২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পথশিশু ও শরিয়তের নির্দেশনা-২

-

পথশিশুদের অবস্থা : পথশিশুদের তিনটি অবস্থা হয়ে থাকে, যা জানা থাকা অত্যন্ত জরুরি। যথা :
মুক্ত-স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রসঙ্গ : এ ক্ষেত্রে তাকে মৌলিক ও বাহ্যিক বিবেচনায় মুক্ত-স্বাধীন বলে গণ্য করা হবে, ক্রীতদাস নয়। এমনটাই হজরত উমর রা: ও হজরত আলী রা: হতে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা এমন শিশুকে স্বাধীন শিশু বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন। কেননা মৌলিক বিবেচনায় সব আদম সন্তানই স্বাধীন বলে গণ্য। তা ছাড়া সব মানবই হজরত আদম আ: ও হজরত হাওয়া আ:-এর সন্তান। আর এঁরা দু’জন ছিলেন স্বাধীন মানুষ। স্বাধীন দম্পতি থেকে জন্ম নেয়া শিশুরাও স্বাধীনই হয়ে থাকে। দাসত্ব বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসাবে, (প্রথাটি ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই চলে আসছিল। এমন নয় যে, ইসলামই তা প্রবর্তন করেছে বা তার বৈধতাদান করেছে। ইসলাম বরং প্রারম্ভিক অবস্থায় পূর্বতন রীতির ধারাবাহিকতার আংশিক বহাল রেখে, পর্যায়ক্রমে এমন রীতি ও স্থায়ী বিধি-বিধানের গোড়াপত্তন করে দিয়েছে; যেন তা অদূরভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর বাস্তবে হয়েছেও তা-ই।) শরিয়সম্মত যুদ্ধজয়কেন্দ্রিক সাময়িক কারণে হয়ে থাকে। আর সেই কারণ হলো, ‘কুফর/কুফরী’, ‘বিদ্রোহ-রাষ্ট্রদ্রোহ’ ইত্যাদির অনুরূপ চরম পর্যায়ের সীমালঙ্ঘনÑ যা যুদ্ধের কারণ হয়েছে। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত দাসত্ব প্রমাণ করার তেমন কোনো সাময়িক দলিল পেশ করা না হবে ততক্ষণ পথশিশুটিকে স্বাধীন শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার বেলায় সাক্ষ্যদান যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীন মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধানাবলিই প্রয়োগযোগ্য হবে।
পথশিশুকে কুড়িয়ে নেয়া ব্যক্তি বা অন্য কেউ যদি দাবি করে যে, শিশুটি দাস তা হলে কোনো প্রমাণ ব্যতীত তার দাবি গ্রাহ্য হবে না। কেননা তার স্বাধীন হওয়াই মৌলিক ও বাহ্যিক বিবেচনায় প্রমাণিত, যা অপর কোনো দলিল ব্যতীত বাতিল করা যাবে না (বাদায়ে : খ-৫, পৃ-২৯০)।
ইসলাম ও কুফর প্রসঙ্গ : শিশুটিকে কোনো মুসলমান যদি মুসলমানদের কোনো শহরে পায় বা মুসলমানদের কোনো গ্রামাঞ্চলে পায়, তা হলে তাকে মুসলমান বলেই গণ্য করতে হবে। এমতাবস্থায় সে মারা গেলে তাকে গোসল দেয়া হবে, তার জানাজা পড়া হবে এবং তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা হবে। আর যদি শিশুটিকে কোনো জিম্মি কোনো গির্জা, প্যাগোডা (মন্দির) বা এমন কোনো গ্রামে পায় যেখানে কোনো মুসলমান বসবাস করে না, তা হলে বাহ্যিক অবস্থার বিবেচনায় তাকে ‘জিম্মি’ (অমুসলিম) শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে। যেমনটি কোনো মুসলিম ব্যক্তি শিশুটিকে গির্জায় বা প্যাগোডায় বা মন্দিরে বা কোনো এমন জনবসতি যেখানে কোনো মুসলমান বসবাস করে নাÑ সেখানে পায়, সে ক্ষেত্রেও তাকে অমুসলিম গণ্য করা হয়।
আর যদি তাকে কোনো জিম্মি ব্যক্তি মুসলমানদের কোনো শহরে পায় কিংবা মুসলমানদের জনবসতিপূর্ণ গ্রামে পায়, তা হলে সেক্ষেত্রেও শিশুটিকে মুসলিমরূপেই গণ্য করতে হবে। ‘লাকিত’ অধ্যায় : কিতাবুল-আসলে এমনটিই আলোচিত হয়েছে এবং সেখানে ‘স্থান’ এর বিবেচনা আমলে নেয়া হয়েছে (প্রাগুক্ত : পৃ-২৯১)।
বংশ-সূত্র প্রসঙ্গ : আর শিশুটির বংশ-সূত্র বা বংশপরম্পরা অবস্থা নির্ধারণ বিষয়টির সমাধান হলো, তাকে অজ্ঞাত বংশ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে হ্যাঁ, কোনো মানুষ যদি শিশুটির ‘সম্পর্ক’ তার সাথে রয়েছে মর্মে দাবি করে অথবা তাকে মুক্ত করার দাবি করে, তা হলে সেক্ষেত্রে তার দাবি সহীহ বলে গণ্য করা হবে এবং তার বংশপরম্পরা তার থেকেই গণ্য করা হবে, যেমনটি ‘দাবি’ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।
লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন


আরো সংবাদ



premium cement