১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অজ্ঞানতা ধ্বংসের পথে টানে

-


‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার মতো ফিতনা আসার আগেই দ্রুত সৎ আমল করো। যখন ব্যক্তি ভোর করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায় আর ভোর করবে কাফির অবস্থায়। দুনিয়ার সামান্য বিনিময়ে মানুষ তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে।’ হাদিস গ্রন্থ মুসলিমে রাসূল সা:-এর উপদেশ বা নির্দেশমূলক এই সহিহ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু)। আজকের দিনে মনোযোগের সাথে যে দিকেই তাকাই, আমরা দেখতে পাবো এই ফিতনাই যেন ঘিরে ফেলেছে চারদিক থেকে সংসার, সমাজ, দেশ এবং বিশ্বময় আমাদের।
নিম্নগামী হচ্ছে মানুষের চিন্তা-চেতনা। যুগে যুগে মানুষ এভাবেই বিপথে নেমে নিজেদের করেছে বিপথগামী, জাহিল (অন্ধকারাচ্ছন্ন)। পৃথিবীর যে প্রান্তেই মানুষ এমন অন্ধকারের দেয়ালে নিজেদের ঢেকে নিয়েছিল, সেখানেই আল্লাহ তায়ালা এক বা একাধিক নবী বা সত্যের পথে আহ্বানকারী পাঠিয়েছিলেন। মানুষ সেই সত্যের ডাকে সাড়া দিয়ে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করতে পেরেছিল। আর যারা জাহিলিয়াতের কদর্য অবগাহনে নিজেদের অন্তর কয়লা করে ফেলেছিল, আল্লাহ তায়ালার মনোনীত পথকে অপছন্দ করে বিরোধিতা করেছিল, নিজেদের নফসের অনুস্মরণ করে বানিয়ে নিয়েছিল খামখেয়ালি নিয়মনীতি, তাদের জন্য নেমে এসেছিল দুর্ভোগ আজাব।
আলহামদুলিল্লাহ; ইসলাম এমন একটি পরিপুর্ণ জীবনবিধান, যেখানে কোনো ঘাটতি নেই। যেখানে বাড়াবাড়ি কিংবা সঙ্কীর্ণতার কোনো জায়গাই নেই। এই এমনই এক পূর্ণাঙ্গ দ্বীন যা শুধু নির্দিষ্ট কোনো জায়গা বা জাতির জন্য নয়, বরং সর্ব যুগে সর্ব জাতি সর্ব স্থানের জন্য প্রযোজ্য। যে বিধান জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবন, পরিবারিক, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ বিশ্বে পূর্ণ শান্তি এবং দুনিয়া-আখিরাতের সফলতার উচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত হতে পারে মানুষ। শুধু প্রয়োজন ইসলামের সঠিক জ্ঞানার্জন এবং তা অনুস্মরণের।
মুসলিমদের রয়েছে দু’টি অর্থবহ আনন্দময় পবিত্র উৎসব। যে উৎসবে আছে সব রকম শালীন আনন্দ, আদর্শ বিনোদন, আছে প্রফুল্লময় উদারতা, পূর্ণ সৌহার্দ্যতা এবং শ্রদ্ধাময় ভালোবাসা। আর আছে খুব উন্নত শিক্ষা; সাম্যের শিক্ষা, ভালোবাসার শিক্ষা। যা আমাদের চিন্তা-চেতনাকে উন্নত করে, সমৃদ্ধ করে। পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে সুখ এবং প্রশান্তির বারতা বয়ে আনে। এটা আজ আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমরা নিজেদের সুন্দর, পবিত্র, আদর্শময় উৎসবকে এক পাশে রেখে অন্য দেশ এবং অনেক ক্ষেত্রে অন্য ধর্মের রীতিনীতি, কৃষ্টির অনুসরণ অনুকরণ করে চলেছি। তারা যা করছে আমরাও তাই করছি। উচিত-অনুচিত, বৈধ-অবৈধ, বিদাত কিংবা কুফর কিছুকেই যেন তোয়াক্কা করার বালাই নেই। পোষা প্রাণীটির মতো দেখছি, শিখছি আর অনুকরণ করছি। কেন করছি, কী করছি তাও জানি না। নিজের অস্তিত্ব বিবেক, বিচার-বিবেচনা বোধকে অন্যায়, অনুচিত আর স্বেচ্ছাচারিতার অন্ধকারে চাপা দিয়ে ডুবে যাচ্ছি গহীন অতলে। ভিনদেশী কৃষ্টির সাথে পরিচিতির নাম করে বিভিন্ন মিডিয়ায় কিছু লোক নিজেদের সেলিব্রেটি করার মানসে কিংবা নিজের বিকৃত রুচি, চেতনার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অল্পবয়সী কোমলমতি কৈশোর যৌবনে পদার্পিতদের মন ও মগজে বসিয়ে দিচ্ছে অপসংস্কৃতির চর্চা। তাদের দিয়ে প্রচলন করা হচ্ছে বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের নিজেদের উদ্যোগে। কিছুদিন আগেও যে সব (ধার করা কু) উৎসব এবং বিকৃত রুচির আনন্দ আমাদের সমাজে ছিল না, আজ সেগুলোকে জোর করে বলা হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। দুনিয়ার যত বার্ষিকী আর অপসংস্কৃতি আছে, তা নিয়ে আমাদের বড় বেশি ব্যস্ততা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এসব ধার করা উৎসব আমরা কেন করব, এসব করে নিজেদের আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি, এসবের পরিণতি কি সেটা উপলব্ধি করা বা ভেবে দেখারও সময় যেন আমাদের হচ্ছে না। ইংরেজি বছরের শেষ মাস থেকে শুরু হয়ে যায়; তারপর এই দিবস, সেই দিবস করে চলতেই থাকে নিজেদের এবং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন উৎসবের। অন্য দেশের, অন্য ধর্মের, অন্য কৃষ্টির অনুসরণ ও উৎসব করে আমরা বলছি, আমাদের সংস্কৃতি, হাজার বছরের ঐতিহ্য কিংবা প্রাণের উৎসব। ন্যায় এবং সত্যের কাছে এসব চেতনা মোহ যে কতটা হাস্যকর সেই বোধটুকু আমাদের হয় না। আমরা বুঝতেই পারি না, এসব চেতনার উৎস আসলে আসে আমাদের নীচুমানের হীনম্মন্যতা থেকে। বিশিষ্ট সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত সেই হাদিসটির বর্ণনাচিত্রই যেন আজ আমাদের চার পাশে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পরবর্তী উম্মতের রাস্তা অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে। তারা যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে তোমরা অবশ্যই তাদের অনুসরণ করবে।’ লক্ষ করলে বোঝা যায়, এ গুইসাপের গর্তে প্রবেশের উদাহরণটিতে কঠিন অনুসরণের কথা বোঝানো হয়েছে। যা ছিল আমাদের বিপথগামিতার সতর্কবাণী। এখনই সময় নিজেকে পরিশুদ্ধ করার, পরিবার এবং সমাজকে বিকৃত রুচি অপসংস্কৃতির অন্ধকার থেকে বাঁচানোর। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দিন, সঠিক পথে চালিত করুন। হিফাজত করুন সব রকম অজ্ঞতা, কুশিক্ষা, অপসংস্কৃতি এবং সব অন্ধকার থেকে।
লেখক : গবেষক, লস এঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত

সকল