২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আলেমদের ঐক্য চাই

-

মহান আল্লাহ, প্রিয় নবী সা:, পবিত্র কুরআন ও হাদিসসহ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে কোনো মুসলমানের মাঝে মতভিন্নতা নেই। মতভিন্নতা গুরুত্বহীন কিছু বিষয় নিয়ে। মতভিন্নতা থাকতেই পারে, যা দোষের কিছু নয়। অথচ আমাদের ওলামায়ে কেরামদের কেউ কেউ এগুলোকে বড় করে দেখেন, তথা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন। আমি এখানে কোনো ওলামা-মাশায়েখের নাম উল্লেখ করব না। আমার কাছে আলেমরা সমাজ ও দেশের সম্মানীত এবং শীর্ষ পর্যায়ের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত।
অনলাইনসহ নানা মাধ্যম ও ওয়াজ অনুষ্ঠানে দেখতে পাচ্ছি, কোনো কোনো ওলামায়ে কেরাম তাদের ওয়াজে গালিগালাজ কিংবা গিবত করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। একজন আরেকজনকে কাফের, মুশরেক ফতোয়া দিতেও দ্বিধা করছেন না। কোনো কোনো ওয়ায়েজ তাদের ওয়াজে শব্দচয়নে ভুল করে যাচ্ছেন যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। গালিগালাজ, গিবত, শব্দচয়নে ভুলের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদিস কী বলে, তা কি তাঁরা কম জানেন? তারাই তো জাতিকে পথনির্দেশ করে থাকেন। তাহলে এসব অনাকাক্সিক্ষত বিষয় নিয়ে তাঁরা কেমনে বুঝেও না বোঝার ভান ধরেন?
প্রত্যেক ওলামায়ে কেরামের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলব, আপনারা গালিগালাজ, গিবত পরিহার করুন। আরেকজনকে কাফের, মুশরেক ফতোয়া দেয়ার কোনোই সুযোগ নেই। অনুরূপভাবে ইসলামের নবী, সাহাবি কিংবা সর্বজনস্বীকৃত ফোকাহা, বুজুুর্গ ব্যক্তিদের ব্যাপারে শব্দচয়ন বলুন আর বিশেষণে কোনোভাবেই খাটো করা কিংবা সম্মানহানির কোনোই সুযোগ নেই। অবশ্যই সাবধান-সতর্ক হতেই হবে।
ইসলামের মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, গিবত, চোগলখুরি, জুলুম, নির্যাতন, সামাজিক কুসংস্কার, ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার, অন্ধকার গলিতে ধাবিত হওয়া তরুণ- যুবকদের চরিত্র গঠন, সন্ত্রাস, খুন, মাদকসহ অনেক বিষয় আমাদের মাঝে বিদ্যমান যা নিয়ে সরাসরি কুরআন ও হাদিস থেকে আলোচনা করতে গেলে সময় শেষ হয়ে যাবে। আলোচনার বিষয় থেকে যাবে।
সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বিশ্বের অস্থিরতা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হলে ওলামায়ে কেরামদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ জন্য পারস্পরিক হিংসা, দলাদলি বাদ দিয়ে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ, সৌন্দর্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমাদের বিভক্তি আর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখে ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী শক্তি খুশিতে গদগদ হয়।
ফলে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে তারা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে দিকভ্রান্ত করতে উঠেপড়ে লেগে যায়। এটা নিয়ে আমাদের কবে বোধোদয় হবে আল্লাহই জানেন।
সময় এসেছে, ছোটখাটো ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে ওঠে ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তবেই মুসলিম জাতি সঠিক পথটি খুঁজে পাবে।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ছোটখাটো এসব বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব, বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কেন এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে তার মূলে পৌঁছা দরকার। কাউকে না কাউকে এসব দ্বন্দ্ব, বিতর্ক নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু কে নেবে এ দায়িত্ব? আমি মনে করি, সর্বজনস্বীকৃত ও বিজ্ঞ কোনো আলেমকে এ দায়িত্ব নেয়া উচিত। যেখানে চাইলে রাষ্ট্রও এতে সম্পৃক্ত হতে পারে। যুক্ত হতে পারে প্রশাসনও। কারণ, আলেমদের মাঝে যদি এসব বিতর্ক জিইয়ে থাকে, তাহলে সাধারণ মুসলমানদের কী হবে? কার কাছে তারা যাবে সঠিক পথ পাওয়ার জন্য। কুরআন-হাদিস যেখানে বিদ্যমান, সেখানে কোনো ধরনের সংশয়, বিতর্ক থাকা উচিত নয়। প্রত্যেক আলেম যদি তাঁর দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে মানুষও এতে খুশি হবে। মানুষ পাবে সঠিক পথনির্দেশ। আলেমদের ঐক্য এখন সময়ের দাবি। মুসলমানরা এটাই চায়।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement