২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারী মানব সভ্যতার কারিগর

-

মহান আল্লাহর পক্ষ তাঁর প্রিয় বান্দার ওপর প্রথম যে ওহি নাজিল হয়েছিল তা হলো, পড়ো। এ নির্দেশ নারী-পুরুষ সবার জন্যই ছিল। এখানে মহিলা বাদ দিয়ে শুধু পুরুষদের জন্যই পড়াকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। মানব সভ্যতা বিকাশে নারী-পুরুষের অবদান সমানে সমান। মানব সভ্যতা বিকাশে নারীর অবদান ও কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কারণ মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। তাদের বাদ দিয়ে সামাজিক কাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন তথা মানবোন্নয়নের কোনোটিরই কল্পনা করা যায় না। তাই তাদের অবহেলা করার প্রশ্নই উঠে না। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘নারীর হাতে সভ্যতার দুর্গ।’ অতি কষ্টে তারা মানব জাতিকে ধারণ করেন।
সভ্যতার বিকাশে নারীর মর্যাদা কত যে বেশি তার পরিমাপ করা খুবই কঠিন। গোটা দুনিয়াকে তাদের মুখাপেক্ষী করা হয়েছে। পুরো মানবজাতি তাদের কাছে ঋণী। বেশ কিছু লোকের ধারণা, শিশু পালন একটা সামান্য ব্যাপার। একটা মূর্খ মেয়েলোক দিয়েও তা চলতে পারে। কিন্তু যারা মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান রাখেন, তারা অবশ্যই বুঝতে পারেন, মানব জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে এর চেয়ে গুরত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ আর নেই। দুনিয়ার যাবতীয় শিক্ষা ও সভ্যতা সম্পর্কিত কার্যাবলির ভেতরে কোনো কাজই শিশুদের যথার্থরূপে লালন পালনের মতো কঠিন দায়িত্বপূর্ণ নয়। মানবজাতির যত সব শিক্ষাগত ও চারিত্রিক সৌন্দর্যের বুনিয়াদ এই লালন পালনের ওপরই নির্ভরশীলÑ যা শৈশবে তারা মায়ের হাতে পেয়ে থাকে। মানুষের জ্ঞান ও চরিত্রগত পূর্ণত্বের মূল উৎস সেই শৈশবকাল, যখন সে স্রষ্টার নিয়োজিত ¯েœহময়ী শিক্ষকের হাতে মর্যাদা ও পূর্ণত্বের ভূমিকা অধ্যয়ন করে থাকে। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখতে পাবে, যথাযথ লালন পালন, মানুষের দৈহিক ও আত্মিক সংগঠন ও উন্নয়নের বিধান অবগতির ওপরে সর্বতোভাবে নির্ভরশীল। পরিশ্রম ও সতর্কতার দিক থেকে বিবেচনা করলেও দেখা যাবে, লালন পালন এমনি এক ব্যাপার যাতে চরম ধৈর্য্য ধারণ ও কষ্ট স্বীকারের প্রয়োজন রয়েছে।
জীবনের প্রথম পাঠশালা শুরু হয় মায়েদের মাধ্যমে। তাই মাকে উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে। প্রশ্নাকারে প্রথমেই বলা হয়েছিল মানুষকে প্রাথমিকভাবে কী কী বিষয়ের জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তারই সংক্ষিপ্ত উত্তর নি¤েœ দেয়া হলো। মানুষকে জানতে হবে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পরিচয় হলো তিনি বিশ্বস্রষ্টা, তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তিনি এক ও একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি একমাত্র ইলাহ অর্থাৎ একমাত্র হুকুমদাতা প্রভু বা মনিব, আইনদাতা ও বিধানদাতা, তিনি রাজাধিরাজ। গোটা সৃষ্টিজগতে তাঁরই রাজত্ব চলছে।
মানুষের সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক হলো তিনি মানুষের স্রষ্টা, মানুষ তাঁর সৃষ্টি। তিনি মালিক, মানুষ তাঁর গোলাম। তিনি রাব্বুল আলামিন হিসেবে সর্বদায় মানুষকে লালন-পালন করছেন। তিনি আসমান ও জমিনের রাজা, মানুষ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তাঁরই প্রজা। কারণ তাঁর রাজত্বের বাইরে যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। এখন বলুন, একজন নারী যদি এই উত্তরগুলো না জানেন, তবে তার শিশুকে তিনি কী শিক্ষা দেবেন।
আর একটি বিষয় ভালো করে মনে রাখা প্রয়োজন, ঈমানের অপর নাম জ্ঞান। যার জ্ঞান নেই তিনি পদে পদে ঈমানকে এমনভাবে বিসর্জন দেন যে, তিনি টেরই পান না। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের মায়েরা অগ্রগামী। তাই পুরুষের পাশাপাশি আমাদের মা-বোনদের ঈমানকে টিকিয়ে রাখার জন্য উল্লিখিত জ্ঞান ছাড়াও সর্বদা আল্লাহর অধিকারের সীমা সম্পর্কে জানতে হবে। এ জন্য আল কুরআনের দ্বারস্থ হতে হবে। কারণ আল কুরআনই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানব জাতির জ্ঞান আহরণের সর্বশেষ উৎস। এর বাইরে কোথাও পরিপূর্ণ জ্ঞান খোঁজে পাওয়া যাবে না। যা পাওয়া যাবে তা নিতান্তই আংশিক, অপরিপূর্ণ বা খুবই ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণ, পরিপক্ষ ও নির্ভুল জ্ঞান আল কুরআনেই রয়েছে। কুরআনকে সহজভাবে জানার জন্য আল হাদিস তথা রাসূল সা:-এর জীবন চরিতের সাহায্য নিতে হবে।
মানবতার মহান শিক্ষক রাসূল সা:-এর পাঠশালায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও জ্ঞান আহরণ করতেন। উরওয়া বিন যোবায়ের রা: তার খালা সম্পর্কে বলেন, ফারায়েজের ইলম, হালাল-হারামের মাসায়েল এবং কুরআনের ইলমের ক্ষেত্রে আয়েশা রা:-এর চেয়ে বড় আলেম আমি দেখিনি। উরওয়া আরো বলেন, কবিতা, সাহিত্য, চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে আয়েশার রা: চেয়ে বড় জ্ঞানী আমি দেখিনি। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০।
সুতরাং একটি সুস্থ ও তাওহিদের জ্ঞানসম্বলিত জাতি গঠনের জন্য মায়েদের উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : ব্যাংকার

 


আরো সংবাদ



premium cement