১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানুষ হত্যা মহাপাপ

-


২৬ জুন বুধবার সকাল ১০টা বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে কোপানো হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে এ যুবক মৃত্যুবরণ করেন। বর্বর আক্রমণের চিত্রটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন মিডিয়াসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্ববাসী দেখেছেন। এই নৃশংস আক্রমণের ভিডিও প্রকাশ হয়ে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
আমরা কি মানুষ? পশুদের প্রাণ আছে কিন্তু বোধ বুদ্ধি নেই, তাই তারা জানোয়ার, হিংস্র পশু। আমাদের প্রাণ আছে, বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন, তাই আমরা মানুষ। মনুষ্যত্ববোধ আছে বলেই আমরা মানুষ। কিন্তু আমাদের আচার-আচরণ, সামগ্রিক চিন্তা-চেতনা ভাবনায় আমরা কি সত্যিই মানুষ? আমরা কি আমাদের আচরণ দ্বারা বনের হিংস্র পশুকেও হার মানাচ্ছি না? আমরা বর্বর এবং পশুর চেয়েও অধম! একজন কোপ খাবে আর বাকিরা ভিডিও করবেÑ এটাই যেন এ সমাজের নিয়ম। এর বাইরে আর কোনো নিয়ম বা দায়বদ্ধতা যেন নেই। মানবতা, নৈতিক অবক্ষয় এবং সমাজ আজ কোথায় দাঁড়িয়েছে?
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে জামায়াত-শিবির সন্দেহে দরজি বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে রিফাতের মতোই কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। (দৈনিক প্রথম আলো : বুধবার ৫ আগস্ট ২০১৫)। ২৬ জুন বরগুনায় একইভাবে এ আক্রমণ করে সন্ত্রাসীরা।
এরপর কে? কোথায় ওঁৎ পেতে আছে মানুষরূপী হিংস্র পশুরা। এই অমানবিক ও বর্বর আক্রমণের শেষ কোথায়? এমনুষরূপী পশুদের পিপাসা মিটবে কবে? এ অন্ধকার সময়ের অধ্যায় শেষ হয়ে আলো আসবে কবে? নাকি কোনো দিনই আর দেখা মিলবে না সেই আলোর। বর্বরতা, অমানবিকতা ও হত্যার মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত, আসামিদের গ্রেফতার করে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা নিয়ে জনমনে বহু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এই দেশে এভাবেই রিফাতদের চলে যেতে হয় অতৃপ্তি নিয়ে, আর আমাদের বেঁচে থাকতে হয় তাদের অভিশাপের বোঝা নিয়ে! এভাবেই একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কোনো প্রতিকারই হচ্ছে না। বিশ্বজিৎ দাসের সব খুনির এখনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (শাবি) বদরুল আলম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে বর্বরভাবে কুপিয়েছিল। (দৈনিক কালের কণ্ঠ : ৩ অক্টোবর ২০১৭ )। কিন্তু সেই সন্ত্রাসী বদরুল কিছু দিন জেল খেটে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তনুর হত্যাকারীদের আজো ধরা যায়নি। ধামাচাপা পড়ে গেল মিতু হত্যার বিষয়টিও। আফসানার নামও আর কেউ উচ্চারণ করছে না। যখন কোনো অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে যায়, তখনই নতুন আরো অনেক অপরাধীর জন্ম হয়। কারণ তখন সম্ভাব্য অপরাধী দেখে, কই কিছুই তো হলো না। তখন সে আস্ফালন করার সুযোগ পায়, সে অপরাধ করতে সাহসী হয়। তার ওপর যদি সে হয় কোনো রাজনৈতিক দলের লোক হয় তাহলে তো আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। প্রশ্ন হলো, আর কত অপকর্ম করলে বা কত মানুষকে প্রকাশ্যে কোপালে বন্ধ হবে এসব বর্বর আক্রমণ?
সঠিক বিচারের মধ্য দিয়ে এ দেশে আইনের নজিরবিহীন শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যেন অধরা! বিশ্বজিৎ দাস, তনু, রিশা, আফসানা, নিতু এবং খাদিজা আখতার নার্গিস পর্যন্ত অসংখ্য ঘটনা আজ জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে! তাদের বেলায় বলা যায় বিচারের বাণী-নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কথাটি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। এ কথাটি তনু, রিশা, আফসানা, নিতু, খাদিজাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অনেক দিন আগে ঘটে যাওয়া হত্যার যথার্থ বিচার বিলম্বিতই শুধু হচ্ছে না, বিচার কাঁদছেও। আর বিচার বিলম্বিত হচ্ছে তদন্তের ধীরগতি, তদন্ত আটকে যাওয়া, আবার বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে। বিচারহীনতার এমন সংস্কৃতির এ প্রবণতা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। জনগণ চায় প্রতিটি আপরাধের সাথে জড়িত সব দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আশা করি, দ্রুত সরকার এবং প্রশাসন রিফাতের খুনিদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।
লেখক : প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল


আরো সংবাদ



premium cement