২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা

-


প্রাথমিক শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক গঠনে প্রাথমিক শিক্ষার প্রভাব অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে জীবনের শিক্ষায় হাতেখড়ির এ স্তরটি যদি যথোপযুক্ত না হয়, কল্যাণকর না হয়, তাহলে তার ফল ভোগ করতে হবে ভবিষ্যৎ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা শুধু নয় বরং ব্যাপক অর্থে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা নেতৃত্ব দিবে নিজের জীবন থেকে শুরু করে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বকে। সুতরাং তাদের জীবনের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া অতিব জরুরি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলোÑ আমাদের সমাজের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার দুরবস্থা। যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলিকভাবে চারটি বিষয় জড়িত। যথা: (১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার পরিবেশ, (২) শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী-কর্মকর্তা, (৩) শিক্ষা কারিকুলাম, (৪) পাঠ্যবই ও পাঠ্যসূচি। মৌলিক এ বিষয়গুলো শিক্ষার প্রত্যেক স্তরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানের কোনো একটিতে ত্রুটি বা দুর্বলতা থাকলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাই ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়ে, ফলে তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা তার উদাহরণ বিশ্বের বিভিন্ন সমাজব্যবস্থাপনায় এবং আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে প্রত্যক্ষ করি। উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিটিও তাই সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ, অপরাধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে দ্বীধাহীন ও সঙ্কোচহীনভাবে। বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, হানাহানি, ধ্বংস, রাহাজানি, বঞ্চনা, কোন্দল, হত্যা, গুম ও খুন তাই হয়ে উঠেছে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসবের পেছনে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব দলমত নির্বিশেষে স্বীকারযোগ্য। সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। বরং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতির একটি দিক নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি এবং সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উদ্দেশ্য।
আমাদের দেশে বেসরকারি ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা সংস্থার মালিকানাধীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারতা লক্ষ্য করার মতো। প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসব মালিকানাধীন শিক্ষাব্যবস্থা বরাবরের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো কৌশলে ব্যবসায় করে যাচ্ছে। সেখানে শিক্ষা মূল উদ্দেশ্য নয় বরং ব্যবসায়ই আসল।
শিক্ষার এই যে শ্রেণিবিন্যাস, এত ভিন্নতাÑ এগুলো শিশুদের শুধু স্কুলবিমুখ করতে সাহায্য করছে না বরং শিক্ষাভীতি (ঊফঁঢ়যড়নরধ) তাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করছে যে, শিক্ষাকে উপভোগ না করে দূরে থাকার দুর্বুদ্ধি এ ছোট বয়সেই বের করা নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে পড়েছে ব্যাপারগুলো। অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। এসবের প্রতিকার করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ছে।
শহর থেকে শহরতলি, এমন কি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও বেসরকারি ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা বিভিন্ন সংস্থার প্রাথমিক থেকে শুরু করে শিক্ষার পরবর্তী ধাপগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। অবশ্যই একটি দেশের জন্য এটি ভালো। কিন্তু কর্তাব্যক্তিদের নিশ্চিত করা দরকার যে, এসব প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থেই শিক্ষা ও জাতির কল্যাণার্থে হচ্ছে। কল্যাণের স্লোগানে ব্যবসা যেন উদ্দেশ্য না হয়। তাহলে পুরো জাতিই প্রতারিত হবে।
উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্মুক্ত চিন্তার পরিবেশে কল্যাণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক করার নিমিত্তে সংস্কার করছে নিয়মিত। সেখানের মূল উদ্দেশ্য হবেÑ উন্নত মানব চরিত্র গঠন ও মানব কল্যাণ। কোনো শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য যদি কল্যাণার্থে ভিন্ন হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর। জাতি তখন সুস্থ-স্বাভাবিকের পরিবর্তে কৌশলী, স্বার্থপর ও লোভী নাগরিক লাভ করবে, যা কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের জন্য কখনো কল্যাণকর হবে না। সুতরাং যারা এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তারা যদি একটু সচেতন হন এবং যাদের ওপর এসবের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রয়েছে তারা যদি উভয়েই তাদের কর্মের ব্যাপারে সতর্ক হন তাহলে এ পরিস্থিতি থেকে পুরো জাতি মুক্তি পেতে পারে।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

 


আরো সংবাদ



premium cement