১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্মানীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন

-

হজরত যায়েদ ইবন হাইয়্যান রা: বলেন, আমি হুসাইন ইবন সাবুরা রা: ও উমর ইবন মুসলিম রা: একসাথে হজরত ইবন আরকাম রা:-এর কাছে গেলাম। যখন আমরা তার কাছে বসে পড়লাম, তখন হুসাইন রা: তাকে বললেন, হে হুসাইন! আপনি অনেক কল্যাণকর বিষয়াদি দেখার সৌভাগ্য পেয়েছেন। রাসূল সা:-এর সাক্ষাৎ লাভে আপনি ধন্য হয়েছেন। মহানবী সা:-এর অনেক হাদিস আপনি শুনেছেন। তার সাথে অনেক যুদ্ধে আপনি শরিক হয়েছেন। তার পেছনে আপনি বহু নামাজ পড়েছেন। হে জায়েদ! নিঃসন্দেহে আপনি অনেক বরকত-কল্যাণের অধিকারী হয়েছেন। আপনি আমাদের সেসব হাদিস শোনান, যা আপনি নবী করিম সা:-এর কাছ থেকে শুনেছেন। হজরত জায়েদ রা: জবাবে বললেন, হে ভাতিজা! আমার বয়স অনেক হয়েছে। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হয়েছে। হুজুর সা:-এর কাছ থেকে শুনে যা মুখস্থ করেছিলাম তার কোনো কোনো কথা, ভুলে গেছি। তাই যা কিছু তোমাদের বয়ান করব, তা মেনে নেবে; আর যা বলব না, তেমন কিছু বলতে আমাকে বাধ্য করবে না। তার পর তিনি বললেন, এক দিন রাসূল সা: আমাদের উদ্দেশে ভাষণদানের লক্ষ্যে ওই পানির তীরে দাঁড়ালেন, যেটিকে ‘খুম’ বলা হয় এবং তা মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। নবী করিম সা: আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা পাঠ করলেন এবং ওয়াজ-উপদেশ প্রদান করলেন। তার পর ইরশাদ করলেনÑ
হামদ ও সানার পর, ‘হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। অতিসত্বর আমার প্রভুর বাহক আমাকে নিয়ে যেতে আসবে এবং আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবো। আমি তোমাদের কাছে দুটো মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। যার মধ্যে প্রথম বস্তুটি হলো, আল্লাহর কিতাব, যাতে রয়েছে হিদায়েত ও আলো। তোমরা আল্লাহর এ কিতাব গ্রহণ করো এবং তা শক্তভাবে ধরে রাখবে।’ এমনিভাবে নবী সা: আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী আমল করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করলেন। অতঃপর বললেন, ‘দ্বিতীয় বস্তুটি হলো আমার পরিবার-পরিজন। আমি তোমাদেরকে আমার ‘আহলে-বায়ত’ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ রাখতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি।’
তা শুনে হুসাইন রা: জিজ্ঞাসা করলেন, হে জায়েদ! নবী করিম সা:-এর ‘আহলে-বায়ত’ কারা? তাঁর পবিত্র বিবিগণ কি ‘আহলে-বায়ত’ এর অন্তর্ভুক্ত নন? হজরত জায়েদ রা: বললেন, নবী সা:-এর স্ত্রীরা তো আহলে-বায়তের অন্তর্ভুক্ত আছেনই। তা ছাড়াও নবী সা:-এর আহলে-বায়তের মাঝে সেসব লোকজনও অন্তর্ভুক্ত যাদের ক্ষেত্রে ‘সাদাকা’র সম্পদ হারাম করা হয়েছে। হুসাইন রা: প্রশ্ন করলেন, তারা কারা? তিনি বললেন, হজরত আলী রা:, হজরত আকিল রা:, হজরত জাফর রা:, হজরত আব্বাস রা: ও এদের বংশধরেরা। হুসাইন রা: প্রশ্ন করলেন, এদের সবার জন্য সাদাকার মাল হারাম করে দেয়া হয়েছে? হজরত জায়েদ রা: বললেন, হ্যাঁ। (মুসলিম শরিফ, মুনতাখাবুল কানয : খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা- ৯৫)
মুমিন জননী হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূল আকরাম সা: নিজ সাহাবাদের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁর পাশে হজরত আবু বকর রা: ও হজরত উমর রা: বসা ছিলেন। সম্মুখপানে হজরত আব্বাস রা: আসতে দেখা গেল। তার জন্য হজরত আবু বকর রা: বসার স্থান করে দিলেন। তিনি হজরত আবুবকর ও হজরত নবী করিম সা:-এর মাঝখানেই বসে গেলেন। তাতে নবী করিম সা: বললেন, ‘মর্যাদাশালীদের মর্যাদা মর্যাদাসম্পন্নরাই ভালো জানেন।’ তার পর মহানবী সা: হজরত আব্বাস রা:-এর প্রতি মুখ ফিরিয়ে তার সাথে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। এ সময় প্রিয় নবী সা: স্বীয় বাক্যালাপের শব্দ অনেক নিচু করে দিলেন। তখন হজরত আবু বকর রা: হজরত উমর রা:-কে বললেন, হুজুর সা:-এর কি কোনো কষ্ট হয়ে গেছে কি না? যে কারণে আমার মনে সংশয় জাগছে! হজরত আব্বাস রা: নবী সা:-এর কাছে সেভাবেই বসা রয়েছেন। নবী সা: যখন তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিলেন; তিনি চলে গেলেন। তখন হজরত আবু বকর রা: নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আপনার এখন কি কোনো কষ্ট হয়েছিল? নবী সা: বললেন, না। হজরত আবু বকর রা: বললেন, আমি লক্ষ করলাম, আপনার কথার স্বর একেবারে ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল! নবী সা: ইরশাদ করলেন, ‘হজরত জিব্রাইল আ: আমাকে নির্দেশ দিলেন, যখন হজরত আব্বাস রা: আসবেন, আমি যেন অনেক নিচু স্বরে কথা বলি।’ যেমনটি আমি তোমাদের নির্দেশ দিয়ে থাকি যে, তোমরা আমার কাছে বা সামনে তোমাদের কথা নিচু স্বরে বলবে। (ইবন আসাকির সূত্রে : কানয : খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৬৮)
ইবনে শিহাব বর্ণনা করেন, হজরত আবুবকর রা: ও হজরত উমর রা: নিজ নিজ খিলাফতকালে যখনই হজরত আব্বাস রা:-এর সাক্ষাৎ পেতেন আর তারা বাহনে আরোহিত অবস্থায় থাকতেন, তাৎক্ষণিক তারা হজরত আব্বাস রা:-এর সম্মানে বাহন থেকে নেমে যেতেন এবং বাহনের জন্তুগুলোর লাগাম হাতে ধরে রেখে তার সাথে হাঁটতে থাকতেন। যখন হজরত আব্বাস রা: নিজ বাড়ি কিংবা গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যেতেন, তখন তারা তার থেকে পৃথক হতেন। (প্রাগুক্ত : পৃষ্ঠা-২৯)
হজরত আনাস রা: বলেন, নবী করিম সা: মসজিদে বসা ছিলেন এবং সাহাবাগণ চার দিকে তাঁকে ঘিরে বসে অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় সামনের দিক থেকে হজরত আলী রা: এসে পৌঁছালেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে মজলিসে বসার স্থান লক্ষ করছিলেন। মহানবী সা: নিজ সাহাবাদের প্রতি তাকাচ্ছিলেন, তাদের কেউ তাকে বসার স্থান করে দিচ্ছেন কি না? হজরত আবু বকর রা: নবী সা:-এর ডানে বসা ছিলেন। তিনি নিজ স্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে বললেন, হে আবুল হাসান! আপনি এখানে এসে বসে পড়–ন! আর এভাবেই হজরত আলী রা: এসে নবী করিম সা: ও হজরত আবু বকর রা:-এর মাঝামাঝি বসে পড়লেন। তখন আমরা দেখতে পেলাম, নবী করিম সা:-এর চেহারা মুবারকে অত্যন্ত খুশির ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এর পর হুজুর সা: হজরত আবু বকর রা:-এর প্রতি তাকিয়ে ইরশাদ করলেন, ‘হে আবু বকর! ‘সম্মানী লোকের কাছ থেকেই সম্মানজনক ব্যবহার প্রকাশ পায়’। (আল-বিদায়া : খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা- ৩৫৮)
লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন


আরো সংবাদ



premium cement
বুয়েটে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহতদের পরিবারের সাথে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির

সকল