২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পথশিশু ও শরিয়তের নির্দেশনা-১

-

সব প্রশংসা হলো মহান রাব্বুল ‘আলামিনের জন্য যিনি বিশ^ চরাচরের মালিক, স্রষ্টা, প্রতিপালক। যিনি হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টির সেরা ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসাবে সৃষ্টি করে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। আবার তাঁকে ও তাঁর বংশধর মানবজাতিকে নিজের খলিফা তথা প্রতিনিধিরূপে ঘোষণা দিয়ে আরো মর্যাদামণ্ডিত করেছেন। আর আমাদেরকে তাঁর পাঠানো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত পর্যায়ের শ্রেষ্ঠতম সম্মানের আসনে সমাসীন করেছেন। এতসব সম্মান ও মর্যাদা যাদের দেয়া হয়, স্বাভাবিক ও সাধারণ যুক্তিবুদ্ধির দাবি মোতাবেক তাদের কিছু করণীয়, দায়দায়িত্ব থাকাও স্বাভাবিক। এসব দায়দায়িত্ব স্বয়ং স্রষ্টার ইবাদত-বন্দেগি, তাঁর আদেশ-নিষেধ প্রতিপালনকেন্দ্রিক যেমন হয়ে থাকে একইভাবে তাঁর সৃষ্টির প্রতিও করণীয় দায়দায়িত্ব হতে পারে। আবার তাঁর সৃষ্টির মধ্যে খোদ মানুষের প্রতি মানুষের যেসব, যত প্রকার করণীয় হয়ে থাকে, তার অন্যতম হচ্ছে, কোনো আদম সন্তান ছোট হোক বা বড় হোক; নারী হোক বা পুরুষ হোক; কেউ কোনো প্রকার বিপদগ্রস্ত হলে, তার সাহায্যে, তাকে রক্ষার্থে যথাসাধ্য এগিয়ে যাওয়া, তাকে সহায়তা করা অন্যতম ও ন্যূনতম মানবিক দায়িত্ব।
আর যেক্ষেত্রে এই মানব সন্তান শিশু হয়, দুর্বল হয়, অসহায় হয়, সেক্ষেত্রে আলোচ্য দায়দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। এমনি একটি দায়দায়িত্ব ও করণীয় হচ্ছে, বর্তমানকার পথশিশু, পথ হারানো শিশু, কুড়িয়ে পাওয়া শিশু, ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা শিশুদের নিষ্পাপ, নিরীহ, পুষ্পসম জ্ঞান করে তাদের রক্ষার্থে এগিয়ে আসা। তাদেরকে মাতৃ-পিতৃস্নেহে, সযতেœ লালন-পালনের ব্যবস্থা করা। তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর ও নিষ্কণ্টক করার প্রয়োজনে, যথাসাধ্য তাদের পিতৃ-মাতৃ পরিচয়, বংশপরিচয় উদ্ধার করা, অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নির্ণয় করা, ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা; সর্বোপরি তারা যেই স্রষ্টার সৃষ্টি তাঁর পরিচয়-জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তাদেরকে মুসলিম, সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত, কর্মঠ, স্বাবলম্বী ও ভবিষ্যতে সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা, একজন মানুষ হিসেবে আমাদের নারী-পুরুষ, পরিবার-সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার সবার দায়িত্ব। এতে কারো সন্দেহ ও দ্বিমত করার অবকাশ নেই।
এমন একটা দায়িত্ববোধ থেকেই দীর্ঘ দিন ধরে আমার মনে এ আগ্রহ লালন করছিলাম যে, পূর্বাহ্ণে তো জ্ঞানগত দিক থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট হওয়া চাই যে, এসব পথশিশুর বেলায় তাদের রব ও স্রষ্টার বাণী-দিকনির্দেশনা এবং তাঁর প্রেরিত মহামানব হজরত মুহাম্মদ সা: যিনি সমগ্র সৃষ্টি ও মানবজাতির জন্য ‘রাহমাতুল্লিল-‘আলামিন’ তথা করুণার মূর্তপ্রতীক, তাঁর রেখে যাওয়া হাদিস, সুন্নাহ ও শরিয়া আইনের ভাষ্য ও ব্যাখ্যায় এদের বেলায় কী কী বক্তব্য ও নির্দেশনা বিদ্যমান? সে হিসেবে এসব পথশিশু কারা? আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, সংশ্লিষ্ট বিধান ও করণীয় বিষয়াদি পর্যায়ক্রমিক আলোচনায় নিয়ে আসা। নিম্নোক্ত আলোচনা তেমনি একটা প্রয়াস।
আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ
মুফতি আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বারাকাতি রহ: বলেছেন, আরবি ‘লুকাতাতুন’ বা ‘লুকাত্বাহ’ শব্দটি ‘হুমাযা’ এর অনুরূপ উচ্চারণে পঠিত হবে, যার অর্থ ‘যা তুমি পতিত পেয়ে তুলে নিলে’ অর্থাৎ তা হচ্ছে সেই মাল-সম্পদ যা ভূমিতে পড়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ‘সাইয়্যেদ রহ: বলেন, ‘লুকাতাহ্’ হচ্ছে ওই মাল যা মাটিতে পাওয়া যায় এবং তার মালিক অজানা, অপরিচিত। শব্দটি ‘আদ্দুহাকা’ শব্দের সম-উচ্চারিত। ‘ফায়িল’ (কর্তাপদে) এর ক্ষেত্রে ‘মুবালাগাহ’ বোঝানো হয়। কারণ ‘সম্পদ’ হওয়াতে তাতে একটা আকর্ষণ থাকে। কুড়িয়ে নেয়া বা উঠিয়ে নেয়া ব্যক্তিকে রূপক অর্থে ‘লুকাত্বাহ’ বলা হয়।
অবশ্য, ফকিহ আবুল-লায়স বলেন, ‘আল্লুকতাতু’ ‘কাফ’ বর্ণে ‘সকূন’ যোগেই উচ্চারিত হয়ে থাকে; অন্যভাবে তা শোনা যায়নি। অর্থাৎ তাঁর মতে ‘আল্লুকতাতু’ মানে ‘আল-মালকূত’ তথা পতিত বস্তু।’ (কাওয়াইদুল-ফিকহি : পৃ-৪৫৫, আশরাফী বুক ডিপো, ইউ.পি, ভারত) ‘আল্লাকিতু’ বা সংক্ষেপে ‘লাকিতু’-এর আভিধানিক অর্থও হচ্ছে, মাটি থেকে বা পথ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু। শরিয়তের পরিভাষায় তার অর্থ বা সংজ্ঞা হচ্ছে, ওই ছোট আদম সন্তান যাকে ভরণপোষণ, লালন-পালনের ভয়ে কিংবা ব্যভিচারের অপবাদ থেকে বাঁচার জন্য রাস্তায়/মাটিতে/ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হয়।’ আরবিতে তেমন শিশুকে ‘আল-মামবূয’ও বলা হয়। (প্রগুক্ত)
ষ আল্লামা নাসাফী রহ: এর মতে, ‘লাকিত’ হচ্ছে ওই শিশু যাকে পথে ফেলে রাখা হয়। (প্রাগুক্ত)
ষ ড. মাহমূদ আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রসিদ্ধি হিসাবে ‘আল্-লুকাতাতু’ শব্দটি ‘লাম’ বর্ণে পেশ ও ‘কাফ’ বর্ণে যবর হিসেবে পরিচিত। আযহারী বলেন, খলিলের মতে ‘কাফ’ বর্ণে ‘সকূন’ই যথার্থ। তবে আরবদের থেকে শ্রুত হিসেবে এবং অভিধানবেত্তাদের ঐকমত্যে ও হাদিস বর্ণনাকারীদের মতে, ‘কাফ’ বর্ণে যবরই হবে। একই কথা বলেছেন, আসমা‘ঈ, ফাররা, ইবনুল আরাবী প্রমুখ। বিচারক আয়াদ্ব রহ: এর মতে, এর ব্যতিক্রম উচ্চারণ বৈধ হবে না।”
ষ যামাখশারী রহ: এর মতে, সাধারণ জনতা শব্দটির ‘কাফ’ বর্ণে ‘সকূন’ দিয়ে উচ্চারণ করে। শব্দটির উচ্চারণগত ব্যবহারে একইভাবেÑ রূপেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
(আল-মুসতালাহাতু ওয়াল-আলফাযুল ফিকহিয়্যা : ড. মাহমূদ আবদুর রহমান, খ-৩, পৃ-১৮০-১৮১, দারুল-ফাযীলাহ, কাহেরা, মিসর)
লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে?

সকল