১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলাম মানবতার ধর্ম

-

ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার কল্যাণের জন্যই ইসলামের আগমন। মানব সমাজের সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে মানব সমাজকে কল্যাণকামী সমাজে পরিণত করা হয়েছে। রাস্তা যেন নির্বিঘœ হয়, যাতে মানুষের চলতে শারীরিক বা মানসিক কষ্ট না হয় সে ক্ষেত্রেও ইসলামের সুমহান বাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাস্তা দিয়ে চলতে মানুষের বা কোনো জীবের কষ্ট হয় এমন বস্তু সরিয়ে ফেলাকে সাদাকা হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবুজার রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার হাসি তোমার জন্য সাদাকা তোমার সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ সাদাকা, পথভ্রষ্টকে পথ দেখানো তোমার জন্য সাদাকা, দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দৃষ্টি দান করা তোমার জন্য সাদাকা, তোমার দ্বারা রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরিয়ে ফেলা তোমার জন্য সাদাকা এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি প্রবাহিত করা সাদাকা।’ (জামিউত তিরমিজি) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা ঈমানের অংশ। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রাহ রা: বর্ণিত এক হাদিসে নবী সা: বলেন, “ঈমানের ৭০-এর বেশি অথবা ৬০-এর বেশি শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলোÑ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনি¤œ হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর-১৬২)
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, আল্লাহর ক্ষমা লাভ এবং জান্নাতে অনন্ত সুখ লাভের অন্যতম উপায়। হজরত আবু হুরায়রাহ রা: বর্ণিত এক হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘আমি জান্নাতে এক ব্যক্তিকে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে দেখলাম রাস্তা থেকে একটি গাছ কাটার জন্য, যে গাছটি মানুষকে কষ্ট দিত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর-৬৮৩৭) ওই সাহাবি বর্ণিত অপর এক হাদিসে মহানবী সা: বলেন, ‘একদা এক ব্যক্তি রাস্তায় চলার সময় রাস্তার ওপর একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের একটি ডাল ফেলা দেখলো। সে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর-৬২৪)
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস অপসারণ করা শ্রেষ্ঠ আমলের অন্তর্ভুক্ত। স্বনামধন্য সাহাবি হজরত আবুযার রা: থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আমার উম্মতের ভালো ও মন্দ আমলগুলো আমার কাছে পেশ করা হলো। আমি তাদের ভালো আমলের মধ্যে পেলাম, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আমি তাদের খারাপ আমলের মধ্যে পেলাম, মসজিদের মধ্যে শ্লেষ্মা বা কফ, যা দাফন করা হয়নি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর-১২৬১)
এক হাদিসে নবী সা: রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাকে রাস্তার হক বলে সাব্যস্ত করেছেন। হজরত আবু সাঈদ আল খুদরি রা: (মৃ. ৬৪-৭৪ হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সা: থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সা: বলেন, ‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো’। তারা বললেন, আমাদের গত্যন্তর নেই, রাস্তাগুলো আমাদের সভাস্থল, সেখানে আমরা আলোচনা করে থাকি। তিনি সা: বললেন, ‘যেহেতু তথায় বসা ছাড়া তোমাদের গত্যন্তর নেই বলছ, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করো’। তারা বললেন, রাস্তার হক কী? তিনি সা: বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা, সালামের জবাব দেয়া, সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজের নিষেধ করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর-২৩৩৩)
রাস্তার ওপর মল ত্যাগ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এ ব্যাপারে নবী সা: থেকে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রাহ রা: বর্ণিত হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘অভিসম্পাত আকর্ষণকারী দুই ব্যক্তিকে তোমরা ভয় করো।’ তারা (সাহাবিরা) বললেন, অভিসম্পাত আকর্ষণকারী দুই ব্যক্তি কারা, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি সা: বললেন, এক. যে ব্যক্তি মানুষের রাস্তায় মল ত্যাগ করে বা দুই. যে ব্যক্তি তাদের ছায়া গ্রহণের জায়গায় মল ত্যাগ করে।’ (সহিহ মুসিলম, হাদিস নম্বর-৬৪১) ছায়া গ্রহণের জায়গা বলতে বুঝাবে প্রচণ্ড গরমের সময় মানুষ যে সব গাছের নিচে বসে। আবার প্রচণ্ড শীতের সময় যে সব স্থানে বসে মানুষ রোদ উপভোগ করে সে সব জায়গাও একই হুকুম আসবে। ওই হাদিসে ‘ফি জিল্লিহিম’ (তাদের ছায়া গ্রহণের জায়গা) ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। সহিহ ইবন হিব্বান নামক হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত এক হাদিসে ওই ভাষার পরিবর্তে ‘ফি আফনিয়াতিহিম’ (তাদের বাড়ির সামনের প্রাঙ্গণ) ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। (সহিহ ইবন হিব্বান বিতারতিবি ইবন বালবান, হাদিস নম্বর-১৪১৫)
হজরত মুয়াজ ইবন জাবাল রা: (মৃ. ১৮ হি.) বর্ণিত অপর এক হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘তিন স্থানে মল ত্যাগ করা থেকে তোমরা বেঁচে থাকো। ঘাটে, মূল রাস্তায় এবং মানুষের ছায়া গ্রহণের স্থানে।’ (সুনানু আবু দাউদ, হাদিস নম্বর-২৬) অপর এক হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের চলাচলের কোনো রাস্তায় মল ত্যাগ করল, তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত, ফেরেশতাদের অভিসম্পাত এবং সব মানুষের অভিসম্পাত।’ (মুহাম্মাদ আমিন, তায়সিরুত তাহরির, তৃতীয় খণ্ড, দারুল ফিকার, তা. বি., পৃষ্ঠা- ৬৫)
যে রাস্তা দিয়ে চলতে মানুষের কষ্ট হয় এমন রাস্তা মানুষের চলাচলের উপযোগী করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। কেননা, মানবোপকার একটি মহৎ কাজ। এ বিষয়ে নবী সা: থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে নবী সা: বলেন, ‘আমি আমার কোনো ভাইয়ের প্রয়োজনে চলব এটা আমার কাছে এ মসজিদে তথা মদিনার মসজিদে এক মাস ইতিকাফ করার চেয়ে প্রিয়’। (আল মুজামুস সাগির, হাদিস নম্বর-৮৬১) উল্লেখ্য, ইতিকাফ একটি কষ্টসাধ্য কাজ। সংসারের মায়াজাল ছিন্ন করে এবং দুনিয়া থেকে নির্লিপ্ত হয়ে মসজিদে গিয়ে ইবাদত ও জিকিরে লিপ্ত হতে হয় এবং সার্বক্ষণিক সেখানে অবস্থান করতে হয়। কাজেই এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। কিন্তু ওই হাদিসে মানবোপকারকে ইতিকাফের চেয়েও উত্তম কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
লেখক : অধ্যক্ষ, শংকরবাটী মাদরাসা, চাঁপাই


আরো সংবাদ



premium cement
ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক বিকেবি ও রাকাব একীভূতকরণের প্রতিবাদে রাজশাহীতে মানববন্ধন অপহৃত চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার রামেক আইসিইউতে, গ্রেফতার ২ বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে দর্জি ব্যবসায়ীর মৃত্যু সমর্থকদের মাতামাতি করতে মানা করলেন শান্ত

সকল