২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অবাধে মাইক ব্যবহার

-


‘ওয়াজ’ শব্দটি হলো একটি আরবি শব্দ। সহজ বাংলায় ওয়াজ অর্থ হলো ধর্মীয় উপদেশ, নসিহত, ধর্মীয় বক্তব্য বা ভাষণ, ধর্মসভা ইত্যাদি। যেহেতু ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ফরজে আইন এবং দ্বীনি মাহফিলের দ্বারা আসল উদ্দেশ্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা। তাই প্রতিটি এলাকায় ইসলামের সুমহান বাণীকে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরভাবে বছরে একাধিকবার দ্বীনি মাহফিল করা হয়ে থাকে। আর এ দ্বীনি মাহফিলের সংক্ষিপ্ত নামই হলো ‘ওয়াজ’।
ওয়াজ মানবজীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ওয়াজের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমান-আমলের উন্নতি ও সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ইসলামের শুরু থেকেই এ পবিত্র ধারা চলে আসছে এবং বর্তমানেও এ ধারা চলমান। আমাদের পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো ওই সময়ের কথা, যখন লোকমান তার পুত্রকে ওয়াজ (উপদেশ) করতে গিয়ে বললÑ হে পুত্র আমার! আল্লাহর সাথে শরিক কোরো না, নিঃসন্দেহে শিরক মহা অপরাধ।’ (সূরা : লোকমান, আয়াত : ১৩)।
বর্তমানে সর্বত্র ওয়াজ মাহফিলে কিছু মৌলিক ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি মৌলিক ত্রুটি হলো অবাধে মাইক ব্যবহার করা। ওয়াজ মাহফিলে মাইক ব্যবহার করা হবে তা কোনো ত্রুটি নয়। তবে তা করতে হবে সংযত বা পরিমিতভাবে। ওয়াজের আশপাশে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ইসলামী চিন্তাবিদরা। কিন্তু আজকাল দেখা যায় কোনো গ্রামে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, আশপাশের পাঁচ-সাত গ্রামে মাইক স্থাপন করে স্রোতাদের ওয়াজ শোনানো হচ্ছে; শহরেও একই অবস্থা। ওয়াজ মাহফিলের প্যান্ডেলে যদি ৫০০ মানুষ থাকেন, তবে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। কিন্তু তা না করে ওই এলাকার সর্বত্র মাইক লাগিয়ে আওয়াজ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ রোগীদের ফেলা হচ্ছে সমস্যাসঙ্কুল অবস্থায়। এ ছাড়া ওয়াজের মওসুম হলো প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত। এ সময়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি), মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এইচএসসি) অনুষ্ঠিত হয়। আর ওয়াজ মাহফিলও ওই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ওয়াজ মাহফিল বিকেল থেকে গভীর রাত অবধি হওয়ায় মাইকের উচ্চশব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ওয়াজ নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। আর এ ভালো কাজ করতে গিয়ে অন্য মানুষের কাজে ব্যাঘাত হোক, ইসলাম তা সমর্থন করে না।
যখন ওয়াজ মাহফিল চলমান তখন হয়তো ওই এলাকার অসংখ্য মানুষ ইবাদত-বন্দেগি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেখাপড়ার কাজে ব্যস্ত। ঠিক সেই মুহূর্তে ওয়াজ মাহফিলের মাইকের উচ্চশব্দে অন্যের সমস্যা, এটা কি ইসলাম সমর্থন করে? বেশির ভাগ স্থানেই দেখা যায়, দুপুর থেকে শুরু হয়ে ওয়াজ মাহফিল রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত চলে। হয়তো ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা সকাল ৭-৮টার মধ্যে বিদ্যালয়ে যাবে অথবা শ্রমজীবী মানুষ খুব ভোরে কাজে যাবে; এমনকি কেউ কেউ তাহাজ্জুতের নামাজ ও ফজরের নামাজ আদায় করবেন; কিন্তু ওয়াজের মাইকের উচ্চশব্দে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমাতে না পারলে পরদিন এসব কাজ করা মোটেও সম্ভব হবে না। এ ছাড়া অসুস্থ মানুষের সমস্যা তো আছেই।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মনে মনে তুমি আল্লাহর জিকির করো, গোপনে ও ভীতক¤িপত হয়ে, উচ্চকণ্ঠে নয়।’ হজরত আবু বকর রা: বলতেন, ‘তাহাজ্জুদে কুরআন তেলাওয়াত খুব নি¤œস্বরে করো। যাতে অন্য কারো ঘুম না ভাঙে।’ হজরত উমর রা: বলতেন, ‘আমি চাই তেলাওয়াত হালকা উচ্চস্বরে হোক। যাতে নিদ্রিত ব্যক্তির ঘুম না ভাঙে; কিন্তু কিছুটা সজাগ ব্যক্তি পূর্ণ জাগ্রত হয়ে যায়। যেন, তার পক্ষে কিছু নামাজ ও তেলাওয়াত করা সম্ভব হয়।’
সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়Ñ এমন কোনো কাজ কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমান হলো ওই ব্যক্তি যার হাত এবং জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকবে।’ বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে মহানবী সা: নামাজের মধ্যে শিশুদের কান্না শুনলে নামাজকে সংক্ষিপ্ত করতেন, যাতে শিশুদের মায়েদের কষ্ট না হয়। রহমতের নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে কতটা সচেতন ছিলেন, কিন্তু আমরা তাঁর উম্মত হয়ে ওয়াজ মাহফিলে মাইকের উচ্চশব্দে কত মানুষকে চরম কষ্ট দিচ্ছি তা কি একবারও ভেবে দেখেছি?
ওয়াজ মাহফিলের প্যান্ডেলে ধর্মপ্রাণ মুসলামনরা অবশ্যই উপস্থিত হয়ে দ্বীনের কথা শ্রবণ করবেন। এতে প্যান্ডেলের ভেতরে সাউন্ড বক্স দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। খুব বেশি প্রয়োজন পড়লে ওয়াজ মাহফিলের পাশে ছোট করে মাইক ব্যবহার করলে মানুষের ভোগান্তি হতো না। কিন্তু প্রতিটি ওয়াজ মাহফিলে ১০-১৫টি মাইক ব্যবহার করে ওয়াজের স্থান থেকে তিন-চার কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের কানে ওয়াজের আওয়াজ জোরপূর্বক পৌঁছে দেয়া কি যুক্তিযুক্ত? যারা দ্বীনের আলোচনা শুনতে আগ্রহী তারা তো অবশ্যই ওয়াজের প্যান্ডেলে আসবেন।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর সুন্নত ও শরিয়তের নীতি অনুসরণ করে ওয়াজ মাহফিল করা আমাদের জন্য অবশ্যই পালনীয় কাজ। পবিত্র ধর্ম ইসলাম মানুষকে সংযম শিক্ষা দেয় ও সাধারণ মানুষের শান্তির পক্ষে কাজ করার নির্দেশ করে। তাই ওয়াজের নামে মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় এ ব্যাপারে আরো অধিক সচেতন হতে হবে।
লেখক : নিবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল