২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘মুক্তিযুদ্ধ করেও পথে-প্রান্তরে হাত পাত্তে হচ্ছে’

হাটবাজারসহ পথে-প্রান্তরেও সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দীন - ছবি: নয়া দিগন্ত

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আজও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি ৭৬ বছরের বয়োবৃদ্ধ নিজাম উদ্দীনের! রোগ ও বয়সের ভারে নূজ্য নিজাম উদ্দীন। নিদারুণ কষ্টের জীবনযাপন করছেন। তাকে দেখার মতো কেউ নেই। তার আক্ষেপ, মুক্তিযুদ্ধ করেও পথে-প্রান্তরে হাত পাত্তে হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রায় ১৭ বছর আগে (২০০১ সাল) বাইসাইকেল দুর্ঘটনায় দু’পায়ের শক্তি হারিয়ে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন তিনি। দুই হাতেও শক্তি নেই তার। অন্যের সাহায্যে খাবার খেতে হয় তাকে। নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের পাশে লক্ষীপাশা এলাকায় আল মারকাজুল মসজিদের সামনে সরকারি জায়গায় ছোট্ট একটি টিনের ঘরে একাকী বসবাস করেন নিজাম উদ্দীন। এ পরিস্থিতিতে শুভাকাঙ্খী, জনপ্রতিনিধি ও পরিচিতজনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সহযোগিতায় কোনো রকম জীবনযাপন করছেন।

মাঝে-মধ্যে হাটবাজারসহ পথে-প্রান্তরেও সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান তিনি। শ্রমের বিনিময়ে নিজামের হুইলচেয়ার ঠেঁলে চলাফেরায় সহযোগিতা করেন লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়ার ইনজাহের শেখ(৪৮)। মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দীন আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি যেমন পায়নি, তেমনি প্রতিবন্ধী ভাতাও পান না তিনি।

অপরদিকে, প্রায় ৪২ বছর আগে ধর্মান্তরিত হন নিজাম উদ্দীন।‘নির্মল বিশ্বাস’থেকে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান ‘নিজাম উদ্দীন’। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই মুসলমান হওয়ার বাসনা ছিলো তার। তাই যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্রেও‘নিজাম উদ্দীন’নাম দিয়েছেন তিনি। তার সহযোদ্ধারাও যুদ্ধকালীন সময় এ নামটি (নিজাম) জেনে যান।

আতাউল গনী ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদ

 

নিজাম আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার ভাই বলেও জানা গেছে। এ প্রতিবেদকের কাছে রণাঙ্গনের যোদ্ধা নিজাম উদ্দীন তার জীবনের এই করুণকাহিনী তুলে ধরেন।

আক্ষেপ প্রকাশ করে নিজাম উদ্দীন বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। সবশেষে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাইয়ের সময়ও আবেদন করেছি। তবে এতোদিনেও তার ভালো-মন্দ কিছু জানতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর নিবেদন, আর দেরি না করে দ্রুতই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। সঠিক ভাবে যাচাই-বাচাই হলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবো বলে বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে সবার সুদৃষ্টি কামনা করছি। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার ভাতাটা বড় করে দেখছি না, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি’দেখে যেতে চাই।

জানা যায়, নিজাম উদ্দীন ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নড়াইলে ফিরে আসেন। ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে কমান্ডার তসলিমুর রহমান এবং গোপালগঞ্জের হেমায়েত বাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ নয় মাস নড়াইল, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকহানাদারবাহিনী ও রাজাকারদের প্রতিহত করার জন্য সরাসরি যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ শেষে তিনি অস্ত্রও জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক কর্ণেল আতাউল গণী ওসমানী স্বাক্ষরিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র’ও পেয়েছেন তিনি (নিজাম)।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের কোটচাদপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন রেজভী বলেন, ভারতে প্রশিক্ষণের সময় অনেকবার নিজাম উদ্দীনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তখন তাকে নির্মল নামে ডাকতাম। তিনিও (নিজাম) প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু, কী কারণে নিজামকে এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি, তা বুঝতে পারছি না।

মুক্তিযোদ্ধা রেজভীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, নিজাম উদ্দীন ভাই নতুন করে যে আবেদন করেছেন; তাতে যেন তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এটাই তার চাওয়া-পাওয়া।

নড়াইল সদরের খড়রিয়া মুক্তিবাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার তসলিমুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমার সঙ্গে নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন নিজাম উদ্দিন। স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়াটা দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার (নিজাম) স্বীকৃতি চাই।

নিজাম উদ্দীনের বাড়ি নড়াইল সদরের গোবরা অঞ্চলে হলেও স্বাধীনতার পর লোহাগড়ার লক্ষীপাশায় বসবাস শুরু করেন তিনি। গোবরা পার্বতী বিদ্যাপীঠে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পড়ালেখার বিরতির পর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন। মুসলিম হওয়ার পর আরবি পড়ালেখা করে ১৯৭৯ সালে ক্বারী হন নিজাম উদ্দীন। নওমুসলিম হিসেবে প্রায় ১০ বছর যাবত ওয়াজ-মাহফিল করে নিজের টাকায় ৩২ শতক জমি কিনে ১৯৯১ সালের দিকে লোহাগড়ার মাটিয়াডাঙ্গায় কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর শারীরিক অক্ষমতায় মাদরাসা পরিচালনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রায় ১২ বছর আগে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বিনা টাকায় আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থাকে দিয়ে দেন। এ সংস্থাটি এখন মাদরাসা পরিচালনা করছে। নিজাম তার তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং প্রায় ১৬ আগে তার একমাত্র ছেলে সন্তান বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি। প্রায় দেড় বছর আগে স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এখন নিঃসঙ্গ জীবন তার। সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্টসহ পেটের সমস্যায় ভূগছেন তিনি।

 

আরো পড়ুন: ১৯৭৩ সালে জন্ম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা!

সৈয়দ রোকনুজ্জামান রোকন, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) ২৫ জুলাই ২০১৮

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ইউসুফ আলী নামে এক ব্যাক্তি ১৯৭৩ সালে জন্ম নিলেও তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নের আন্দোলগ্রাম (সাকোপাড়া) গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। আন্দোগ্রাম দারুল উলুম ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ি ক্বারি শিক্ষক ইউসুফ আলীর দাখিল পাশের সনদ পত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৪ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সাল।

তার সনদ পত্র থেকে জানা যায়, তিনি বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৭ সালে দাখিল পাশ করেছেন। যার রেজিঃ নম্বর-১২৫৬৮, রোল নম্বর-২৩৮৫৬ এবং শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৫-৮৬। এরপর তিনি একই মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৯ সালে আলিম পাশ করেন। এসব সনদ পত্র দিয়ে তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৯১ সালে আন্দোলগ্রাম দারুল উলুম ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। যার ইনডেক্স নং-৩৮৪৪৮৫ এবং ব্যাংক হিসাব নং-৬৩৯১/৩৪।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেতন ভোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে ইস্তফা দেন। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে মাদ্রাসায় খোঁজ নিতে গেলে মাদ্রাসার সুপার আলতাব হোসেন প্রশিক্ষণের জন্য মাদ্রাসার বাইরে থাকায় কথা হয় সহ-সুপার এনামুল হকের সাথে। তিনি জানান মাদ্রাসার এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক ইউসুফ আলী চাকুরি ইস্তফা দিয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বিষয়টি শুনেছেন কিন্তু চাকুরি ইস্তফা দিয়েছেন এটা তার জানা নাই।

মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী জানান, সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং তার গেজেট রয়েছে। এছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল সুবিধাদীও ভোগ করে আসছেন এবং তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকুরি পেয়েছে। কাগজপত্র অন্য একজন ঠিকঠাক করেছিল তার দ্বারাই ওই জন্ম তারিখের ভুলটি হয়েছে।

উল্লেখ্য, একই মাদ্রাসার নৈশ প্রহরীত আকরাম হোসেনও একজন মুক্তিযোদ্ধা। বেতন তালিকায় তাঁরও জন্ম তারিখ রয়েছে ১ মার্চ ১৯৭৫ সাল। তিনিও সম্প্রতি চাকুরি ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানান মাদ্রাসার সহ-সুপার ইনামুল হক।


আরো সংবাদ



premium cement
গ্যাটকো মামলা : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুনানি ২৫ জুন বুড়িচংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা কক্সবাজারে ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

সকল