১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিরাজের তাৎপর্য

-

মহানবী হজরত মুহামদ সা:-এর জীবনে সংঘটিত সর্বাধিক আলোচিত ও বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মধ্যে মিরাজ অন্যতম। সূরা বনি ইসরাইলে একে ‘ইসরা’ বা রাত্রিকালীন ভ্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সূরা নজমেও এর বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়া হাদিস ও জীবনচরিত গ্রন্থাবলিতে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বিপুল সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। কাজেই মিরাজ বা ইসরা অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমাণিত একটি বিষয়। আল্লাহ যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে তাঁর বান্দাহকে (মহানবী সা:-কে) রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন এবং তাঁকে নিজের কিছু নিদর্শন পর্যবেণ করিয়েছেন অন্তত এতটুকু কথা দ্বিধাহীন চিত্তে নিঃসঙ্কোচে মেনে নেয়া এবং বিশ্বাস করা পবিত্র কুরআন ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাসের অনিবার্য দাবি।
মূল ঘটনা : উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রা:-এর ইন্তেকালের পর এবং আকাবার শপথের আগে মিরাজের ঘটনা ঘটে। সুনির্দিষ্ট সালের ব্যাপারে কিছুটা মতভেদ থাকলেও ঘটনাটি হিজরতের এক বছর আগে রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে (২৬ তারিখ দিবাগত রাতে) সংঘটিত হয়েছিল। এ ব্যাপারে বেশির ভাগ ইমাম ও ঐতিহাসিকেরা একমত। এ মহান রাতে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহ ও রাসূলকে তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে নেয়ার অলৌকিক ব্যবস্থা করলেন, তাকে বেহেশত-দোজখসহ অসংখ্য নিদর্শন দেখালেন, তাঁর সাথে একান্তে কথা বললেন, তাঁর অন্তর নূর, প্রজ্ঞা ও হিকমতে ভরে দিলেন, মানবতার কল্যাণের নিমিত্তে তাঁকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত হাদিয়া প্রদান করলেন।
ইসরার বিবরণ : মিরাজের ঘটনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন হজরত জিব্রাইল আ: ও মিকাইল আ:। তারা ওই মহান রাতে উম্মেহানির ঘরে গভীর ঘুমে নিদ্রিত মহানবী সা:-কে পবিত্র কাবা চত্বরে নিয়ে গেলেন। সেখানে তারা মহানবী সা:-কে মহাভ্রমণের উপযোগী করার ল্েয আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ‘সিনা চাক’ করলেন। এরপর তারা তাঁকে বোরাক নামক দ্রুতগামী বাহনে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে গেলেন। সেখানে মহানবী সা: অনেক নবীর নামাজের জামাতে ইমামতি করলেন। সবাইকে সালাম করে এবার তিনি বোরাকে বা বিশেষ চলমান সিঁড়িতে আরোহণ করে বায়তুল মামুরসহ (ফেরেশতাদের কিবলা) অনেক কুদরত ও নিদর্শন দেখে সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হলেন। মহান আল্লাহ যা বলার তা তাঁর বান্দাহকে বললেন, যা দেখার তা দেখালেন, যা দেয়ার তা দিলেন। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোচ্চ সম্মান, আল্লাহর পরম ভালোবাসা, প্রভুর জন্য চরম ত্যাগের অনুভূতি, হিজরতের পর একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের হিম্মত ও যোগ্যতা, বান্দাহদের কল্যাণার্থে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং উম্মতে মুহাম্মদির জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ করুণাসংবলিত বাণী সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত নিয়ে মহানবী সা: আল্লাহর নির্ধারিত উপায়ে সেই মহান রাতেই ফিরে এলেন এ পৃথিবীতে।
মিরাজের পর্যালোচনা : মিরাজ আত্মিক না শারীরিক? এ বিষয়ে সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতের বাচনভঙ্গি পর্যালোচনা করলে এবং বেশ কিছু হাদিস নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করলে খুব সহজেই সুস্পষ্ট হয় আকাবার শপথের আগের ইসরা ছিল শারীরিক। যারা মিরাজকে আকি বলেন, তাদের জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলা যায়; এ ঐতিহাসিক ইসরার (রাত্রিকালীন ভ্রমণ) পাশাপাশি রাসূল সা:-এর জন্য একাধিক আত্মিক ভ্রমণ বিচিত্র কিছু নয়। বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে ‘সুবহানা’ শব্দের মধ্যে যে বিস্ময় রয়েছে তা-ই মিরাজ শারীরিক হওয়ার কুরআনি যুক্তি। কারণ স্বপ্নের ভ্রমণের মধ্যে তেমন কোনো কৃতিত্ব বা বিস্ময় নেই। তা ছাড়া বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে এ ধরনের একটি বিস্ময়কর ভ্রমণ একেবারে অবিশ্বাস্য করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব যুক্তির পরও মৌলিক সত্য হলো সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, যিনি চন্দ্র, সূর্যসহ মহাবিশ্বের সব কিছু পরিচালনা করেন, সবার জন্য বিধান রচনা করেন, যিনি সব কিছুর উন্নতি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করেন, যিনি সর্বময় মতার অধিকারী, তিনি তার বান্দাহকে একটি বিস্ময়কর ভ্রমণ করাবেন, গায়েবের কিছু বিষয় দিব্যদৃষ্টিতে পর্যবেণ করাবেন এটা সেই মহান সত্তার জন্য খুবই সহজ একটি কাজ। হজরত আবুবকর রা: এই যুক্তিতেই শোনামাত্র বিনা বাক্যব্যয়ে মিরাজকে বিশ্বাস করে ‘সিদ্দিকে আকবর’ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। যিনি আল্লাহকে সর্বশক্তিমান ইলাহ ও রব মানবেন এবং হজরত মুহাম্মদ সা:-কে রাসূল বলে মানবেন তার কাছে আখিরাত, বেহেশত, দোজখ, ফেরেশতা প্রভৃতি অদৃশ্য বিশ্বাসের মতোই মিরাজও একটি বিশ্বাস। অদেখা বিষয়গুলো যেমন আমরা রাসূল সা:-কে সত্যবাদী মেনে নিয়ে বিশ্বাস করেছি, তেমনি মিরাজকেও বিশ্বাস করেছি। রাসূল সা:-কে আল্লাহর নবী মানার কারণেই আমরা কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে বিশ্বাস করছি। আর সেই কিতাব এবং সে কিতাব বাহকের হাদিসে মিরাজের সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে। তাই মিরাজে বিশ্বাস করা কুরআন ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাসেরই অনিবার্য দাবি। একটি প্রশ্ন কেবল থাকতে পারে, তা হলো মহানবী তাঁর প্রভুকে কতটুকু দেখেছেন, তাঁর কতটা কাছাকাছি হয়েছেন। সূরা নজমের আলোচনায় বোঝা যায় মহানবী সা: হজরত জিবরাইল আ:-কে তাঁর আসল সুরতে দেখেছেন। মহান আল্লাহর কতটা কাছাকাছি তিনি হয়েছেন এ বিষয়ে খুব ঘাঁটাঘাঁটি না করে সহজ সরল ঈমান পোষণ করা জরুরি। আর তা হলো সসীম অসীমকে যতটা কাছ থেকে যতটুকু দেখতে পারে এবং মহান আল্লাহ যা কিছু দেখার সুযোগ দিয়েছেন মহানবী সা: তা-ই দেখেছেন। সূরা বনি ইসরাইলে এ সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র তিনি যিনি এক রাতে তার বান্দাহকে মসজিদে হারাম থেকে দূরবর্তী সেই মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, যার চারপাশকে তিনি বরকত দান করেছেন; যেন তাকে নিজের কিছু নিদর্শন পর্যবেণ করাতে পারেন। প্রকৃতপে তিনিই সব কিছু দেখেন এবং শোনেন।’ (বনি ইসরাইল-১) পবিত্র এ আয়াতে বর্ণিত উদ্দেশ্যের সবটুকুই সফল হয়েছিল মহানবী সা:-এর মিরাজের মাধ্যমে।
মিরাজের শিা : মিরাজ মহান আল্লাহর অপার মহিমা ও কুদরতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মিরাজ রাসূলুল্লাহ সা:-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও উচ্চতম মর্যাদার স্যা বহন করে। মিরাজেও রাসূল সা: আমাদের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। রাসূল সা:-এর এ উদারতা আমাদের তাঁর ভালোবাসায় উজ্জীবিত করে। মিরাজ মহাকাশ গবেষণায় এক নবদিগন্ত উন্মোচিত করে। মিরাজের ঘটনার বিবরণসংবলিত সূরা বনি ইসরাইলের তৃতীয় ও চতুর্থ রুকুতে বর্ণিত ১৪ দফার শিা ও মিরাজ-উত্তর রাসূল সা:-এর কর্মকৌশল আমাদের একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেরণা জোগায়। মিরাজের সর্বোৎকৃষ্ট দান হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। নামাজের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। নামাজের মাধ্যমে চরিত্র সংশোধিত হয় এবং যথাযথভাবে নামাজ কায়েমের মাধ্যমে একটি ইসলামী সমাজের ভিত্তি রচিত হয়। তাই নামাজের ব্যাপারে সব গাফিলতি ঝেড়ে ফেলে নামাজে নিষ্ঠাবান হওয়া মিরাজের গুরুত্বপূর্ণ শিা।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল