২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনুসরণ

-

আমার মনে হয় পশুপাখি মানুষ থেকে ভাগ্যবান। কারণ ওদের পড়াশোনা করা লাগে না, ওদের কোনো ভুল হয় না; কিন্তু মানুষ কত লেখাপড়া করে তারপরও ভুলে যায়। মানুষের রাতদিন চেষ্টা করে কত কিছু শিখতে হয়, পশুপাখির কিছু শেখা লাগে না। তারা জন্মগতভাবেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিয়ে আসে। হে আল্লাহ! আপনি মনে করিয়ে দিন। জানা জিনিসও আমরা ভুলে যাই। এ জন্য জিনিস বা বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করব। রাসূললুল্লাহ সা: অসুস্থ হলেÑ কয়েক দিন নামাজে আসতে পারেননি। এরই মধ্যে একদিন আবু বকর রা: নামাজের ইমামতির জন্য দাঁড়িয়েছেন, এমন সময় রাসূলুল্লাহ সা:-কে তাঁর ঘরের দরজায় দেখলেন, তখন আবু বকর ইমামতি থেকে সরে আসতে চাইলেন; কিন্তু রাসূল সা: ইশারায় তাকে ইমামতি করতে বললেন। এ সময় রাসূল সা: বললেন, নবুওয়াত শেষ হয়ে গেল আর নবী আসবেন না। তবে মানুষ সত্য স্বপ্ন দেখবে। সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৮ ভাগের বা ৭৮ ভাগের এক ভাগ। মানুষ সত্য স্বপ্ন দেখবে, এটা আল্লাহ পাকের নেয়ামত।
দ্বীন ১০০% নবুওয়াত দিয়ে হবে, স্বপ্ন দিয়ে দ্বীন হয় না। স্বপ্ন যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলে শোকর আদায় করতে হবে। স্বপ্ন আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, রুকুতে গেলে আল্লাহর তাজিম করবে, সিজদায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবে, সিজদায় গিয়ে দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ পর্যন্ত বলে রাসূল সা: পর্দা নামিয়ে দিলেন। নামাজ পড়িয়ে আবু বকর রা: মদিনার বাইরে কাজে চলে গেলেন। এ দিকে দুপুরের আগে ১০-১১টার দিকে রাসূল সা: ইন্তেকাল করলেন। সংবাদ পেয়ে আবু বকর দ্রুত মদিনায় ফিরে এসে রাসূল সা:-এর লাশের কাছে গিয়ে মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে কপালে চুমু খেলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনি জীবিত যেমন পবিত্র ছিলেন ওফাতের পরও তেমনি পবিত্র আছেন। মানুষকে মরতে হয় তাই আল্লাহ আপনাকে মৃত্যু দিয়েছেন।
এ দিকে ওমর তরবারি ঘুরিয়ে পাগলের মতো বলছেন, যে বলবে রাসূল মারা গেছে আমি তাকে কতল করে ফেলব। আবু বকর রা: আয়েশার ঘর থেকে বের হয়ে এসে উমর রা:-কে থামাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু উমর রা: থামলেন না, চিৎকার করে বারবার একই কথা বলতে লাগলেন। তখন আবু বকর রা: মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেনÑ লোকজন উমর রা:-কে ছেড়ে আবু বকর রা:-এর কথা শোনার জন্য তার সামনে এসে জড়ো হলেনÑ তখন আবু বকর রা: হামদ-ছানা পড়ে বললেন, ‘যারা মুহাম্মদ সা:-এর ইবাদত করতেন তারা জেনে রাখুন আপনাদের মাবুদ মুহাম্মদ সা: মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করেন তারা শুনে রাখুন আল্লাহ চিরঞ্জীব। তিনি কখনো মরেন না।’ ‘মুহাম্মদ সা: তিনি তো রাসূল ছাড়া কিছু নন, তার আগে অনেক রাসূল চলে গেছেন, যদি তিনি মারা যান বা নিহত হয় তবে কি তোমরা দ্বীন ছেড়ে দেবে। আর যদি কেউ মুহাম্মদ সা: মারা গেছে বলে মনে করে দ্বীন ছেড়ে দেয় তাতে আল্লাহর কোনো ক্ষতি হবে না।’ (আলে ইমরান)। সাহাবিরা এ আয়াত জানতেন, কিন্তু তারা মুহাম্মদ সা:-এর ওফাতের খবরে তারা তা ভুলে গেছেন। তারা বললেন, আমরা মনে করলাম,এ কথা প্রথম শুনলাম। হজরত উমর রা: এ আয়াত শুনে বললেন, ‘আমার সব আবেগ হারিয়ে গেল, মনে হলো আমার পা আর আমার ভর রাখতে পারবে না। তখন ধপাস করে বসে পড়লাম।’ আসলে আমরা জানা জিনিসও ভুলে যাই, যখন তা শুনি তখন আবার তা মনে পড়ে। আমরা যখন কুরআন-হাদিস পড়ি তখন দেখি ইসলামের মূল দাওয়াত ফরজের ওপর, আমরা দাওয়াত দেই নফলের ওপর। ফরজ-ওয়াজিব অফসনাল হয়ে গেছে আমাদের কাছে। আমাদের দাওয়াত ফাজায়েলের ওপর আর রাসূলের দাওয়াত ছিল ফারায়েজের ওপর। ঈমান, ফরজ ইবাদত, মানুষের হক, মানুষের সাথে আচরণ ছিল রাসূলের দাওয়াত। একজন বেদ্ঈুন এসে রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে এমন কোনো কাজ দেন, আমি যাতে জান্নাতে যেতে পারি। আল্লাহর রাসূল বললেন, আল্লাহর ইবাদত করো যা শিরকমুক্ত, দিনের ভেতর পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করবে। তখন লোকটি বললেন, আর কিছু, রাসূল সা: বললেন, না ফরজের পরে তোমার ওপর অন্য কিছু দায়িত্ব নয়, নিজে কিছু করলে করবে। রমজান মাসের রোজা রাখবে। তখন লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ আর কিছু? রাসূল সা: বললেন না। জাকাত দেবে। এবার লোকটি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আল্লাহর কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে রাসূল বানিয়েছেন আল্লাহ আমার ওপর যা ফরজ করেছেন তা থেকে একটুও কম করব না। এ ছাড়া কোনো নফল পালন করব না। (বুখারি)।
রাসূল সা: বললেন, যদি সে সত্য বলে থাকে তবে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে। এটাই দাওয়াতে মুহাম্মদী। আর আমরা কী বলব, তোমরা নামাজ-রোজা যাই করো আমার দলে, আমার মতে না এলে জান্নাত তোমার জন্য লক করা। এটাআমাদের দাওয়াত। আসলে আমাদের বলা উচিত ছিল, নামাজ পড়ো, রোজা করো, জাকাত দাও ইনশা আল্লাহ তুমি জান্নাত পাবে। (চলবে)
অনুলিখন : হেলাল বিশ্বাস


আরো সংবাদ



premium cement