২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইসলামে মৌলিক শিষ্টাচার

-

হজরত হাসান বসরি র. বলেছেন, ‘যার মধ্যে শিষ্টাচার নেই, তার মধ্যে কোনো জ্ঞান নেই’। কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তা ছাড়া বলা হয়, ‘একটি মানুষ কথা বলতে শিখে দুই বছরে আর কখন কোন কথা বলতে হয় তা শিখতে লাগে সারা জীবন। এ শিষ্টাচার প্রশিক্ষণে ইসলাম সবচেয়ে আধুনিক, অগ্রগামী। সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামী শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য অনন্য। কারণ, এটি আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সর্বশেষ এবং পরিপূর্ণ জীবনবিধান’ (সূরা মায়েদাহ ৫: ৩)। এখানে দুনিয়াবি এবং পরকালীন শান্তির জন্য যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তার কোনো বিকল্প নেই এবং হবেও না। এই নিবন্ধে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পাঁচটি মৌলিক শিষ্টাচার তুলে ধরা হলো, যার বাস্তবায়নে আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে একে অপরের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
যেকোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা:
আমরা বৈধ যে কাজই করি না কেন, তার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) বলাটা ইসলামের অন্যতম শিষ্টাচার। এর মাধ্যমে প্রত্যেক কাজের শুরুতেই আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। সুতরাং সেখানে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার সম্ভাবনা কমে যায়, আর আল্লাহর নাম নেয়ার কারণে তাকে স্মরণ করার কারণে সে কাজে বরকত বাড়িয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যেকোনো কাজ যার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা হয়নি, সেটি (আল্লাহর রহমত থেকে) বিচ্ছিন্ন’ (সুনানু আহমদ, খণ্ড ১৪, হাদিস নং ৩২৯)। বাস্তবিকভাবেও বিশেষ বিশেষ কাজের শুরুতে রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর সাহাবিদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে। আমরা একটি হাদিসে পাই, হজরত ওমর বিন আবু সালামাহ বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন খাবার সময় পাত্রের (প্লেটের) এদিক সেদিক থেকে গ্রহণ করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে নির্দেশ দিলেন, ‘হে বৎস! আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার শুরু করো, ডান হাত দিয়ে খাও এবং পাত্র থেকে তোমার নিকটবর্তী স্থান থেকে খাবার গ্রহণ করো’ এরপর থেকে খাবারের সময় তাঁর সা:-এর নির্দেশনাই পালন করে চলি’ (সহিহ বুখারি ২৮৮)।
সম্বোধনের শুরু :
সালাম দিয়েই আমাদের একে অপরের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হবে। ইসলামের একটি সুন্দরতম শিষ্টাচার হলোÑ যখন মুমিন, মুসলিম একে অপরের সাক্ষাৎ হয়, তখন শুরুতেই একে অপরের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করে। কত ধরনের সম্ভাষণের প্রচলন আছে বর্তমান পৃথিবীতে। কিন্তু ইসলামের এই সুমহান সম্বোধন ও সম্ভাষণ অন্য যেকোনোটির তুলনায় অনন্য। ‘হাই’, ‘হ্যালো’ কিংবা শুভেচ্ছা, স্বাগতম জানানোর চেয়ে একে অপরের শান্তি কামনা করা কি উত্তম নয়? এটির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, তারা একে অপরের জন্য মোটেও ক্ষতিকারক নয়; বরং যেকোনো অনিষ্ট থেকে নিরাপদ। সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি কল্যাণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। এই সালামের ইতিহাস কিন্তু আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আ: থেকে শুরু হয়েছিল। তাঁকে জীবন (রূহ) দেয়ার পর উপস্থিত ফেরেশতাদের সম্ভাষণ জানাতে বলা হয়েছিল। তিনি তাদের সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম (আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)’ বলে। প্রতিউত্তরে ফেরেশতারা বলেছিলেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (আপনার-আপনাদের ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক)’ (সহিহ মুসলিম ৫৪৩)। সেই থেকে এই সম্ভাষণের প্রচলন চলে আসছে মুসলিমদের জন্য।
খাদ্য এবং পানাহার ডান হাত দিয়ে
গ্রহণ করা :
কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া একজন মুসলিমের জন্য বাম হাত দিয়ে খাদ্য ও পানিও গ্রহণ করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ সা: এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যখন কেউ খাদ্য গ্রহণ করে, সে যেন ডান হাত দিয়ে খায় আর যখন পানীয় পান করে, সে যেন ডান হাত দিয়ে পান করে। কারণ, শয়তান বাম হাত দিয়ে খায় এবং পান করে’ (সহিহ মুসলিম ৫০০৮)।
এটাও অন্যতম সুন্নাহ যে, খাবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ (সংক্ষেপে ‘বিসমিল্লাহ’) (সুনানু আবু দাউদ ৩৭৬৭ এবং সুনানু তিরমিজি ১৮৫৮) এবং খাবার শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ আল্লাজি আত আমানা, ওয়া সাকানা, ওয়া জাআলানা মিনাল মুসলিমিন’ সংক্ষেপে আলহামদুলিল্লাহ ও বলা যেতে পারে’ (সুনানু আবু দাউদ ৩৮৫০, সুনানু তিরমিজি ৩৪৫৭)।
হাঁচি দেয়া এবং তৎপরবর্তী শিষ্টাচার :
হাঁচি অত্যন্ত প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার যা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অনেক সময় আমরা এটিকে চেপে রাখার চেষ্টা করি কিন্তু তা অনুচিত। কারণ, হাঁচির মাধ্যমে শরীরের দুর্বলতা ও অলসতা চলে যায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা:-এর নির্দেশ হলো, ‘যে ব্যক্তি হাঁচি দেবে সে বলবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর)। যদি এটি কেউ শুনে থাকে তাহলে সে তার প্রতিউত্তরে বলবে ‘ইয়ারহামুকুমুল্লাহ’ (আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন)। এ কথাটি হাঁচিদাতা শুনলে প্রতিউত্তরে বলবেন, ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহ’ (আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন)’ (সহিহ বুখারি ১৪৩)।
উপকারীর উপকার স্বীকার করা এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা :
প্রকৃতিগতভাবে মানুষ প্রশংসা পছন্দ করে। যখন কেউ কোনো ভালো ও কল্যাণকর কাজ করে, তখন ওই ব্যক্তিকে তার কাজের জন্য প্রশংসা করলে সে আনন্দিত হবে এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো ও কল্যাণকর কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রশংসা করার শিষ্টাচার সম্পর্কে অবিহিত করেছে ইসলাম। কেউ কাউকে যেকোনো ধরনের উপকার করলেই সাথে সাথে তার কৃতজ্ঞতায় বলা উচিত ‘জাযাকা আল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)। এ ক্ষেত্রে আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘ধন্যবাদ’ না বলে রাসূলুল্লাহ সা:-এর শেখানো পরিভাষা ব্যবহার করলে সুন্নত পুনরুজ্জীবিতকরণে সওয়াব পাবো, ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে বলব, ইসলাম শেখানো শিষ্টাচারগুলোর ভাষা যেমন মার্জিত ও সুমধুর তেমনি ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে তার প্রভাব বিস্তৃত। এসব শিষ্টাচারের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিশ্চিত করতে পারলে একে অপরের মধ্যে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেমন স্থাপিত হবে, তেমনি শান্তিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
লেখক : শিক্ষক

 


আরো সংবাদ



premium cement
বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী

সকল