১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জ্ঞান অর্জন করা ফরজ

-

সুন্দর এ ধরণীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকাত হচ্ছে মানুষ। মানুষের এই একক শ্রেষ্ঠত্ব লাভের কারণÑ মানুষের রয়েছে বিবেকবোধ, ন্যায়বোধ ও মনুষ্যত্ববোধ। আর মনুষ্যত্ববোধ অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা মানবতার চারিত্রিক উৎকর্ষ লাভের মাধ্যম ও আত্মোপলব্ধির চাবিকাঠি। আত্মবিকাশ ও সুকোমলবৃত্তির পরিস্ফুটন ও জীবনের সব সমস্যার দিকনির্দেশক। মানবজাতিকে নৈতিক শিক্ষার পবিত্র স্পর্শে একটি সুসভ্য ও সুশীল মানবিক গুণসম্পন্ন জাতিতে পরিণত করতে যে মহামানব শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রূপে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন তিনি হলেন আরবের নবী, মানবতার মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ সা:।
হজরত মুহাম্মদ সা: ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শবান শিক্ষক। কোনো শিক্ষক যদি তার আদর্শ খুঁজে পেতে চায়, তবে দারুল আরকামে শিক্ষাদানরত বিশ্বনবী সা:ই হবেন তার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। আর এ সম্পর্কে তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেনÑ ‘আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি, যাতে মানবজাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা প্রদান করতে পারি।’ (তিরমিজি)।
জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে ইসলামের নবী রাসূলে আকরাম সা: রেখে গেছেন অনুপম এক উৎসাহের বাণী। সমগ্র আরব ভূখণ্ড যখন জাহেলিয়াতের ঘোর অমানিশায় আচ্ছাদিত, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি দ্ব্যর্থকণ্ঠে ঘোষণা করলেনÑ ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ।’ (বায়হাকি : ১৬১৪)। এমনকি হেরা গুহায় ধ্যানরত নবী সা:-এর কাছে হজরত জিব্রাইল আ: সর্বপ্রথম যে আসমানি পয়গাম নিয়ে এসেছিলেন তা ছিলÑ ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে।’ কেননা পড়া ছাড়া কোনো জাতির সুপ্ত মেধার বিকাশ ঘটতে পারে না, পৌঁছতে পারে না উৎকর্ষতার চরম সোপানে। এ মর্মে পবিত্র কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছেÑ ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরা জুমার : ৯)।
শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে হজরত মুহাম্মদ সা: ঘোষণা করেছেন একের পর এক উৎসাহের বাণী। তিনি বলেন, ‘একজন এলেমহীন আবেদের চেয়ে একজন আলেম (জ্ঞানী) ব্যক্তির মর্যাদা তত বেশি, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নি¤œতম ব্যক্তি অপেক্ষা আমার মর্যাদা যত বেশি।’ (মেশকাত)।
জ্ঞান অন্বেষণের পথকে নবী সা: জান্নাতের পথ বলে ঘোষণা করেন। নবী করিম সা: বলেন, ‘আসমান ও জমিনে অবস্থানকারী সবাই এমনকি গভীর পানির মাছও জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য দোয়া করে।’ (মেশকাত)।
হজরত মুহাম্মদ সা: জ্ঞানচর্চার ব্যাপারে শুধু অনুপ্রেরণাই দেননি, বরং পরকালীন পুরস্কারের কথা বলে জ্ঞানচর্চার ব্যাপারে আমাদেরকে করে গেছেন প্রলুব্ধ। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেনÑ ‘যখন মানুষ মরে যায় তখন তার আমল ও সওয়াবের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমলের সওয়াব সব সময় অব্যাহত থাকে। যথাÑ ১. সদকায়ে জারিয়াহ, ২. এমন জ্ঞান, যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়, ৩. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)।
রাসূলে করিম সা: শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। আজো যদি কেউ তার শিক্ষার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায়, তবে তিনি সাফল্যের স্বর্ণশিখরে উপনীত হতে পারবেন। জ্ঞানসাধক হজরত মুহাম্মদ সা: শিক্ষার আলো দিয়ে একটি বর্বর, উগ্র ও অশিক্ষিত জাতিকে সুশিক্ষিত ও সুসভ্য জাতিতে রূপান্তরিত করে এমন এক আদর্শ সমাজ নির্মাণ করেছিলেন; যার সুফল সমাজের প্রতিটি স্তরে ফল্গুধারার মতো প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি তৎকালীন মুসলমানদের মনে জ্ঞানচর্চার যে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিলেন তা সত্যিই বিরল। এমনকি আব্বাসীয় শাসনামলে ও পরবর্তী মুসলমানেরা যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম শিখরে আরোহণ করেন, তার মূলেও ছিল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জারিকৃত জ্ঞান অন্বেষণের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement