১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জিজ্ঞাসা ও জবাব

-


প্রশ্ন : ওহাবি আর সুন্নি এই জিনিসটা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমার ছেলে হাফেজ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সে ওহাবি মাদরাসায় পড়ে। এখন আমরা দেখি, ওদের মাদরাসায় নামাজের পর মুনাজাত হয় না। আমি ওকে বলি, আব্বু তুমি মুনাজাত করো না কেন, মুনাজাত না করলে মনে হয় যেন নামাজটা পরিপূর্ণ হয় না। ও বলে, আম্মু, আমাদের মাদরাসায় ওগুলো করে না। এই মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই।
উত্তর : আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন এটা বোঝার জন্য দীর্ঘ আলোচনা দরকার। ওহাবি শব্দটা এসেছে সৌদি আরবের একজন সংস্কারক মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের নাম থেকে। যিনি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি জন্মগ্রহণ করেন এবং আমার যতদূর মনে পড়ে, ১৭৯০/৯৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বিদায়াতের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার কর্মের ভুলত্রুটি আছে; কিন্তু তিনি বিদায়াতের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরবর্তীতে সারা দুনিয়ার যেকোনো মানুষ বিদায়াতের বিরোধিতা করলেই তাকে ওহাবি বলা হয়। ওহাবিয়াতের কোনো ডেসক্রিপশন নেই। মুনাজাত না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। আবার অনেক জায়গায় ধূমপান না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। কোনো কোনো জায়গায় কেউ সুন্দর কিরাত পড়লে তাকে ওহাবি বলা হয়। অর্থাৎ সমাজের প্রচলনের বাইরে যে গেল, সে ওহাবি। এটা অনেকটা এমন, মুহাম্মদ সা: যখন দ্বীন প্রচার করতে লাগলেন, সমাজের মানুষেরা তাঁর কোনো কাজকে খারাপ বলতে পারল না, তখন কাফেররা বলতে লাগলÑ মুহাম্মদ সাবে’ হয়ে গেছেÑ সাবাআ মুহাম্মদ। অর্থাৎ আমাদের বাপ-দাদার প্রচলিত ধর্ম ত্যাগ করে নতুন একটা ধর্ম নিয়ে এসেছে। এটি একটি গালি মাত্র। ঠিক তেমনি ওহাবি শব্দ একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। মূলত ওহাবি বলে কোনো জিনিস নেই। দেখবেন সমাজে যারা কুরআন-সুন্নাহ মানতে চায় রাসূল সা:-এর অনুসরণ করতে চায়Ñ বিদায়াতকে যারা ভালোবাসে, তারা এসব মানুষকে ওহাবি বলে গালি দেয়। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সা:-কে অনুসরণ করতে চায় তাকে আপনি কেন গালি দেন! তাহলে তো মুহাম্মদ সা:-কে গালি দেয়া হয়। এটা হলো মূল বিষয়। মূলত ওহাবি বলে কিছু নেই। কেউ বলে ওহাবিরা ওলিদের অস্বীকার করে, কেউ বলে ওহাবিরা রাসূল সা:-কে মানে নাÑ এগুলো সবই ভুল কথা। মূলত যাদের আমরা ওহাবি বলি তারা সবই মানেন। তারা মাজহাব মানেন, তারা সুন্নত মানেন, তারা ওলিদের মানেন, তারা কুরআন মানেন এবং তারা কেউ মুহাম্মদ বিন আবদুুল ওয়াহহাবের ভক্ত নয়। কিন্তু তারা বিদায়াতের বিরোধিতা করেন। এটিই হলো সমস্যা। এবার আসা যাক নামাজের পর মুনাজাতের বিষয়ে। আসলে আমরা তো অভ্যাসের দাস। নামাজটাই মুনাজাত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেনÑ ‘যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে।’ মুনাজাত শব্দের অর্থ কথা বলা। চুপিচুপি কথা বলা। তো যখন আমরা সালাতে দাঁড়াই, তখন আমরা মুনাজাত করি। কাজেই রাসূল সা: বলেছেন, ‘তুমি কার সাথে কথা বলছ, কী কথা বলছ, সচেতন হয়ে কথা বলো’ (ইবন আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ, হাদিস-৮৪৬২)। অতএব সালাতটা পুরোটাই মুনাজাত। আবার আমরা যে দোয়া বলি; সালাত দোয়া। রাসূল সা: সালাতের সিজদায় দোয়া করতেন, সালাম ফেরানোর আগে দোয়া করতেন। আর যেটা নিয়ে আমাদের গোলমাল, অর্থাৎ সালাতের পরের দোয়াÑ এটিও রাসূল সা: করতেন। তবে সমস্যা হলো, দলবদ্ধভাবে সবাই মিলে যে মুনাজাতটা করা হয়, এভাবে রাসূল সা: কখনো করতেন না। রাসূল সা: মদিনার ১০ বছরের জীবনে আঠারো হাজার ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন, এক ওয়াক্ত সালাতেও তিনি সবাইকে নিয়ে দলবদ্ধভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন এমন একটাও হাদিস নেই। কিন্তু এর বিপরীতে রাসূল সা:-এর শত শত হাদিস আছে, তিনি সালাতের সালাম ফেরানোর পরে একা একা বিভিন্ন দোয়া পড়েছেন। আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। এ জন্য যারা রাসূল সা:-এর পুরোপুরি অনুসরণ করতে চান তারা একাকি দোয়াকে পছন্দ করেন। আপনিও তো একাই দোয়া করেনÑ বোন! আপনার সন্তানও একাই দোয়া করবে।
অনুলেখক : সাব্বির জাদিদ

 


আরো সংবাদ



premium cement