১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুরআনের আলোকে ন্যায়বিচার ও সাক্ষ্যদান

-

কুরআন পাকে সব মুসলমানকে ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওপর অটল থাকতে এবং সত্য সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত দান করো, তাতে তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।’ একই বিষয়ে সূরা মা’য়েদার ৮ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার করো। এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।’
মা’আরেফুল কুরআনে উক্ত আয়াতের তফসির মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এভাবে আরো স্পষ্ট করেছেন : সত্য সাক্ষ্য দিতে ত্রুটি না করার জন্য কুরআন পাকে অনেক আয়াত রয়েছে। এক আয়াতে অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘সাক্ষ্য গোপন করো না। যে সাক্ষ্য গোপন করে, তার অন্তর পাপী।’ এতে প্রমাণিত হয়, সত্য সাক্ষ্য দেয়া অপরিহার্য কর্তব্য এবং সাক্ষ্য গোপন করা কঠোর গোনাহ।
কিন্তু যে বিষয়টি মানুষকে সত্য সাক্ষ্য দিতে বাধা দান করে, কুরআন পাক তার প্রতি লক্ষ্য রেখেছে। বিষয়টি এই যে, সাক্ষীকে বারবার আদালতে হাজিরা দিতে হয় এবং অনর্থক নানা ধরনের হয়রানিরও সম্মুখীন হতে হয়। ফলে সাধারণ লোক সাক্ষীর তালিকাভুক্ত হওয়াকে বিপদ বলে মনে করে। নিজের কাজ বারবার তো নষ্ট হয়ই, তদুপরি অর্থহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
আজকালকার আদালতে মোকদ্দমাগুলোর খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, অকুস্থলের সত্য সাক্ষী খুব কমই পাওয়া যায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বানোয়াট সাক্ষীর দ্বারা মামলা দাঁড় করানো হয়। ফলে শতকরা ৫-১০টি মামলা ন্যায় ও সুবিচার ভিত্তিক রায়ও হতে পারে না।
যদি সাক্ষীদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করা হতো এবং তাদের বারবার পেরেশান করা না হতো, তবে কুরআনি শিক্ষা অনুযায়ী কোনো সত্যবাদী লোক সাক্ষ্যদান থেকে বিরত থাকত না। তাছাড়া, মামলার তারিখ বারবার পড়তে থাকলে নিরাপদ সাক্ষীকে প্রতি তারিখে হাজিরা দিতে কষ্ট হয়ে যায়। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আইনের দীর্ঘসূত্রতা আমাদের আদালতগুলোতে এখনো বিরাজমান। এ ক্ষেত্রে, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে প্রচলিত সাদাসিধা বিচারপদ্ধতি একদিকে যেমন মোকদ্দমার প্রাচুর্য নেই, অন্য দিকে তেমনি সাক্ষীদের পক্ষে সাক্ষ্যদানও কষ্টকর নয়। সাক্ষ্যদানপদ্ধতি ও বিচারপদ্ধতিকে ত্রুটিমুক্ত করা কুরআনি শিক্ষা অনুাযয়ী গড়ে তোলা হলে এর বরকত দেখা যেতে পারে। কুরআন একদিকে ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত লোকদের ওপর সত্য সাক্ষ্যদান অপরিহার্য সাব্যস্ত করেছে এবং অপর দিকে সাক্ষীদের অকারণে কষ্ট না দিতে এবং যথসম্ভব কম সময়ে তার বক্তব্য নিয়ে ছেড়ে দিতে নির্দেশ জারি করেছে।
আদালতে সাক্ষ্যদান ছাড়াও মানুষের জীবনে আরো যেসব বিষয়ে সাক্ষ্যদান করা হয় তার মধ্যে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার নম্বর, সনদ, সার্টিফিকেট ও নির্বাচনে ভোটদান সবই সাক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় সাক্ষ্যদান (শাহদতা) শব্দটি আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণত যদি ডাক্তার কোনো রোগীকে সার্টিফিকেট দেয় যে, সে কর্তব্য পালনের যোগ্য নয় কিংবা চাকরি করার যোগ্য নয়। তবে এটাও একটি সাক্ষ্যদান। এতে বাস্তব অবস্থার কিছু খেলাপ করে লেখা হয় তবে তা মিথ্যা সাক্ষ্য হবে এবং কবিরা গোনাহ। এমনিভাবে পরীক্ষার্থীদের লিখিত খাতায় নম্বর দেয়াও সাক্ষ্যদান। যদি চাপ বা ইচ্ছাপূর্বক কিংবা শৈথিল্যভাবে কম বা বেশি নম্বর দেয়াও সাক্ষ্য দান। আর এটা মিথ্যা সাক্ষ্যের অন্তর্ভুুক্ত এবং হারাম বলে গণ্য হবে।
উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সনদ/সার্টিফিকেট বিতরণ বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া যে তারা সংশ্লিষ্ট কাজের পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছে। যদি সনদধারী ব্যক্তি এরূপ না হয়, তবে সনদ/সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরদাতা সবাই মিথ্যা সাক্ষ্যদানের অপরাধে অপরাধী হয়ে যাবে।
ঠিক এমনিভাবে গণতন্ত্র কায়েমে আইনসভা, কাউন্সিল/করপোরেশন ইত্যাদির নির্বাচনে ভোট দেয়া সাক্ষ্যদানের অন্তর্ভুক্ত। এতে ভোটদাতার পক্ষ থেকে সাক্ষ্য দেয়া হয় যে, আমার মতে এ ব্যক্তি যোগ্যতা, সততা ও বিশ্বস্ততার দিক দিয়ে জাতির প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য।
দেখা যায় যে, লেখাপড়া জানা ধার্মিক মুসলমান ও অযোগ্য প্রার্থীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে চিন্তা করে দেখে না। সে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে আল্লাহর অভিশাপ ও শাস্তিযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই ভোটদানের পূর্বে প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কাজের যোগ্যতা রাখে কিনা তা সঠিকভাবে যাচাই করে দেখা প্রত্যেকটি মুসলিম সাক্ষ্যদাতার অবশ্য কর্তব্য। শৈথিল্য ও ঔদাসিন্যবশতঃ অকারণে বিরাট পাপের ভাগী হওয়া উচিত নয়। কুরআনের ভাষায় এ সম্পর্কিত নির্দেশ হলো : ‘যে ব্যক্তি উত্তম ও সত্য সুপারিশ করবে, যার জন্য সুপারিশ করে তাকে তার পূর্ণ থেকে অংশ দেয়া হবে এবং যে ব্যক্তি মন্দ ও মিথ্যা সুপারিশ করবে সে তার মন্দ কর্মের অংশ পাবে। এর ফল এই যে, এ প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে তার কর্মজীবনে যেসব ভ্রান্ত ও অবৈধ কাজ করবে, তার পাপ সাক্ষ্যদাতাও বহন করবে।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


আরো সংবাদ



premium cement
কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান

সকল