২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সবর অবলম্বনে আসে সাফল্য Ñ মাওলানা তারিক জামিল

-

বিশ্বখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা তারিক জামিল একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেনÑ মানব জিন্দেগি বা জীবনচক্র একই সরলরেখায় গতিশীল নয়। জীবন-জিন্দেগি জিকজ্যাক বা আঁকা-বাঁকা পথের নাম। মানব জীবন নামক এই উঁচু-নিচু মহাসড়ক বারবার হোঁচট খায়। থেমে যায়। বাধার সম্মুখীন হয়। সব নবী-রাসূলই তাঁদের মহান দাওয়াতি মিশনে লাখোবার বাধা পেয়েছেন। তারপরও তাঁরা চরম প্রতিকূল পাহাড়সম দেয়াল পাড়ি দিয়েছেন। জীবন দিয়েছেন। রক্ত দিয়েছেন। জেল খেটেছেন। দেশ ছেড়ে হিজরত করেছেন। তবুও তাঁরা ‘সবর’ বা ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অটল থেকেছেন।
তায়েফে প্রতিশোধ নেননি
আমাদের নবী পাক সা: তায়েফের ঘটনায় আল্লাহর হুকুম পেয়েও তায়েফবাসীকে ‘পাহাড়চাপা’ দিয়ে হত্যার হুকুম অনুমোদন করেননি। নুহ আ: সাড়ে ৯০০ বছর বিরামহীন দাওয়াতে হকের কাজে সামিল ছিলেন। মুসা আ: ১২ বছর ছাগল-মেষের রাখাল জিন্দেগি অতিবাহিত করেন। আইউব আ: কত কঠিন অসুখেও আল্লাহর জিকির ভুলে যাননি। আমাদের যুবসমাজকেও ওই ধরনের ‘সবর’ অবলম্বন করতে হবে এবং দাওয়াতে হক প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
'জওঝ' ঈড়হভবৎবহপব ঞড়ৎড়হঃড়
মাওলানা তারিক জামিল ‘জবারারহম ঞযব ওংষধসরপ ঝঢ়রৎরঃ (জওঝ)’ তিন দিনব্যাপী টরেন্টো সম্মেলনে বিশেষ মেহমান হিসেবে যোগদান করেন। গত ২০ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় বক্তারা বক্তব্য রাখেন। টরন্টোর মেট্রো হলে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে ৩০ হাজার ডেলিগেট প্রতিটি অধিবেশনে হাজির ছিলেন। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে কানাডার টরন্টো মহানগরে ‘জবারারহম ঞযব ওংষধসরপ ঝঢ়রৎরঃ (জওঝ)’ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। টরন্টোর একঝাঁক তরুণের উদ্যোগে অসাধারণ ব্যতিক্রম এই ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন। ওই সম্মেলনে মুসলিম তরুণীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।
কড়া নিরাপত্তায় এই সাক্ষাৎকার
২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় এই সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করা হয়। টরন্টো ডাউনটাউনের নামকরা পাঁচ তারকা হোটেলের ৩২ তলায় বিশেষ নিরাপত্তায় ভিআইপি সুইটে আমাকে ডেকে নেয়া হয়। যেখানে মাওলানা তারিক জামিল একদল নিরাপত্তা সঙ্গীসহ বেষ্টিত ছিলেন। মাওলানা তারিক জামিলের ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করতে আমাকে সহযোগিতা করেন তাঁরই দু’জন ছাত্র ও সাগরেদ শেখ নাবিল ও শেখ মুনিব। ঢাকা থেকে এই সাক্ষাৎকারটি ধারণ করার বিশেষ তাগিদ পাঠান ঢাকা সাংবাদিক ফোরামের নেতা আমার প্রিয়তম তরুণ সাংবাদিক সাঈয়েদ রাফে সামনান এবং সিনিয়র সাংবাদিক হারুন ইবনে শাহাদাত। সরাসরি এবং মুখোমুখি মাওলানা তারিক জামিলের ওই সাক্ষাৎকারটি নিতে দোভাষী হিসেবে আমাকে সহযোগিতা করেন তরুণ বক্তা শেখ নাবিল।
গিবত-কুধারণা ছাড়তে হবে
আমি মাওলানা তারিক জামিলকে প্রথম প্রশ্ন করিÑ আমরা যারা কানাডা-আমেরিকায় বসবাস করি, এখানে দ্বীনে হকের পথে চলতে গেলে সব কিছুই নেগেটিভ? এ ক্ষেত্রে আমাদের তরুণ সমাজের জন্য আপনার পয়গাম কী? জবাবে মাওলানা তারিক জামিল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে শুরু করেনÑ আল্লাহর হামদ ও রাসূলে পাক সা:-এর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। তারপর তিনি আল কুরআনের সূরা হুজরাতের ১২ নং আয়াত তিলাওয়াত করেন এবং সেখান থেকে মানব জীবনের চরম ক্ষতিকর তিনটি বদভ্যাস পরিত্যাগ করার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, আল্লাহ সুবহানু তায়ালা এই আয়াতে ঈমানদারদের বলেছেনÑ ‘তোমরা গিবত করো না। কুধারনা করো না। আর একে অন্যের প্রতি গোয়েন্দাগিরি করো না। তোমরা জানো গিবত কি? গিবত আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান। তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চলো।’
মহব্বত নিয়ে সন্তানের পাশে দাঁড়ান
মাওলানা তারিক জামিলের উদ্দেশে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলÑ আমরা দিবানিশি মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় পাই। এই সময়ে আমাদের সন্তানরা যারা কিশোর-কিশোরী তারা দৈনিক একটা লম্বা সময় টিভি, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস প্রভৃতি দেখে মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে ওই সব অল্প বয়সী সন্তানরা অনেক খারাপ দৃশ্য দেখছে। তা থেকে আমরা যারা অভিভাবক তারা কিভাবে আমাদের সন্তানদের হেফাজত রাখতে পারি?
জবাবে মাওলানা তারিক জামিল বলেন, এ জন্য সন্তানকে মহব্বত বা ভালোবাসা দিয়ে বুকে টেনে নিতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, ওই সব খারাপ জিনিসের ভয়াবহ পরিণামের কথা। এ ক্ষেত্রে বাবা-মাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে। যেসব বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করেনÑ তাদের সন্তানরা বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে মাকে প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। সন্তানের প্রতি নজর দিতে হবে। আর যে সব বাবা-মা সন্তানের প্রতি খেয়াল না রেখে দু’জনেই চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন; তাদের সন্তানদের ওই ধরনের একতরফা দোষ দিয়ে বাবা-মা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।
সফলতার চারটি ছবক
মাওলানা তারিক জামিল এই পর্যায়ে বলেন, আমাদের মানব জীবনে দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তির জন্য মাত্র চারটি কাজ করতে সক্ষম হলেই জিন্দেগি সফল হবে। কামিয়াব হবে। পূর্ণতা লাভ করবে।
প্রথমত. আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কারো সাথে প্রতারণা বা ধোঁকা দেবো না। দ্বিতীয়ত. সদা সর্বদা সব সুখ বা দুঃখ যাই আসুক না কেন, আমরা সত্য কথা বলব এবং বলতেই থাকব ইনশা আল্লাহ। মিথ্যা চিরতরে ছেড়ে দেবো। তৃতীয়ত. আখলাক বা চরিত্র সুন্দর করব। স্ত্রীর সাথে, বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান, আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশী বন্ধুমহল, মুসলিম, গায়ের মুসলিম, সবার সাথে সুন্দর আচরণ করব। চতুর্থত. হালাল রুজি-রোজগারে সন্তুষ্ট থাকব। সব সময় সব প্রতিকূল অবস্থায় হারাম অর্জন থেকে বিরত থাকব।
মাফ করে দেবো-ক্ষমা চেয়ে নেবো
জীবনে চলতে ফিরতে, মানুষকে মাফ করে দেবো। ভুলের জন্য বা খারাপ আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবো।
রাসূল সা: রহমত হিসেবে প্রেরিত
মাওলানা তারিক জামিল আরো বলেন, আমাদের আল্লাহ তায়ালা জগতসমূহের রব। তিনি রাব্বুল আলামিন। আর আমাদের আখেরি নবী রাসূল পাক সা: রাহমাতুল্লিল আলামিন। জগতসমূহের জন্য রাসূল সা: রহমত হিসেবে প্রেরিত। তিনি শুধু মুসলমানদের নবী বা রাসূল নন। তিনি গায়ের মুসলিমসহ সব আলামিনের জন্য রহমত।
চাঁদ-সুরুজ, তারকারাজি আলো বিকিরণ করে
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চাঁদ-সুরুজ, সেতারা বা তারকারাজি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই রৌশন বা আলো বিকিরণ করছে সব মানুষকে। ঈমানদার-বেঈমান সবাই সেই আলোর পরশে আলোকিত। গাছপালা, তরুলতা, জীব-জন্তু, পশু-পাখি, নদী-সাগর, মহাসাগরের প্রতিটি রেণুতে রেণুুতে ওই আলোর মালা বিকিরণ ছড়াচ্ছে।
তেমনিভাবে রাসূলে পাক সা:-এর নবুয়তি নূর বা আলোর পরশে সাহাবারা আলোকিত, সেই আলোয় তাবেঈনরা আলোকিত। তাবেঈনদের আলোর পরশে তাবে-তাবেঈনরা আলোর পরশ পেয়েছেন। ‘বাললিগু আন্নি ওলাও আয়াহতিহি’ রাসূলে সা:-এর এই বাণী সাথে নিয়ে বিদায় হজের দিনে আরাফার ময়দান থেকে এক লাখ ১০ বা এক লাখ ২৪ হাজার সাহাবা হিন্দুস্তান, চীন, ইউরোপ ও আফ্রিকার জনপদে জনপদে পৌঁছে গেছেন। তাঁদের দাওয়াতের ফসল আজকের ওই সব এলাকার কোটি কোটি মুসলমান।
কানাডা-আমেরিকার মুসলমানের দায়িত্ব
আপনারা যারা এখন কানাডা বা আমেরিকায় বসবাস করছেন, আপনারাও সাচ্চা মুসলমান হয়ে যান। নবীওয়ালা আখলাক অনুসরণ করুন। গায়ের মুসলিমদের যেহেতু আপনারা নাগরিকত্ব নিয়েছেন, সুতরাং এদের আইন-কানুন মেনে চলুন। অফিস-আদালত, দৈনিক কাজকারবারে সত্য কথা বলুন। মিথ্যা পরিহার করুন। আপনার কথা, কাজ ও হৃদয়ে ভালোবাসা দিয়ে গায়ের মুসলিমের হৃদয় জয় করুন। সরকারের খাজনা বা ট্যাক্স সঠিকভাবে আদায় করুন। ব্যবসা বা তেজারতিকে হালাল তরিকায় পরিচালিত করুন। হারাম পরিত্যাগ করুন। আমি এসব এলাকায় আগত নয়া ছাত্র-যুবককে বলবÑ শুধু ইমিগ্রেশন, কাগজ বানাতে এখানকার মেয়েদের সাথে বিয়ের নামে নাটক করবে না। তাদের ধোঁকা দেবে না। প্রতারণা করবে না। এ কাজ হারাম, হারাম এবং হারাম।
ডাক্তার ওষুধ দেন রোগের বিরুদ্ধে
পরিশেষে বলতে চাই, একজন হাকিম বা ডাক্তার কার বিরুদ্ধে ওষুধ প্রয়োগ করেন? রোগের না রোগীর? ডাক্তার ওষুধ দেন কলেরা/ডায়রিয়া নামক রোগের বিরুদ্ধে। তবে কোনো রোগীর বিরুদ্ধে নয়। তেমনিভাবে যারা দাওয়াতে হকের কাজ করবেনÑ তাঁরা অন্তরের মহব্বত দিয়ে এই সমাজের মদখোর, জুয়াখোর, সুদখোর বনি আদমকে দাওয়াত দেবেন। আসুন আমরা চুরিকে ঘৃণা করি, চোরকে নয়। কুফরিকে প্রত্যাখান করি, কাফেরকে নয়। আমাদের কাজ দাওয়াত পৌঁছানো আর হিদায়াত দেবেন আল্লাহ পাক। আমরা সব সময়ে নবী মুহাম্মদ সা:কে মডেল হিসেবে অনুসরণ করব ইনশাআল্লাহ।
সাক্ষাৎকার : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা কুড়িগ্রামে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে আগুনে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে

সকল