২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রমজান মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়

-

ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে সাওম চতুর্থ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রোকন বা স্তম্ভ। যা ফরজ করা হয়েছে মুসলমানের জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা পরহেজগারিতা অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারা-১৮৩)।
মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি মানবজাতির পথপ্রদর্শনের জন্য এই মাসেই পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। এই মাসের শেষ দশকে রয়েছে এক মহিমা¤িœত রাত, যা হাজার মাসের (ইবাদতের) থেকে উত্তম; আল্লাহ তায়ালা যাকে লাইলাতুল কদর বলেছেন। পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন এই মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে বেশ কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণের পাশাপাশি অনেক হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। যেমন, হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিতÑ আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না, মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয় তবে সে যেনো বলে, আমি রোজাদার। ওই সত্তার শপথ; যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, সে আমার জন্য পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করে, সিয়াম আমারই জন্য, আমি নিজেই এর পুরস্কার দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুন, (বুখারি, মুসলিম, আহমেদ)।
১) পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহমুখী হয়ে রমজান মাসের রোজা পালন এবং একনিষ্ঠ ইবাদতের নিয়ত করা।
২) এই মাসে বেশি বেশি ইবাদতের জন্য সময় বের করার ল্েয দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা। এ জন্য যতটুকু সম্ভব রোজা শুরু হওয়ার পূর্বেই দফতরিক কাজসহ প্রত্যেকে তার নিজ পেশা অনুযায়ী কিছু কাজ সেরে রাখা উচিত। রোজার সময় অনেক পরিবারে মহিলাদের কাজ বেশি থাকে। কিছু কাজ তারা সংপ্তি করতে পারেন। ৩) আগের সব গুনার জন্য লজ্জিত হয়ে তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে তা থেকে ফিরে আসা। খাঁটি দিলে তাওবাহকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন। ইচ্ছা এবং অনিচ্ছাকৃত করা সব পাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে তার বদলে বেশি করে নফল ইবাদত করা। কেননা হাদিসে এসেছে, ভুলে কেউ একটি পাপ করে ফেললে সে যেনো একটি পুণ্য করে নেয়। বেশি ইবাদত পাপকে মিটিয়ে দেয়।
৪) পুরুষেরা পাঁচ ওয়াক্ত সলাত মাসজিদে জামাতে আদায় করা এবং মহিলারা আওয়াল সময় খুসুখুজর সাথে সলাত পড়া। আমাদের আরো বেশি সচেতন এবং যতœবান হতে হবে সলাতের ব্যাপারে। প্রত্যেকটা রোকন পালন করে ধীর-স্থিরতার সাথে সলাত আদায় করা খুবই জরুরি। হাদিসে দ্রুত সলাতকে মোরগের ঠোকর দেয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমন সলাতকে তার মুখে ছুড়ে মারা হবে এমন সাবধানবাণীও এসেছে।
৫) রমজান মাস কুরআন অবতীর্ণের মাস। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন শিা করা, শিা দেয়া খুবই মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। কুরআন বুঝে পড়ে আমল করার মর্তবা অপরিসীম। এ বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা স্বয়ং বেশ কিছু আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন, (ক) শুদ্ধ ও যথাযথভাবে কুরআন তিলাওয়াত প্রসঙ্গে, আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তা যথার্থভাবে পাঠ করে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই তিগ্রস্ত’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত- ১২১)।
(খ) কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা প্রসঙ্গেÑ ‘আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ তা অনুধাবন করে’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত- ২৯)।
৬) কিয়ামুল লাইল বা তারাবির সলাত পড়া। তাড়াহুড়া করে বা যেনোতেনোভাবে অনেক বেশি সালাত পড়ার থেকে শুদ্ধ ও তারতিলের সাথে দীর্ঘ সূরা পড়ে কবুলযোগ্য আট-দশ রাকাত সলাত পড়া অনেক উত্তম। সলাতের প্রতি সবার বিশেষভাবে যতœবান হওয়া জরুরি, হোক তা জামাতের সাথে ফরজ সলাত কিংবা ঘরে একাকী সুন্নত বা নফল সলাত।
৭) সময়মতো নিয়ত করা, সেহরি খাওয়া এবং সময়মতো ইফতার করা। ফরজ সিয়ামে নিয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময়মতো এবং অন্তর থেকে নিয়াত করা শর্ত। শেষ রাতে সেহরি খাওয়া উত্তম এবং এতে বরকত রয়েছে। সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। সবাই একসাথে ইফতার করা উচিত।
৮) জাকাতুল মাল ও বেশি বেশি সদাকা করা। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার যাকাত বের করে সময়মতো পরিশোধ করা ফরজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাতের স্থান তৃতীয়। যাকাত অন্যের হক। কুরআনে বার বার সলাতের পর যাকাতের প্রসঙ্গটি এসেছে। রমজান মাসে যেহেতু সব ভালো কর্মের প্রতিদান বেশি, তাই এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি দান করা উচিত।
৯) কল্যাণকর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। রামাদানের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে ফলদায়ক করাতে নিজেকে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, দ্বীনের দাওয়াতি কাজসহ অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া এবং সর্বণ জিকিরের মাঝে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। পরিবারের বয়সীদের সেবাযতœ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ, বিশেষ করে পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাত পাওয়া সহজ হয়।
১০) লাইলাতুল কদর সন্ধান করা।‘সূরা কদর, আয়াত ১-৫। এ ছাড়া সূরা দুখানের তিন নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেনÑ ‘নিশ্চয় আমি একে (কুরআান) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী’। এ থেকে বুঝা যয়, এই রাতটি কতটা মহিমান্বিত। এই রাত যেনো হারিয়ে না যায় সেই জন্যে এই রাতের সন্ধানে ইতিকাফ করা উচিত এবং তা করা সুন্নত।.
১১) ওমরা করা। এই মাসে উমরা পালন করার কথা হাদিসে এসেছে যা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত।
১২) রোজা রাখা অবস্থায় সব রকম পাপ থেকে বেঁচে থাকা। আমাদের সমাজে কিছু অন্যায় অহরহ করা হয়। অনেকে রোজা অবস্থায়ও এসব থেকে মুক্ত হতে পারে না। বিশেষ করে জিহবা দ্বারা সংঘটিত পাপ। উল্লিখিত পদপেগুলো গ্রহণ করে এবং বাস্তবায়িত করতে পারলে আশা করা যায়, রামজান মাসটিকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সম হবো ইন’শা আল্লাহ। রাসূল সা: বলেন, যে রমজান মাস পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, সে সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। তাহলে আসুন আমরা সচেষ্ট হই রমজানের আদব রা করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত এবং তাওবাহ ইস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করিয়ে তার নৈকট্য অর্জনে কামিয়াব হতে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
লেখক : প্রবন্ধকার, লস এঞ্জেলেস, ইউএসএ


আরো সংবাদ



premium cement
গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা

সকল