২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাকওয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলে

-


মানবজীবনে সৎ গুণাবলির মধ্যে তাকওয়া হচ্ছে অন্যতম। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে সে পার্থিব জীবনের লোভে কোনো খারাপ কাজ করে না এবং পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখে। তাই শাব্দিকভাবে তাকওয়া বলতে বোঝায় (ইসলাম বহির্ভূত কাজ থেকে) বিরত থাকা, ভালোভাবে বেঁচে থাকা, সাবধান থাকা, পরহেজ করা, সচেতনতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা। এক কথায়, একমাত্র আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার নামই তাকওয়া। আর যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকে তাকে মুত্তাকি বলে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, ভয় করার মতো।’ (সূরা ইমরান : ১০২)
তাকওয়ার ফলে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক গভীরভাবে তৈরি হয়। যার কারণে মানুষের চিরশত্রু শয়তানও কুমন্ত্রণা দিয়ে ব্যর্থ হয়। কুরআনের ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের যখন শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।’ (সূরা আরাফ : ২০১)
ইহজীবনে মানুষ তার শত্রুদের দ্বারা অত্যাচারিত হবে এটাই স্বাভাবিক। শত্রুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মজলুমের জীবন হয় হতাশাগ্রস্ত। কিন্তু বান্দা মুত্তাকি হলে প্রতিপক্ষ তার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, ‘আর যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সূরা আল ইমরান : ১২০)
জীবন চালাতে আমাদের বিভিন্ন চাহিদা থেকেই যায়। আমরা যতই উপার্জন করি না কেন, তাতে যদি বরকত না থাকে; তাহলে সেই চাহিদা পূরণ করা মোটেই সম্ভব হবে না। তাই প্রয়োজন মুত্তাকি হওয়া। কুরআনের ভাষায়, ‘আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তা হলে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিন থেকে বরকত তাদের ওপর খুলে দিতাম।’ (সূরা আরাফ : ৯০)
জীবিকা অন্বেষণের তাকিদে বেশির ভাগ মানুষ হালাল-হারাম খুঁজে না। আশ্রয় নেয় সুদ, ঘুষ, চুরি, কালোবাজারিসহ মারাত্মক বড় বড় গোনাহের কাজে। অথচ আল্লাহকে ভয় করলে হালাল পন্থায় এমন সব উৎস থেকে রিজিক আসবে যা মানুষের কল্পনার বাইরে। কুরআনের ভাষায়, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (সূরা তালাক : ২-৩)
দুনিয়ার জীবনে যার অর্থ ও মানুষ বেশি থাকে তাকেই সাধারণত শক্তিশালী বলা হয়। তার দাপটে সমাজ চলে। অসহায় মুত্তাকিদের পক্ষে মানুষ কম থাকে। তবে সেই মুত্তাকিদের অন্যদের তুলনায় শক্তিশালী করার জন্য স্বয়ং আল্লাহই তার সাথে থাকেন। কুরআনের ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।’ (সূরা নাহল : ১২৮)
অর্থ ও অধিক জনসমর্থনে সাধারণত দুনিয়াতে মর্যাদাশীল হওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত মর্যাদাশীল হতে একজন মানুষকে অর্থ ও জনসমর্থনের পাশাপাশি অবশ্যই মুত্তাকি হতে হবে। নতুবা এ মর্যাদা মূল্যহীন হয়ে যাবে। সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে
আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন।’ (সূরা হুজুরাত : ১৩)
দুনিয়ার জীবনে মুত্তাকিদের সব কাজকর্মে যেমন আল্লাহর সহযোগিতা ও কল্যাণ মিলে, তদ্রুপ পরকালীন জীবনেও রয়েছে তাদের জন্য সুসংবাদ। কুরআনের ভাষায়, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করছে; তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।’ (সূরা ইউনুস : ৬৩-৬৪) মৃত্যু পরবর্তী জীবন থেকে শুরু হয় ভয়ানক জীবন। ধাপে ধাপে চলবে ভয়াবহতা। হাশরের ময়দান হবে মহাভীতির সময়। কিন্তু যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করেছিল, কবর থেকে হাশর পর্যন্ত কোনো ভীতিই তাদের পেরেশান করবে না। ফেরেশতারা তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সুখের নীড় জান্নাতে নিয়ে যাবে। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মহাভীতি তাদের পেরেশান করবে না। আর ফেরেশতারা তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে, এটাই তোমাদের সেই দিন, যার ওয়াদা তোমাদের দেয়া হয়েছিল।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৩)
পরকালে হাশরের মাঠের ভয়াবহতায় মানুষ অস্থির হয়ে যাবে। কেউ কারো উপকারে আসবে না। মানুষ ও জিন জাতির কোনো আশ্রয়দাতা থাকবে না। সেই দিন মহান প্রভু মুত্তাকিদের ডেকে তাঁর মেহমানরূপে সম্মানিত আসনে সমাসীন করবেন। কুরআনের ভাষায়, ‘যেদিন পরম করুণাময়ের কাছে মুত্তাকিদের সম্মানিত মেহমান রূপে সমবেত করবে।’ (সূরা মারইয়াম : ৮৫)
হাশরের ময়দানের ভয়াবহতায় উল্লেখযোগ্য একটি কঠিন স্থান হলো পুলসিরাত। যার দূরত্ব হবে ৫০ হাজার বছরের রাস্তা। যেখানে নেককার, পরহেজগার, মুত্তাকি ছাড়া কেউ পার হতে পারবে না। মুত্তাকিরা সেই পুলসিরাত মুহূর্তেই পার হয়ে অতি কাছে পাবে জান্নাত। যার প্রমাণ মিলে নিম্নের আয়াতে কারিমায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মুত্তাকিদের জন্য জান্নাত নিকটবর্তী করা হবে।’ (সূরা শুআরা : ৯০) মহান আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকিদের প্রতিদানস্বরূপ যে জান্নাত দেবেন, তার পরিচিতিও আমাদের শিখিয়েছেন। পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন, ‘স্থায়ী জান্নাতে যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। তারা যা চাইবে, তাদের জন্য তার মধ্যে তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকিদের প্রতিদান দেন।’ (সূরা নাহল : ৩১)

লেখক : আলেম ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement