১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অদ্ভুত এক অনুভব

-

ড. মো: শামসুল আলমের অতি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ‘আল কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ’ গ্রন্থ সম্পর্কে কিছু লিখতে বসে অদ্ভুত এক অনুভব আমাকে পেয়ে বসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান এবং মাস্টার্স পর্যায়ে তিনি আমার সরাসরি ছাত্র । তিনি যখন পিএইচডি করেন তখনো আমি ছিলাম তার সুপারভাইজার। তাই তিনি শুধু আমার একজন ছাত্র নন শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের অন্যতম। আল কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলোকে যেভাবে তিনি বিন্যস্ত করেছেন তা অনবদ্য, অভূতপূর্ব। ভীষণভাবে প্রশংসার দাবিদার। আমি এত বড় কাজটি করার জন্য তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এর সুবিধা অনেক। এক, আল কুরআনের আয়াতগুলো অতি অল্প আয়াসে যে কেউ খুঁজে বের করে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ তায়ালার বাণী সম্পর্কে সজ্ঞাত হতে পারবেন। দুই, কুরআন শরিফ থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে সহজে তার প্রয়োজনীয় অংশটুকু বের করে নিজে যেমন সমৃদ্ধ হতে পারবেন, অন্যকেও সমৃদ্ধির পথে টেনে আনতে পারবেন। প্রথম অধ্যায়ে তিনি কুরআন ও শিক্ষা, রাসূলুল্লাহ সা: সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সহজবোধ্যভাবে। দ্বিতীয়, অধ্যায়ে কুরআন ও সৃষ্টিতত্ত্ব এবং আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন অতি সহজ ভাষায়। যেন যেকোনো পাঠক কুরআনের মূল মর্মবাণী যে বিজ্ঞানসম্মত এবং সর্বকালের জন্য মানবজীবনে কল্যাণমূলক তা অনুধাবনে সক্ষম হয়। তৃতীয় অধ্যায়ে কুরআন ও উদ্ভিদ জগতের বিবরণ তুলে ধরে যে বিশ্বে আমরা জীবনের চিন্তার সাথে শুধু সংশ্লিষ্ট নয়, জীবন রক্ষায় মৌলিক উপাদান তা সবাই অনুভব করতে সক্ষম হবেন। চতুর্থ অধ্যায়ে কুরআন ও ঐতিহাসিক ঘটনা : গুরুত্বপূর্ণ উপমা বা দৃষ্টান্তের সুবিন্যস্ত আলেখ্য। পরিপূর্ণ জীবনের জন্য এসব উপমা বা দৃষ্টান্ত যে আলোকবর্তিকাস্বরূপ তা বিশ্বাসীরা অনুসরণ করতে সক্ষম হন। পঞ্চম অধ্যায়ে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে যা সব মানুষের জন্য অমূল্য সম্পদ। মানুষ যে আল্লাহ তায়ালার অন্য সৃষ্টি থেকে ভিন্ন, শ্রেষ্ঠতর, পরিপূর্ণ তা তিনি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন। ষষ্ঠ অধ্যায়ে সম্পদ অর্জন এবং এই সম্পদের ব্যয় ও ব্যবহার প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত, তার বিবরণের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। সপ্তম অধ্যায়ে, বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, এমনকি তালাকের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যেন মানুষ পরিবার গঠন, পরিবারে শৃঙ্খলা সংরক্ষণ এবং ধারাবাহিকভাবে জীবনের পরিপূর্ণতা আনা সম্ভব হয় তার বিস্তারিত বিধানের কথা বলা হয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ে সামাজিক আচার-আচরণ সম্পর্কিত আয়াতগুলোর মাধ্যমে মানুষের সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা এবং সুখকর পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব তার দিকনির্দেশনা রয়েছে। নবম অধ্যায়ে ইসলাম এবং ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কিত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। দশম অধ্যায়ে ইবাদত কী এবং কেন সে সম্পর্কিত কুরআনের বাণী তুলে ধরা হয়েছে। একাদশ অধ্যায়ে, কাফির কে বা কারা, মুশরিক কে সে বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। দ্বাদশ অধ্যায়ে আখেরাতের প্রকৃতি, মানব জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কিত আয়াতের বিবরণ রয়েছে। আল কুরআন আল্লাহ তায়ালার কালাম। প্রত্যেক মুসলমানের এটি বিশ্বাস। শুধু বিশ্বাস নয়, মহা পবিত্র গ্রন্থ এটি। জীবনের সর্বস্তরে আল-কুরআনের বাণী প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। তবে সবার পক্ষে সমগ্র কুরআনের বাণী মুখস্থ রাখা সম্ভব হয় না। ড. শামসুল আলমের এ মহান কাজটি তাই শুধু অনবদ্য ও অভূতপূর্ব নয়, সর্বসাধারণের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। যে বিষয়ে জানতে চান, পৃষ্ঠা উল্টালেই সে বিষয়ে আল কুরআনের কী বিধান রয়েছে তা অতি সহজে জানার ক্ষেত্রটি ড. শামসুল আলম তৈরি করলেন। তাকে এ মূল্যবান উদ্যোগের জন্য কিভাবে অভিনন্দন জানাব তার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু আল্লাহ তায়ালার কাছে মুনাজাত আমার, সুন্দর জীবনের অধিকারী হোক আমার এ প্রিয় ছাত্রটি। তার সব সাধ যেন আল্লাহ পূরণ করেন। ভালো ছাত্র ছিলেন। ভালো মানুষ হিসেবে তাকে দেখেছি। দেখতে চাই দেশের কল্যাণে নিয়োজিত একজন আদর্শ সেবক হিসেবে। আল্লাহ তায়ালার আশীর্বাদ যেন সবসময় তার মাথার ওপর থাকে।
আল-কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ, অধ্যাপক ড. মো: শামসুল আলম, প্রকাশক : মিনা বুক হাউজ, বুকস এণ্ড কম্পিউটার কমপ্লেক্স, ৪৫, বাংলাবাজার, ঢাকা। ফোন : ০১৫১৯৫২১৯৭১
লেখক : সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


আরো সংবাদ



premium cement