২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফিতরার বিধান

-

সদকা হলো দান আর ফিতর মানে ভেঙে ফেলা। অর্থাৎ সাদাকাতুল ফিতর হলো রোজা ভেঙে ফেলার জন্য বিশুদ্ধ দান। সহিহ হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: উল্লেখ করেছেন রোজা রেখে আমাদের দ্বারা যে ছোট ছোট ত্রুটিগুলো হয়ে যায় তার কাফফারা হয়ে যায় এ দানের মাধ্যমে।
ঈদের দিনেও যেন হতদরিদ্র মুসলমানেরা অভুক্ত না থাকে বা ঈদের খুশি থেকে বঞ্চিত না থাকে। যেমন মুহাম্মাদ ইবনে খালিদ আদ দিমাশকি রহ. ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সাদাকাতুল ফিতর রোজাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাজের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসেবে গণ্য হবে’ (ইবনে মাজাহ, সুনান আবু দাউদ-১৬০৯)।
এখানে এ বিষয়টি লক্ষণীয় যে, হানাফি মাযহাব ছাড়া অন্য মাযহাবে ফিতরা আদায়কে ফরজ বলা হয়েছে।
সব হাদিসেই সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ এক সা এর কথা বলা হয়েছে। স্থানভেদে সা এর ভিন্নতা রয়েছে। যেমনÑ মদিনার এক সা হলো চার মোদ অর্থাৎ মাঝারি ধরনের লোকের দুই হাতের পূর্ণ চার অঞ্জলি পরিমাণ। যা কেজির ওজনে ২.৫ থেকে প্রায় তিন কেজি। আর ইরাকের সা অনুযায়ী তিন কেজি ৩০০ গ্রাম।
সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড-২, হাদিস নং-৩৩৩৪ এ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ওজন হবে মক্কার ওজন অনুযায়ী এবং পরিমাণ হবে মদিনার পরিমাণ অনুযায়ী। তাই সরাসরি রাসূল সা:কে অনুসরণ করতে চাইলে মদিনার এক সা’র (তিন কেজি) অনুসরণই হবে অধিক যুক্তিযুক্ত।
হানাফি মাজহাবে গমের ক্ষেত্রে যে অর্ধ সা এর কথা বলা হয় তা এসেছে আমির মুয়াবিয়া রা:-এর আমল থেকে। আমির মুয়াবিয়া রা:-এর খেলাফতকালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি ফিতরা হিসেবে গম অর্ধ সা দিতে বলেন। যদিও তৎকালীন জীবিত অগণিত সাহাবায়ে কেরাম রা:-এর বিরোধিতা করেছিলেন। আর সেই সময়ে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে গমের দাম বেশি থাকায় অর্ধ সা দেয়ার যৌক্তিকতা থাকলেও এখন এটা যৌক্তিক বলে বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরাম মনে করেন না। তাই সন্দেহ বা বিতর্কের ঊর্র্ধ্বে সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো এক সা (তিন কেজি)।
সব ওলামায়ে কেরাম একমত যে, সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের সবচেয়ে উত্তম সময় হলো ঈদের চাঁদ উঠার পর থেকে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত, নাবী সা: লোকদের ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন। (বুখারি ১৫০৩)। সাহাবায়ে কেরামগণ ঈদের দুই-একদিন আগেও সাদকাতুল ফিতর আদায় করতেন (বুখারি ১৫১১)।
যদিও হানাফি ও শাফেঈ মাজহাবে রমজানের শুরু থেকেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ বলা হয়েছে এবং কোনো কোনো ওলামায়ে কেরাম সংগ্রহকারীদের দেয়ার ক্ষেত্রে ঈদের সাত দিন আগে দেয়া যেতে পারে বলেছেন। কিন্তু সন্দেহ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে সাদকাতুল ফিতর আদায়ের সঠিক সময় হলো ঈদের দুই একদিন আগে থেকে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত। আর ঈদের নামাজের পরে দিলে সাদাকাতুল ফিতর আদায় হবে না, সেটি হবে সাধারণ সদকা বা দান (সুনানে আবু দাউদ ১৬০৯) যা আগেই উল্লেখ করেছি।
সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড-২ হাদিস নং-১৬০৯ হাদিসে জাকাতুল ফিতরকে মিসকিনের খাবার বলা হয়েছে। মিসকিন হলো সাধারণ অভাবীদের চেয়ে যাদের অবস্থা বেশি খারাপ। হানাফি মাজহাবে জাকাতের আটটি খাতকেই সাদকাতুল ফিতরের খাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সন্দেহ বা বিতর্কের ঊর্র্ধ্বে মাসয়ালা হলো সাদাকাতুল ফিতর দিতে হবে অতি দরিদ্র মুসলিমকে।
কুরআন বা হাদিসে সরাসরি তেমন কোনো দিক নির্দেশনা পাওয়া না গেলেও বেশির ভাগ স্কলারের মতে রোজাদার যেখানে ঈদ করবেন সেখানেই সাদাকাতুল ফিতর দেবেন। তবে যদি সেখানে দরিদ্র মুসলিম পাওয়া না যায় তবে অন্য কোথাও দেওয়া যেতে পারে।
লেখক : প্রভাষক

 


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল