২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পানাহার ও ইসলাম

-

‘তোমরা পরস্পর মিলেমিশে একসাথে খাবার গ্রহণ করো এবং আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করো। কেননা, তাতে তোমাদের জন্য বরকত-কল্যাণ নিহিত রয়েছে।’ (আবু দাউদ)
সবার একসাথে মিলে যেকোনো কাজ করা সভ্যতানির্ভর একটা ব্যাপার এবং তা উত্তম সামাজিকতার পরিচায়ক। মহানবী সা: এমনটি পছন্দ করতেন যে, বাড়ির সবাই মিলে কিংবা বন্ধুুবান্ধবদের সবাই মিলে যেন একসাথে খাবার গ্রহণ করে। পবিত্র কুরআনেও একাকী খাবার গ্রহণের চেয়ে একসাথে খাবার গ্রহণকে অগ্রগণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে এমন রহস্য লুকায়িত যে, এর দ্বারা একদিকে পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয়ে থাকে; অন্য দিকে তাতে, খাবার তেমন বেশি নষ্ট হয় না। কেউ একটু বেশি খায়, কেউ একটু কম; গড়ে সমান হয়ে যায়। প্রস্তুতকৃত সব আইটেমের কমবেশি সবার ভাগে পড়ে থাকে। এর দ্বারা ঘরের সবার মধ্যে, নিজে একটু কম খেয়েও অন্যকে শরিক করার বা অন্যকে প্রাধান্যদানের মনোভাব জাগ্রত হয়। বাড়ির মালিক বা প্রধানজনের ক্ষেত্রে পৃথক অবস্থান বা বিশেষ আয়োজনÑ যা কি না অহঙ্কারির পরিচায়ক, তা নিঃশেষ হয়ে যায় এবং বিনয় ও কাকুতি-মিনতিরূপ উত্তম গুণ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
একবার সাহাবারা রাসূল সা:কে প্রশ্ন করলেন, আমরা খাবার খাই কিন্তু পরিতৃপ্ত হই না? নবীজী সা: জবাবে বললেন, ‘সম্ভবত তোমরা পৃথক পৃথক আহার করে থাকো! সাহবারা বললেন, জি হ্যাঁ। নবীজী সা: বললেন, তোমরা একসাথে বসে খাবার গ্রহণ করো এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করো; তা হলে তাতে বরকত হবে।’
হজরত জাফর ইবন মুহাম্মদ রা: থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা যখন নিজ ভাইদের সাথে দস্তরখানায় একসাথে খেতে বসো, তখন সেই বৈঠক দীর্ঘায়িত করতে পারো। তার কারণ, তোমাদের জীবনের মধ্যে কেবল এটাই এমন এক সময় যার হিসাব তোমাদের দিতে হবে না।’
মহানবী সা: থেকে বর্ণিত, ‘ফেরেশতা তোমাদের প্রত্যেকের জন্য ওই সময় পর্যন্ত রহমতের দোয়া করতে থাকে, যে সময় পর্যন্ত তার সামনে দস্তরখানা বিছানো থাকে। এ দোয়া দস্তরখানা উঠানো পর্যন্ত চলতে থাকে।’
হজরত হাসান বসরি র. বলেন, ‘প্রত্যেক এমন খরচপাতি যা নিজের প্রয়োজনে বা নিজ পরিবারস্থদের প্রয়োজনে খরচ করা হয় তার হিসাব দিতে হবে; তবে নিজ ভাইবোন ও অন্যদের দাওয়াত করে যা খাওয়ানো হয়, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মহান আল্লাহ লজ্জিতবোধ করেন।’ খোরাসানের কোনো কোনো আলেমের সূত্রে এমনটি বর্ণিত আছে যে, তাঁরা নিজ ভাই ও স্বজনদের দাওয়াত করে, তাঁদের সামনে বড় দস্তরখানায় অনেক খাবার ও ফলফলাদি রেখে দিতেন। এ বিষয়ের কারণ সম্পর্কে তাঁদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা উত্তরে বলতেন, ‘আমাদের কাছে রাসূল সা: থেকে হাদিস পৌঁছেছে যে, মুসলমান ভাইয়েরা যখন আহারান্তে ওই দস্তরখানা থেকে হাত গুটিয়ে নেন, তখন আর অবশিষ্ট খাবারের বেলায় জবাবদিহিতা থাকে না।’ অর্থাৎ বাকি খাবার আমরা এবং আমাদের পরিবারস্থরা হিসাব দানের ভয় ব্যতীত, নির্ভয়ে খেয়ে নেই।
কোনো কোনো পূর্বসূরি থেকে এমন বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে যে, বান্দা যখন নিজ ভাইদের সাথে একত্রে আহার করে, তখন সেই খাবারের হিসাব দিতে হয় না। যে কারণে তাঁরা একত্রে দলবদ্ধ হয়ে খাবার গ্রহণ করতেন এবং একাকী খাবার গ্রহণে বিরত থাকতেন।
আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে, তিন প্রকারের খাবারের হিসাব হবে না। এক. সাহরির খাবার; দুই. ইফতারের খাবার; তিন. যে খাবার একত্রে খাওয়া হয় বা যে খাবারে কোনো ছোট শিশু শরিক থাকে। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে, শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে তা যাতে অনেকজন শরিক থাকে।
হেলান দিয়ে খাওয়া বা কোনো ওজর ব্যতীত শায়িত অবস্থায় খাওয়া ঠিক নয়। এটা চিকিৎসাশাস্ত্রের মতেও ক্ষতিকর। এতে খাবার যথাযথভাবে পাকস্থলিতে পৌঁছতে পারে না। তার চেয়ে বড় কথা হলো, এটা অহঙ্কারিদের পরিচায়ক। একটি বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম সা: কখনো হেলান দিয়ে খাবার গ্রহণ করতেন না। (বুখারি)
খাবার গ্রহণকালীন ‘বিসমিল্লাহ’্ ভুলে গেলে স্মরণ আসার সাথে সাথে ‘বিসমিল্লাহি আউয়্যালাহু ওয়া আখিরাহু’ পড়ে নেবে। (তিরমিজি)
লেখক : মুফতি, ইফা

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল