১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাসূল সা:-এর অনুসরণে রয়েছে কল্যাণ

-

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:। তাঁর কর্মে, কথায়, অনুভূতি-আবেগে, আচরণে এক মানবিক গুণ ও আধ্যাত্মিক অর্জনে তারই প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তিনি অদ্বিতীয়। দুনিয়ার কোনো মনীষীর গুণাবলি তাঁর সাথে তুলনীয় নয়। কি স্বামী, কি সংগঠক, কি সেনাপতি, কি সমাজপতি, কি মানুষ, কি নেতাÑ তাঁর জবাব কোথায়? তাঁর জীবনে এমন দৃষ্টান্ত নেই যা অনুজ্জ্বল, অন্যায়দুষ্ট, বেইনসাফি, স্বার্থপরতা এক ন্যায়পরায়ণতাহীন। এর কারণ তিনি আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ নবী। মানুষের অদ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ রূপ।
সবে যুদ্ধফেরত আহত সাহাবিরা যারা যুদ্ধের খবর শুনে, তখনই আবার যুদ্ধে যেতেন। জীবনের সুখ-ভোগ ত্যাগ করে কেন এই আগ্রহ? রাসূল সা:-এর সাহচর্য এমন মধুর ছিল যে তা সবার কাছে ছিল সবচেয়ে পছন্দের। তাঁর কথা, তাঁর আচরণ ও ব্যবহার মানুষকে সন্দেহাতীতভাবে আকৃষ্ট করত। তার বিনয়ী স্বভাব এবং ন্যায়নিষ্ঠ বিনম্র ব্যবহার ও আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস মানুষকে কাছে টানত। কোনো ইতিহাস নেই যে, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে কারো ওপর চড়াও হয়েছেন অথবা কাউকে গালাগাল করেছেন। খুব রাগ হলে তার মুখ লাল হয়ে যেত এবং তিনি সুন্দর ভাষায় কথা বলে তা প্রকাশ করতেন। এক বেদুইন তাঁর বিরুদ্ধে গণিমতের মাল বণ্টন নিয়ে অভিযোগ তুললে তিনি তাকে হাসিমুখে নিরস্ত্র করেন। তার উদারতা, তার আত্মসংযম, অপর দিকে কাছে টানার প্রবণতা তার শত্রুকেও বন্ধু বানিয়ে ফেলতেন।
নবী মুস্তফা সা:কে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য গুণ দ্বারা ভূষিত করেছেন। তাঁকে ইনসানে কামিল বানিয়েছেন। আখ্যায়িত করেছেন রাহমাতুল্লিল আলামিন বলে। নবী সা:কে ইনসানে কামিল বানিয়েছেন। আখ্যায়িত করেছেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলে। নবী সা:কে ‘সিরাজুম মুনিরা’ অর্থাৎ’ দীপ্তমান আলো, যা থেকে অসংখ্য আলো সৃষ্টি হতে পারে বলে অবহিত করেছেন। এ ছাড়া ‘খুলুকিন আজিম’ ও ‘উসওয়াতুন হাসানা’ অর্থাৎ যথাক্রমে সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী ও সুন্দরতম আদর্শের অধিকারী বলে সম্মানিত করেছেন।
নবী সা:-এর দর্জা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেনÑ ‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, ‘তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি তাঁর আয়াতগুলো তাদের কাছে তিলাওয়াত করেন। তাদেরকে পরিশোধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিল।’
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেনÑ ‘রাসূলের যে আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল।’ (৩/৮০)
আরো ইরশাদ করেছেনÑ ‘হে মুহাম্মদ সা: বলুন, যদি তোমরা আল্লা তায়ালার ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ভালো বাসবেন, মাফ করবেন তোমাদের যাবতীয় গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা অসীম দাতা ও দয়ালু।’ (৩-১১-৩১)
উপরে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নবী করীম সা:কে প্রদত্ত গুণ এবং পরে প্রদত্ত দু’টি আয়াত শরিফে আল্লাহ তায়ালা নবী সা:কে যেভাবে সম্মানিত করেছেন, তাতে ‘ইনসানে কামিল’ মূর্ত হয়ে উঠেছে এবং সাথে সাথে স্পষ্ট হয়েছে তার প্রিয় হাবিবকে আল্লাহ তায়ালা কতখানি মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।
মিরাজের রাত্রে মসজিদুল আকসায় নবীদের উপস্থিতিতে নামাজে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন নবী সা:। একই রাত্রে এক অভূতপূর্ব ঘটনায় নবী সা:কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সপ্তম আসমান পার হয়ে আরশে আজিমে। সেখানে আল্লাহর সাথে তাঁর দিদার ঘটেছিল। এ সৌভাগ্য দুনিয়ার মানুষের জন্য এক অনবদ্য অলৌকিক ঘটনা যা সমস্ত সৃষ্টি মুক বিষয়ে অবলোকন করেছিল।
‘দ্য হান্ড্রেড’ নামক পুস্তকে বিশ্বের ১০০ জন মনীষীর জীবন বৃত্তান্ত ও কার্যাবলি পর্যালোচনা করে শ্রেষ্ঠত্বের আসনটি প্রদান করা হয়েছে নবী সা:কে। লেখক মাইকেল হার্ট একজন অনুসলিম। তিনি দ্বিধা করেননি তার মূল্যায়নকে প্রচার করতে বিশ্বের মাঝে। উল্লেখ্য, আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনÑ ‘হে নবী আপনি বলুন, আমি বিশ্বের সব মানুষের জন্য নবী’ তারই প্রতিফলন ঘটেছে ‘দ্য হান্ড্রেড’ নামক পুস্তকে’ মিরাজ রজনিতে সপ্ত আসমান ভেদ করে আরশে আজিমে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার সাথে দিদার, যা ইতঃপূর্বে কোনোদিন ঘটেনি এবং পরেও ঘটবে না। বিনা প্রচেষ্টায় যে উম্মি নবীর উম্মতদের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বত্র তাঁর মহত্বে। আল্লাহ সত্য, আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম ইসলাম সত্য, আল্লাহর হাবিব রসূলে সা: সত্য যিনি আল্লাহ ও তাঁর তাবৎ সৃষ্ট সম্পর্কে পরম সত্যকে প্রকাশ করেছেন।
লেখক : সাবেক অতিরিক্ত সচিব


আরো সংবাদ



premium cement