১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মদিনা সনদ

-

এই সনদ আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা: কর্তৃক বিশ্বাসী, কুরাইশ মুসলমান ও ইয়াসরিবের মুসলমান এবং তাদের যারা অনুসরণ করেন, যারা তাদের সাথে যুক্ত রয়েছেন ও যারা জিহাদে তাদের সঙ্গীÑ এসবের মধ্যে সম্পাদিত হলো * তারা একই গোষ্ঠীভুক্ত এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র। * কুরাইশ মুহাজিররা পূর্বপ্রচলিত প্রথামাফিক যৌথভাবে খুন-খেসারত (দিয়্যত) প্রদান করবে এবং পারস্পরিক সমঝোতা, সততা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে তাদের বন্দীদের বন্দিত্ব মোচন করে নেবে। * বনু ‘আউফ পূর্বপ্রচলিত প্রথামাফিক সম্মিলিতভাবে অতীতের রক্তপণ পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক উপগোত্র (তাইফাহ) তাদের বন্দীদের সততা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মুক্ত করে নেবে। * বনু হারিস, বনু সাইদাহ, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর বিন আউ, বনু নাবিত, বনু আউস প্রভৃতিও পূর্বপ্রচলিত প্রথামাফিক যৌথভাবে অতীতের রক্তপণ পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক উপগোত্র তাদের বন্দীদের সততা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মুক্ত করে নেবে। * বিশ্বাসীরা, তাদের মধ্যে যদি কেউ ঋণী থাকে, তাকে পরিত্যাগ করবে না; বরং মুক্তিপণ, খুন-খেসারত ইত্যাদি েেত্র তাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে সাহায্য করবে। * একজন বিশ্বাসী অপর একজন বিশ্বাসীর বিনা অনুমতিতে তার কোনো আশ্রিত ব্যক্তির সাথে কোনোরূপ মৈত্রীচুক্তি (হালিফ) সম্পাদন করতে পারবে না। * আল্লাহর ভয়ে ভীত বিশ্বাসীদের মধ্য থেকে যদি কেউ কোনো অবৈধ কাজ করে বা অন্যায় কাজ করে অথবা বিশ্বাসঘাতকতা করে কিংবা শত্রুতামূলক ও দুর্নীতিমূলক কাজে লিপ্ত হয়, তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থাগ্রহণ করবেÑ আপন সন্তান হলেও এ ব্যাপারে তাকে মা করা যাবে না। * একজন বিশ্বাসী কোনো অবিশ্বাসীর স্বার্থে কোনো বিশ্বাসীকে হত্যা করতে পারবে না এবং কোনো বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে কোনো অবিশ্বাসীকে সাহায্য করতে পারবে না। * আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তা (জিম্মা) একক। প্রতিবেশীকে নিরাপত্তা প্রদান (ইউজির) করা তাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। বিশ্বাসীরা অন্যান্য জনগোষ্ঠী বাদে পরস্পরের প্রতিপোষক। * আমাদের অনুগামী যেকোনো ইহুদি যতদিন পর্যন্ত কোনো রূপ তিসাধন অথবা অন্য লোকদের সাহায্য প্রদান করবে না, ততদিন পর্যন্ত অব্যাহতভাবে সাহায্য ও সমর্থন পেতে থাকবে। * বিশ্বাসীদের শান্তি (সলম) অভিন্ন; সমতা ও ন্যায়বিচার রা করে আল্লাহর পথে জিহাদে ঐক্যবদ্ধভাবে অবতীর্ণ হতে হবে। কোনো বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীদের বাদ দিয়ে কোনোরূপ শান্তি স্থাপন করতে পারবে না। * প্রতিটি অভিযানে পারস্পরিক সমমর্মিতা থাকতে হবে। * আল্লাহর পথে কোনো ব্যক্তি যদি প্রাণ দেয়, তবে বিশ্বাসীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। আল্লাহ-ভীরু বিশ্বাসীরা শ্রেষ্ঠ ও নির্ভুল পথে চলে। * কোনো মুশরিক কুরাইশকে আশ্রয় দেবে না এবং তাদের প অবলম্বন করে কোনো বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে মধ্যস্থতা করবে না। * কোনো বিশ্বাসীকে অন্যায়ভাবে কেউ যদি খুন করে এবং তা স্যা-প্রমাণ দ্বারা সপ্রমাণ হয়, তবে খুনিকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়া যাবে, অবশ্য যদি নিহত ব্যক্তির প্রতিনিধি খুন-খেসারত পেয়ে খুশি থাকে, তবে সেটা অন্য কথা। এ েেত্র বিশ্বাসীগণকে সম্পূর্ণভাবে খুনির বিপে থাকতে হবে। * এ সনদের প্রতি যারা সম্মতি দান করে এবং যারা আল্লাহ ও শেষ বিচার দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে কোনোরূপ সাহায্য করতে পারবে না কিংবা আশ্রয় দিতে পারবে না। যদি কেউ তাকে সাহায্য করে অথবা আশ্রয় দান করে, তবে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর গজব এবং রোজ হাশরে সে আল্লাহর শাস্তিতে নিপতিত হবে। কোনো প্রকার তিপূরণে ওই অপরাধ খণ্ডিত হবে না। * তোমাদের ভেতরে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য হলে তা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে পেশ করবে। * বিশ্বাসীদের সাথে ইহুদিরাও যুদ্ধের ব্যয় বহন করবে। * বনু আউফ গোত্রীয় ইহুদি ও বিশ্বাসীরা একই গোষ্ঠীভুক্ত। ইহুদিদের জন্য তাদের ধর্ম, মুসলমানদের জন্য তাদের ধর্ম (দ্বীন)। এটা তাদের নিজেদের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি তাদের অনুসারীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক বা বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজে লিপ্ত হতে পারবে না। * উপরিউক্ত ধারা বনু নাজ্জার, বনু হারিস, বনু সাইদাহ, বনু জুশাম, বনু আউস, বনু সালাবাহ প্রভৃতি ইহুদি গোত্রের জন্যও প্রযোজ্য। * সালাবাহ গোত্রের উপগোত্র (বতন) জাফনাহ, বনু শুতায়বা, সালাবাহ গোত্রের মাওয়ালিগণ, বিতানাহ প্রভৃতি ইহুদি গোত্র-উপগোত্রের জন্যও তা প্রযোজ্য। যদি তারা কোনো প্রকার বিশ্বাসঘাতকতা না করে, তাদের সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। * এই জনমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত কেউ হজরত মুহাম্মদ সা:-এর বিনা অনুমতিতে কোনো যুদ্ধযাত্রা করতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবে। আল্লাহ এ সনদের সত্যিকার বাস্তবায়নকারী। * ইহুদি ও মুসলমানেরা পৃথকভাবে নিজেদের ব্যয়ভার বহন করবে। এ দুই দলের মধ্যে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সম্মানজনক ব্যবহারের সম্পর্ক-বিশ্বাসঘাতকতার সম্পর্ক নয়। এ সনদকে যারা স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করলে তারা তাদের বিরুদ্ধে একত্র হবে। * এ সনদের আওতাভুক্ত সবার কাছে ইয়াসরিব উপত্যকা অত্যন্ত পবিত্র স্থান। * ‘আশ্রয়প্রাপ্ত প্রতিবেশী’ (জার) কোনো প্রকার নাশকতামূলক অথবা বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজে লিপ্ত না হলে আপনজন বলে বিবেচিত হবে। * মহিলারা তাদের গোত্রের লোকদের সম্মতি ছাড়া ‘প্রতিবেশীসুলভ আশ্রয়’ (তুজার) পাবে না। * এ সনদের অন্তর্ভুক্ত লোকদের মধ্যে যেসব বিবাদ-বিসংবাদ অথবা ঝগড়া-ফাসাদ সাধারণভাবে মীমাংসা করা সম্ভব হবে না, তার মীমাংসার ভার আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওপর ন্যস্ত করতে হবে। * আল্লাহ অত্যন্ত বিচণ এবং এ সনদের সত্যিকার বাস্তবায়নকারী।
* কুরাইশ ও তাদের সাহায্যকারীকে ‘তুজার’ দেয়া যাবে না। * ইয়াসরিব সহসা আক্রান্ত হলে এ সনদের আওতাভুক্ত সবাই শত্রুর বিরুদ্ধে একত্র হবে। * যখন তাদের কোনো যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সন্ধি করতে বলা হবে, তখন তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে ও সন্ধি করবে এবং তা মেনে নেবে। * ‘আউস গোত্রের ইহুদিরা ও তাদের অনুগত ব্যক্তিরা এ সনদের সমর্থকদের সাথে যতদিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সম্মানজনক ব্যবহার করবে, ততদিন পর্যন্ত তারা সনদের আওতাভুক্ত লোকদের সমমর্যাদা লাভ করবে। * আল্লাহ এই সনদের সত্যিকার বাস্তবায়নকারী। অন্যায়কারীকে বা বিশ্বাসঘাতককে এ সনদ প্রশ্রয় দেয় না, অন্যায় বা বিশ্বাসঘাতকতা না করে যে বাইরে চলে যায়, সে নিরাপদ, যে ভেতরে থাকে, সেও মদিনায় নিরাপদ। আল্লাহ তাদের ‘প্রতিবেশীসুলভ আশ্রয়’ দেন (জোর), যারা সৎকার্য করে এবং আল্লাহকে ভয় করে। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
অনুবাদ : অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম


আরো সংবাদ



premium cement