২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিতব্যয়িতা আল্লাহর পছন্দ

-

মানুষকে মিতব্যয়ী হতে উৎসাহিত করতে প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। ১৯২৪ সালে মিলানে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেস গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন শুরু হয়।
মিতব্যয় মানে হলো- ব্যয়ের েেত্র সংযম বা আয় বুঝে ব্যয়। ‘ব্যয়ের েেত্র মধ্যমপন্থা অবলম্বন’ও মিতব্যয়িতার অর্থ। ইসলাম অপব্যয় এবং কৃপণতার ব্যাপারে সতর্ক করে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছে বারবার। কৃপণতা ও অপব্যয় কোনোটিই জায়েজ নেই ইসলামে। দীর্ঘ দিন মিতব্যয়িতা দিবস পালিত হয়ে এলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ সম্পদ জমা করতে গিয়ে কৃপণতা করছেন। কেউ বা বিলাসবহুল জীবন গড়তে গিয়ে অপচয় করছেন হাজারো টন খাবার।
জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়। এ অপচয়ের তির পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি ডলার। যা আমাদের বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখ কোটি টাকা। অথচ বিশ্বের বহুসংখ্যক মানুষের এখনো নিয়মিত তিন বেলা খাবার জোটে না। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি-বিষয়ক কৌশলগত পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসেছে- বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ এখনো ুধার্ত থাকে। অর্থাৎ, মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ খাদ্য নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। সরকার ও জাতিসঙ্ঘের খাদ্য কর্মসূচির এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। অথচ হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ টাকা কেজি দরের চাল অবস্থাপন্নদের ঘরে উঠছে। প্রতিবেদনের অন্যতম গবেষক আয়ারল্যান্ডের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক বলেন, অপুষ্টির কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের জনগণের উৎপাদনশীলতা কমছে, যার আর্থিক তি বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি। বিশ্বে প্রতিদিন ১৭ কোটি মানুষ ুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। (দৈনিক ইনকিলাব ৩১ অক্টোবর ২০১৬)
ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার জীবন দর্শন ইসলাম সব সময়ই তার অনুসারীদের মিতব্যয়ী হতে নির্দেশ দিয়েছে। মধ্যমপন্থা শুধু ব্যয়ের েেত্রই নয়, বরং কথাবার্তা, হাঁটা চলার েেত্রও মধ্যমপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো।’ (সূরা লুকমান : ১৯) প্রয়োজনীয় খরচ করতে, খাবার খেতে নিষেধ নেই। কিন্তু অপ্রয়োজনে খরচ করা পবিত্র কুরআনুল কারিমে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আরাফ : ৩২) অপব্যয়কারীকে পবিত্র কুরআনুল কারিমে শয়তানের ভাই বলেও অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৭) প্রয়োজন অতিরিক্ত জিনিসও মিতব্যয়িতার অংশ নয়, বরং শয়তানের অংশীদার। যার প্রমাণ মেলে নিম্নের হাদিস থেকে। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘কারো ঘরে একটি বিছানা তার জন্য, অন্যটি তার স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানদের জন্য এবং চতুর্থটি শয়তানের জন্য।’ (মুসলিম)
যেহেতু বিলাসিতার কোনো শেষ নেই, তাই ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির জীবনযাত্রার প্রতি তাকালে কেউই নিজের আয় দিয়ে তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে সম হবেন না। তার আয় অভাব ও চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত মনে হবে। পৃথিবীর সমুদয় সম্পদের দ্বিগুণও তার অভাব পূরণ করতে পারবে না। ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকা চাহিদাই তার জীবনের হতাশা ও উদ্বিগ্নতার কারণ হবে। হজরত আবদুুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দুনিয়াতে এমনভাবে জীবনযাপন করো যেন তুমি বিদেশী অথবা পথিক।’ (সহিহ বোখারি)
পবিত্র কুরআনুল কারিমে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দেশ জারি করে ইরশাদ হয়েছে। রাসূলে কারিম সা:ও অপব্যয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ সা: হজরত সাদকে রা: অজুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বললেন, ‘হে সা‘দ! অপচয় করছ কেন?’ হজরত সাদ রা: বললেন, ‘ওজুতে কি অপচয় হয়?’ নবীজি সা: বললেন, ‘হ্যাঁ। প্রবাহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো তা অপচয়’। (সহিহ ইবনে মাজাহ)
অপচয় এবং কৃপণতা কোনোটিই অনুমোদিত নয় ইসলামে। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদের নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তো তারাই যারা অপব্যয়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মধ্যবর্তী।’ (সূরা ফুরকান : ৬৭)
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement