২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পশু মোটাতাজাকরণে সদাচারণ

-

কোরবানি শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছু উৎসর্গ করা কিংবা বিসর্জন দেয়া। যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আল্লাহর ক্ষমা লাভের উদ্দেশ্যেই মানুষ কোরবানি করে। কোরবানি হলো অত্যন্ত একটি পবিত্র ও কল্যাণময় বিষয়। কোরবানি করা একটি ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির পশুর রক্ত মাংস কোনোটিই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। আল্লাহর কাছে বান্দার তাকওয়া পৌঁছে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি ইবাদত আদায়ের ক্ষেত্রে বান্দার তাকওয়া দেখে থাকেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আল্লাহর কাছে এদের রক্ত কিংবা মাংস কিছুই পৌঁছে না; বরং তার কাছে তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।’ (সূরা হজ:৩৭)।
কোরবানির সময় এলে দেখা যায়, অধিক মুনাফা লাভের আশায় পশুর গায়ে ইনজেকশন পুশ করে পশুকে মোটাতাজা করা হয়। পশুকে ঘরে আবদ্ধ রেখে অতিরিক্ত খাবার দেয়া হয়। পশুকে শুইতে দেয়া হয় না। পশুকে সারাক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পশুকে বিশ্রাম দেয়া হয় না। পশুকে খড়কুটা, ঘাস, খৈল, ভুসির পাশাপাশি নানা ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার সরবরাহ করা হয়। অল্প সময়ে কৃত্রিম উপায়ে পশু মোটাতাজা করার ফলে অধিকাংশ পশুই অসুস্থ থাকে। যার ফলে কোরবানি পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, এসব পশুর গোশত খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘মানুষের মধ্যে কিছু আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ পাক ও আখেরাতের উপর ঈমান এনেছি, কিন্তু এরা মোমিন নয়। এরা আল্লাহ পাক ও তাঁর বান্দাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে, যদিও তাদের অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে, যদিও তাদের কোনো প্রকারের চৈতন্য নেই।’ (সূরা বাকারা: ৮-৯)।
যারা কৃত্রিম উপায়ে কোরবানির পশু মোটাতাজা করে। তারা সবাই কিয়ামতের মাঠে ধোঁকাদানকারী অর্থাৎ শয়তানের দলভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। যে ব্যক্তি অপর একজনকে ধোঁকা দিলো সে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করল। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণকারীদের জন্য আল্লাহ কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এরাই হচ্ছে সেসব ব্যক্তি; যাদের আবাস্থল হচ্ছে দোজখ, যার থেকে মুক্তির কোনো পন্থাই তারা পাবে না।’ (সূরা আন-নিসা: ১২০-১২১।
কোরবানির পশু মোটাতাজা করার ক্ষেত্রে পশুর প্রতি অবশ্যই সদাচারণ করতে হবে। পশুর যেন কোনোরূপ কষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। হজরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, সমগ্র সৃষ্টিই আল্লাহ তায়ালার পরিবার সদৃশ; সুতরাং সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক প্রিয়, যে আল্লাহর পরিবারের সাথে সদাচরণ প্রদর্শন করে।’ (মেশকাত:৪৭৮১)।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন,‘তোমরা পশুর মুখমণ্ডলে আঘাত করো না; এবং পশুর গায়ে দাগ দিও না।’ ( মেশকাত:৩৯০০)। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘ জমিনের বুকে বিচরণশীল যেকোনো জন্তু কিংবা বাতাসের বুকে নিজ ডানা দুটি দিয়ে উড়ে চলা যে কোনো পাখিই- এগুলো তোমাদের মতোই।’ (সূরা আনআম:৩৮)। সুতরাং যিনি কোরবানির পশু লালন পালন করে থাকেন এবং যিনি কোরবানি আদায় করবেন উভয়কেই কোরবানির পশুর প্রতি সদাচারণ করতে হবে।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


আরো সংবাদ



premium cement