২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই

-


পবিত্র কাবাÑ কালো কাপড়ে বেষ্টিত পবিত্র এই ঘরখানির আধ্যাত্মিক মর্যাদা পবিত্র কুরআনুল কারিম গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেছে। সূরা কুরাইশের ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বাইতুল্লাহকে তাঁর ঘর হিসেবেই অভিহিত করেছেন। সূরা বাকারার ১২৫ নম্বর আয়াতে পবিত্র কাবাকে তিনি ‘আমার ঘর’, অর্থাৎ তাঁর নিজের ঘর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই মুসলিম মাত্রই হৃদয়ের মণিকোঠায় পোষণ করেন এই পবিত্র ঘরে হাজিরা দেয়ার আকুল মিনতি। লালন করেন বাইতুল্লাহর দিকে অপলক তাকিয়ে পতঙ্গের মতো একে প্রদক্ষিণ করে মহান রবের সান্নিধ্যে নিজেকে একেবারেই বিলিয়ে দেয়ার আজন্ম স্বপ্ন।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহিম আ: আল্লাহর নির্দেশে বাইতুল্লাহকে পুনর্নির্মাণ করে তাঁর নির্মাণকে গ্রহণ করে তাঁর শ্রমকে সার্থক করার জন্য যখন মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করলেন। আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম আ:-কে তাঁর দোয়া কবুল করে নিদের্শ দিলেন, ‘এবং হে (ইবরাহিম! তুমি) মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও। তারা দূরদূরান্তের আনাচ-কানাচ থেকে তোমার কাছে আসবে হেঁটে। আসবে সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে সওয়ার হয়ে’ (সূরা হজ : ২৭)।
এ আয়াতের তাফসিরে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ইবরাহিম আ: পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণের পর আল্লাহ তায়ালাকে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নির্দেশে বাইতুল্লাহকে নির্মাণ করেছি।’ অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হজের ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন, আমার আওয়াজ কী করে (অত দূর) পৌঁছবে? আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি ঘোষণা করে দাও। তোমার ঘোষণা ও আওয়াজ বিশ্বমানবতার কানে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার। হজরত ইবরাহিম আ: বললেন, হে রব! ঘোষণায় কী বলব? আল্লাহ তায়ালা বললেন, বলোÑ ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে।’ ইবরাহিম আ: ঘোষণা দিলে আসমান ও জমিনের সবাই সে ঘোষণা শুনতে পায়। (বায়হাকি, মুসান্নাফে আবি শায়বা, মুসতাদরাকে হাকিম)।
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবরাহিম আ: আবু কুবাইস পাহাড়ে উঠে নিজের দুই কানে আঙুল দিয়ে সুউচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন; তোমরা তোমাদের প্রভুর আহ্বানে সাড়া দাও। তখন পুরুষের ঔরসে ও নারীর গর্ভে যারা ছিল সবাই ‘লাব্বাইকা’ বলে সাড়া দিলো (তাফসিরে রুহুল মাআনি)। বর্ণনান্তরে হজরত ইবরাহিম আ: সাফা পাহাড় অথবা মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে, হজের জন্য বিশ্বমানবতাকে আহ্বান করার পর পাহাড় ঝুঁকে পড়ে। সারা দুনিয়ায় এ ঘোষণার আওয়াজ গুঞ্জরিত হয়। পিতার ঔরসে, মায়ের গর্ভে যারা ছিল তাদের কানেও আল্লাহ তায়ালা সেই শব্দ পৌঁছে দেন। পাথর, বৃক্ষরাজি এবং প্রত্যেক ওই ব্যক্তি যার হজ নসিব হবে সবাই সমস্বরে লাব্বাইকা বলে উঠল।
মুজাহিদ রহ: বলেন, ‘অতএব, যে লোক এ পর্যন্ত হজ করেছে সে অবশ্যই সেই আওয়াজ শুনেছিল এবং (লাব্বাইকা বলে) সাড়া দিয়েছিল। এ আহ্বান শুনে সাড়া দেয়নি এমন কোনো ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত হজ করবে না। যে ব্যক্তি সে আহ্বানে একবার সাড়া দিয়েছিল, সে জীবনে একবার হজ করবে, আর যে দুই বা ততোধিকবার সাড়া দিয়েছিল, সে সেই অনুযায়ী ততবার হজ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে’ (তাফসিরে কাবির, ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি)।
কোন সে প্রেমিক যে তাঁর পরম প্রভুর প্রথম ডাকেই সাড়া দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল?
লেখক : প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement