২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুরআনের গুরুত্ব ও মর্যাদা

-

‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথ যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, যে কুরআনকে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছেন, সে কুরআন আজ আমাদের কাছে কোন অবস্থায় আছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। লক্ষ করলে দেখব, কুরআন আজ আমাদের সমাজে কত নাজুক অবস্থায় আছে। আমরা পবিত্র কুরআন খতমের পর খতম করছি, আর চুমু খেয়ে সে কুরআনকে পেকেট করে তাকে তুলে রাখছি। কুরআন আজ জিন-ভূত তাড়ানোর কাজে, তাবিজ-কবজ দেয়ার কাজে, ঝাড়ফুঁক কিংবা পানিপড়া দোয়ার কাজে, স্ত্রী তালাকের কাজে এমনকি ভিক্ষাবৃত্তির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কুরআনের অনুসারীদের জঙ্গি আখ্যায়িত করে তাদের নির্মূল করার অভিযান চলছে। অথচ কুরআন নাজিল হয়েছিল ব্যক্তিগত, আমাদের সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক তথা যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য। কুরআনের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য। কুরআন স্টাডি করে আমাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করার কথা ছিল। অর্থাৎ যে কুরআন ছিল আমাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের একটা উত্তম প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র, সেখানে আমরা কুরআনকে বারবার খতম করার মাধ্যমে মনে হয় যেন ডাক্তারের দেয়া সেই প্রেসক্রিপশন বারবার তোতা পাখির মতো পাঠ করছি। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যে ওষুধ সেবনের কথা ছিল, তা করছি না। ফলে রোগীর যেমন রোগ পরিত্রাণের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না, তেমনি কুরআনের আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের সমস্যাবলিরও কোনো সমাধান হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘যে কুরআনের বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না, রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করে না, সে জালেম, ফাসেক ও কাফের’। কুরআনের আইন মানার কারণে খোলাফায়ে রাশেদার যুগ স্বর্ণযুগে পরিণত হয়েছিল। কুরআনকে মর্যাদা দেয়ার কারণেই হজরত হোসাইন রা: ইয়াজিদের খেলাফত মেনে নিতে পারেননি। ঠিক তেমনিভাবে কুরআনকে মর্যাদা দেয়ার কারণেই দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পয়গম্বর মুহাম্মদ সা: আবু জেহেল, আবু লাহাবকে মেনে নিতে পারেননি। এমনকি নিজের জন্মভূমি, মাতৃভূমি ও আত্মীয়স্বজনের মায়া-মমতা পরিত্যাগ করে হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমরা জানি, এক অক্ষর কুরআন পাঠে ১০ নেকি। কিন্তু আমার প্রশ্নÑ আমরা যদি সকালবেলা ‘ওয়া আহালাল্লাহুল বাইয়া ওয়া-হাররামার রিবা’ অর্থাৎ তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে এবং সুদকে করা হয়েছে হারাম। সকালে এ আয়াত পাঠ করে যদি দুপুরে কোনো সুদি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খুলতে যাই, তবে এক অক্ষরে কিভাবে ১০ নেকি হবে তা আমার বুঝে আসে না। তাই আমাদের চিন্তা করা দরকার এবং আত্মসমালোচনা করা দরকার যে, এ মহামূল্যবান কুরআনের সাথে আজ আমরা যে আচরণ করছি, তা দিয়ে কি আল্লাহ তায়ালার নিকট কাল-কিয়ামতে জবাবদিহি করতে পারব বা আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তি লাভ করতে পারব? যদি তা না হয় তবে আসুন আজকের দিনে এ পবিত্র মাহে রমজানেই আমরা আবারো শপথ গ্রহণ করি, শুধু কুরআন তিলাওয়াতই নয়, চুমু খাওয়া কিংবা জিন-ভূত তাড়ানোর কাজে কুরআনকে ব্যবহার করব না। আমরা কুরআন বুঝে পড়ব এবং কুরআন অনুযায়ী আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে গড়ে তুলব। তবেই রমজান মাস ও কদরের রাত আমাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের কারণ হবে এবং তবেই আমাদের সেহরি খাওয়া, ইফতার করা এবং তারাবিসহ কুরআন খতম করা ও সিয়াম সাধনা করা সফল হবে, সার্থক হবে। অন্যথায় হাদিসে কুদসির ভাষায় এ সিয়াম সাধনা কোনো কাজে আসবে না, সেখানে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, এমন কিছু রোজাদার আছে, যাদের ভাগ্যে শুধু ক্ষুধা, পিপাসা ভোগ করা ছাড়া আর কিছুই জুটে না’। লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement