২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহানবী সা: ছিলেন ইসলামের প্রচারক

-

মহানবী সা:-কে কেউ কেউ বলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক, আবার কেউ কেউ বলেন প্রচারক । তিনি প্রবর্তক না প্রচারক এ বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। প্রবর্তক ও প্রচারক সমার্থক নয়।
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী সা: উপস্থাপিত একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, শাশ্বত, ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মত জীবন দর্শন। মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই যে দিক সম্পর্কে ইসলাম আলোকপাত করেনি।
পবিত্র কুরআন হলো আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য উপহার। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল্লাহ তায়ালার পবিত্র ওহি বা বাণীর সঙ্কলন হচ্ছে পবিত্র কুরআন মজিদ। পবিত্র কুরআন বিশ্বের মানবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ইহকাল ও পরকালের সর্ব কল্যাণের জন্য এতে রয়েছে নির্দেশাবলি। এটি মানবজাতির হেদায়েতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কিতাব। কুরআন মহানবী সা:-এর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেজা। এই মহান গ্রন্থের গ্রন্থকার স্বয়ং আল্লাহ। ওহি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে সম্পূর্ণ কুরআন নাজিল হতে সময় লেগেছিল ২২ বছর ৫ মাস ২৪ দিন। কুরআন লিখিত নয়, আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ। পবিত্র কুরআনের মূলপাঠ বা ধ্বনিটুকু নাজিল হয়েছে। লিখিত কোনো কপি নাজিল হয়নি। যা অবিকৃত অবস্থায় বর্তমানে আছে ও থাকবে। পবিত্র কুরআন এমনি একটি বহুল পঠিত ধর্মগ্রন্থ যা বিশ্বে বিরামহীনভাবে ২৪ ঘণ্টা পঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিন ও রাতের সময় ভিন্ন হওয়ায় বিশ্বের কোথাও-না- কোথাও নামাজ, রোজা, জিকির-আসকার, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিল, তাবলিগ ইত্যাদির মাধ্যমে কুরআন অবিরাম পঠিত হচ্ছে।
পবিত্র কুরআন মানুষের জন্য ধর্ম রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন, তর্কশাস্ত্র, ভাষা ও সব চিন্তাচেতনার উৎস। কুরআনে সব মানুষের জন্য ইহকাল ও পরকালের সব মৌলিক সমস্যার অনুসরণযোগ্য সমাধান বিদ্যমান। নিরেট অনুবাদের সাহায্যে নিজে নিজে অধ্যয়ন করে কুরআনের সঠিক মর্ম বোঝা সম্ভব নয়। কুরআন সাহিত্য পুস্তক নয় যে, ভাষাগত অর্থ জানাই এর অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার জন্য যথেষ্ট হবে।
পবিত্র কুরআন শুধু সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, গণিত বা আইনÑ এ ধরনের কোনো বিষয়ের ওপর লিখিত গ্রন্থ নয়। বিজ্ঞানের সব শাখা যেমনÑ রসায়নবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, উদ্ভিদ ও আবহাওয়া বিজ্ঞানসহ সব শাখা-প্রশাখার তথ্যাবলি কোনো না কোনোভাবে কুরআনে স্থান পেয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, কুরআনের প্রধান আলোচ্য বিষয় শুধু একটি। তা হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। এই উপায়গুলোর সাথে যেসব বিষয় যুুক্ত সে বিষয়ের উল্লেখ কোথাও উদ্দেশ্য হিসেবে এবং কোথাও গৌণ হিসেবে রয়েছে। কুরআনের মূল বিষয় হচ্ছে মহানবী সা:কে প্রতি পদে ওহির মাধ্যমে পথনির্দেশ দেয়া, যাতে তিনি বুঝতে পারেন, এখন কোন পথে যেতে হবে। ইসলামের সূচনার দিকে যেসব সূরা নাজিল হয়েছিল তাতে মহানবী সা:কে বলা হয় : আপনি উঠুন এবং মানুষকে সতর্ক করুন। নবী হওয়ার প্রথম দিকে এ নির্দেশ ছিল।
ইসলামের মূলমন্ত্র ঈমান। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মাধ্যমে ঈমানের শিক্ষা দেন। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, আখেরাত, ফেরেশতা, আগের নবী ও রাসূল আসমানী কিতাবÑ এগুলোর ওপর ঈমান আনতে হবে। কুরআনে ইসলামের বিধিবিধানগুলো যেমন সালাত, হজের বিবরণ, রোজার বিবরণ, জাকাতের বিধানের মূল দিকগুলো বর্ণিত হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো আইন। কেউ মারা গেলে সম্পত্তির বণ্টন, বিয়ের আইন, ঋণচুক্তি ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করা হয়েছে।
মহানবীকে গাইড করার জন্য কুরআনে অনেক ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। ইতিহাসে কী ঘটেছে এবং তার শিক্ষণীয় বিষয় কী, তা তুলে ধরা হয়েছে। যেমন হজরত মুসা আ: ও ফেরাউনের কাহিনী। অনেক ক্ষেত্রে ইবাদতের নিয়মনীতি শেখানো হয়েছে। মহানবী সা: এগুলো কিভাবে আমল করতে হবে তা বলেছেন এবং এগুলো হাদিসে আছে। হাদিস হচ্ছে মহানবী সা:-এর বক্তব্য ও কর্মের বিবরণী।
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। শরিয়তের পরিভাষায় পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম আ: থেকে শুরু করে শেষনবী পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের আনীত দীনকে ইসলাম বলে। সব নবী রাসূল ইসলামের দিকেই মানুষকে আহ্বান করেছেন এবং তাঁরা এরই ভিত্তিতে নিজ নিজ উম্মতকে পরিচালনা করেছেন। মহানবী সা:-এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম পূর্ণ পরিণত রূপ লাভ করে। ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করিয়া দিলাম এবং আমি তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পরিপূর্ণ করিয়া দিলাম এবং আমি ইসলামকে তোমাদের ধর্মরূপে পছন্দ করিলাম।’ (সূরা মায়িদা) এই আয়াতটি নাজিল হয়েছিল বিদায় হজের ভাষণের পর আরাফাতের ময়দান সন্নিহিত জাবালে রহমত পাহাড়ে দশম হিজরির ৯ জিলহজ তারিখে। বিধিবিধান সম্পর্কিত এটাই কুরআনের শেষ আয়াত। এ আয়াত নাজিলের পর হজরত আবুবকর রা: কাঁদতে লাগলেন। কান্নার কারণ জানতে চাইলে হজরত আবুবকর রা: বললেন, এখন মহানবী সা:-এর যাওয়ার সময় হয়েছে। আল্লাহ পাক ইসলাম ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন এবং ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। এরপর মহানবী সা: ৮১ দিন জীবিত ছিলেন।
ইসলাম মনুষ্য রচিত কোনো মত বা পথ নয়। ইসলাম আল্লাহ কর্তৃক মহানবী সা:-এর মাধ্যমে প্রচারিত একটি দীন। মহানবী সা: আল্লাহ পাকের নির্দেশনা অনুযায়ী দীনকে প্রচার করেছেন।
লেখক : নিবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement