২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এসতেখারার সালাতের ফজিলত

-


এসতেখারার সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যখন মানুষ কোনো কাজকর্ম করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। তখন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মহান আল্লাহপাকের কাছে মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যে যে সালাত আদায় করা হয় তাকে এসতেখারার সালাত বলে।
এসতেখারা শব্দের অর্থ : এসতেখারা শব্দের অর্থ মঙ্গল কামনা করা, কল্যাণ কামনা করা, শুভ ফল কামনা করা, সঠিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করা প্রভৃতি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়; যদি এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, কোনো বিষয়ে কোনো প্রস্তাব এসেছে। অথবা কোনো বিয়ের পয়গাম এসেছে। কোনো সফরে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে অথবা কোনো কারবার শুরু করার ব্যাপারে অথবা কোনো চাকরি করা বা ত্যাগ করার ব্যাপারে, কোনো বাড়ি, জমি বা দোকান কেনাবেচার ব্যাপারে অথবা বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার ব্যাপারে অথবা কারো সাথে কোনো সম্পর্কে জড়িত হওয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে যদি কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তা হলে তা সমাধানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মঙ্গল কামনা করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে দোয়া করাকে এসতেখারার সালাত বলে।
অর্থাৎ যেকোনো ব্যাপারে কোনো ধরনের সমস্যা দৃশ্যমান হলে এসব বিষয়ে মন স্থির করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিমিত্তে আল্লাহ তায়ালার নিকট মঙ্গল কামনা করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়াকে এসতেখারার নামাজ বলে। এসতেখারার নামাজ পড়ে মসনুন দোয়া পড়া মুস্তাহাব। এসতেখারার নামাজ আদায়ের পর যে দিকে মনের সাড়া বা ঝোঁক প্রবণতা অনুভূত হবে তা অনুসরণ করলে মহান আল্লাহ তায়ালার ফজলে সাফল্য লাভ করা সম্ভব হবে। আমাদের প্রিয় নবী সা: বলেছেন, ‘এসতেখারাকারী কখনো ব্যর্থ হয় না। পরামর্শকারী কখনো অনুতপ্ত হয় না এবং মিতব্যয়কারী কখনো অপরের মুখাপেী হয় না’। (তাবারানি)
এসতেখারাকারী সৌভাগ্যবান : এসতেখারাকারীকে নবী করিম সা: সৌভাগ্যবান বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই এসতেখারার সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার ফায়সালার ওপর সন্তোষ প্রকাশ করা উচিত। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: বলেন, ‘আল্লাহর নিকট এসতেখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহর মর্জির ওপর রাজি থাকাও আদম সন্তানের জন্য সৌভাগ্য। আদম সন্তানদের জন্য দুর্ভাগ্য যে, তারা আল্লাহর কাছে এসতেখারা করে না এবং আল্লাহর ফায়সালার ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে’। ( মুসনাদে আহমাদ)
এসতেখারার পদ্ধতি : এসতেখারা করার কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে। এ নিয়ম বা পদ্ধতি অনুযায়ী এসতেখারা করতে হয়। নামাজের নিষিদ্ধ সময় ছাড়া সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো সময়ে সাধারণ নফল নামাজের আদলে দুই রাকায়াত এসতেখারার নামাজ আদায় করুন। তারপর আল্লাহর হামদ সানা ও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ করুন। অতঃপর আমাদের প্রিয় নবী সা:-এর শেখানো এসতেখারার দোয়া পড়ে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। তারপর মনের ঝোঁক প্রবণতা যেদিকে সাড়া দেয় তা আল্লাহর মর্জি মনে করে অনুসরণ করুন। অনিবার্য কারণে যদি নামাজের সুযোগ না হয় তাহলে শুধু দোয়া পড়লেই চলবে। যেমনÑ যদি কোনো মহিলা হায়েজ বা নেফাসের অবস্থায় থাকে তবে তার পে নামাজ আদায় সম্ভব নয়। এ অবস্থায় শুধু দোয়া পড়ে ঘুমিয়ে যাবে, তারপর মন যে দিকে সাড়া দেয় সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
এসতেখারার দোয়া : এসতেখারার নামাজ আদায়ের পর নবী করিম সা:-এর শেখানো দোয়া পড়া মুস্তাহাব। হজরত জাবের রা: বলেন, নবী করিম সা: যেভাবে আমাদের পবিত্র কুরআন শিা দিতেন, ঠিক সেভাবে এসতেখারার দোয়াও শিা দিতেন। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যদি কোনো সময়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে তাহলে দুই রাকায়াত নফল নামাজ পড়ে দোয়া করো। এসতেখারার দোয়া নিম্নরূপ :
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার এলেমের ভিত্তিতে তোমার কাছে মঙ্গল কামনা করছি এবং তোমার কুদরতের দ্বারা তোমার বিরাট ফজল ও করম ভিা চাচ্ছি। কারণ তুমি কুদরতের মালিক এবং আমি শক্তিহীন। তুমি সব জানো, আমি জানি না এবং তুমি গায়েবের কথাও ভালোভাবে জানো।
হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞান মতে, এ কাজ যদি আমার জন্য, আমার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য এবং শেষ পরিণামের জন্য মঙ্গলকর হয়, তা হলে তা আমার ভাগ্যে লিখে দাও। আমার জন্য তা সহজ করে দাও এবং তা আমার জন্য বরকতপূর্ণ করে দাও। আর যদি এ কাজ আমার জন্য, আমার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য এবং পরিণামের জন্য অমঙ্গলকর হয়, তা হলে তা আমার থেকে দূরে রাখো এবং আমাকে তার থেকে বাঁচাও। আমার ভাগ্যে মঙ্গল লিখে দাও যেখানেই তা হোক। তারপর তার প্রতি আমাকে সন্তুষ্ট এবং অবিচল থাকার তৌফিক দাও’।
উপরিউক্ত দোয়া পড়ার পর কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। এভাবে সাতবার করা উত্তম। তা হলে আল্লাহর প থেকে সাফল্য লাভ করা যায়। সুতরাং সবাইকে এসতেখারার সালাত আদায় করে আল্লাহর মঙ্গলের প্রত্যাশা করা উচিত।
লেখক : গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement