাইভার গাড়ির ডান সাইডে খেয়াল রাখেন আর বাম সাইডে খেয়াল রাখেন হেলপার। গাড়ি জোরে যাবে না আস্তে যাবে সেটির ইন্সট্রাকশন দেন হেলপার। আর হেলপারের শিক্ষাগত কোনো যোগ্যতা নেই। দেখা গেলো ঘর থেকে পালিয়ে এসে ছোট একটি ছেলে ড্রাইভারে সাথে ওস্তাদ ওস্তাদ বলতে বলতে হেলপারি করতে করতে সেই-ই একদিন বললÑ ওস্তাদ, আপনিতো টায়ার্ড হয়ে গেছেন। এখন আপনি ঘুমান। আমি গাড়ি চালাচ্ছি। এরকম করতে করতে সে-ই ড্রাইভার হয়ে যায়। এভাবে গাড়ি চালাতে চালাতে ওই হেলপার অভিজ্ঞ হয়ে যান। কিন্তু লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সঠিক নিয়ম নাই। পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পাওয়ার কথা। কিন্তু সেরকম হচ্ছে না। ইন্টারভিউ দিয়ে লাইসেন্স পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। দেখা যাচ্ছে টাকার বিনিময়ে যে কেউ লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, লাইসেন্সেরও কিন্তু একটা মাপকাঠি আছে।

আমরা যারা বড় গাড়ি চালাচ্ছি, তারা পিএসভি দেখে ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে থাকি। পিএসভি হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস ভেহিকেল। আগে পিএসভি দেয়া হতো একটা ড্রাইভার কয়টা পরিবহনের গাড়ি চালিয়েছেন। হেভি লাইসেন্স যদি তার থাকে, যদি তিনি চার-পাঁচ বছর গাড়ি চালিয়ে থাকেন তাহলে তার পিএসভি পাওয়ার যোগ্যতা থাকে। পিএসভি দেখে আমরা ড্রাইভার নিয়োগ দেই। এখন ১৫ হাজার ভেহিক্যালের বিপরীতে গাড়ির চালক আছেন ৮ হাজার। আমরা একটা ড্রাইভারকে শাস্তি দিতে পারি না। একদিনের জন্য সাসপেন্ড করব সেই সুযোগও নেই। যে কারণে এখন ড্রাইভারকে রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের বেতন, খোরাকিসহ ড্রাইভারদের জামাই আদর করে রাখা লাগে।

তারপরে একটা চালকের অসাবধানতা বা দুর্ঘটনা অবশ্যই সবার কান্না। রাকেশ আরো বলেন, দেখেন ৮০ লাখ টাকা খরচ করে একটা গাড়ি নামাই। আমরা গাড়ির নিরাপত্তার কথা ভেবেই নামাই। গাড়িটার যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, রাস্তায় কারো যাতে ক্ষতি না করে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হয়। ক্ষতি হলে ড্রাইভার-হেলপারদের কিছু যায় আসে না। যা যায় মালিকদের ওপর দিয়ে যায়। এরপর যদি দুর্ঘটনার জন্য লাখ লাখ টাকা জরিমানা, মালিকের জেল, মালিককে রিমান্ডে নেয়ার সিস্টেম চালু হয় তাহলে আমরা কিভাবে এখানে ইনভেস্ট করব?


আরো সংবাদ



premium cement