২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জামাল খাশোগির গোপন সাক্ষাৎকার

জামাল খাশোগি -

বিভিন্ন ইস্যুতে সৌদি আরবের বর্তমান শাসকদের সাথে মতবিরোধ ছিল সাংবাদিক জামাল খাশোগির। বিশেষ করে সৌদি আরবের রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে স্বোচ্চার ছিলেন তিনি। অনেক দিন ধরেই এ নিয়ে চাপে ছিলেন তিনি। এমনকি নিহত হওয়ার আশঙ্কাও জামাল খাশোগির মধ্যে ছিল। সেই আশঙ্কার কথা তিনি জানিয়েছিলেন ইসরাইলি-ইতালীয় নারী সাংবাদিক রুলা জেবরিয়েলের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইকের জন্য সৌদি আরববিষয়ক একটি লেখার তথ্য সংগ্রহ ও মতামত নিতে রুলা কথা বলেছিলেন খাশোগির সাথে। সে সময় প্রয়োজনীয় কথার বাইরেও খাশোগি রুলাকে বলেছেন অনেক কথা।

সৌদি আরবের সংস্কার, বর্তমান শাসকদের অবস্থান, ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে অবস্থান জানিয়েছেন ও মতামত দিয়েছেন। প্রকাশ করা হবে না জেনেই ‘অব দ্য রেকর্ড’ সেই আড্ডায় খাশোগি কথা বলেছেন খোলাখুলিভাবে। তবে খাশোগি সৌদি আরবের হাতে নিহত হওয়ার পর সেই আড্ডাটি আর গোপন রাখেননি রুলা জেবরিয়েল। ‘জামাল খাশোগির গোপন সাক্ষাৎকার’ শিরোনামে সেই কথোপকথনটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে নিউজউইক অনলাইন।

গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে কিছু কাগজপত্র আনতে যাওয়ার পর আর ফেরেননি খাশোগি। প্রথমে অস্বীকার করলেও নানা নাটকীয়তার শেষে প্রায় তিন সপ্তাহ পর সৌদি আরব শিকার করে খাশোগি তাদের কর্মকর্তাদের হাতে নিহত হয়েছেন। তুরস্কের পুলিশের তদন্তে উঠে আসে নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা। খাশোগির সেই ‘গোপন সাক্ষাৎকারটি’র কিছু অংশ অনুবাদ করা হলো অন্য দিগন্তের পাঠকদের জন্য।

প্রশ্ন : সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি বুঝতে চেষ্টা করছি অনেক দিন। তিনি কি ইসলামের সংস্কার করছেন? ব্রিটেনের কেন্টারবুরির আর্চবিশপ তাকে বলেছিলেন, সংস্কার চাইলে সংখ্যালঘুদের প্রার্থনাকেন্দ্র চালু করতে দিন। তিনি বলেছেন সেটা সম্ভব নয়, কারণ এখানে আছে ইসলামের পবিত্র দু’টি স্থান। কিন্তু আমরা জানি ইসলামের ইতিহাসে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনাকেন্দ্র করার সুযোগ দেয়া হতো।
উত্তর : অতীতের মতো একই কথা... আপনাকে বেছে নিতে হবে আমি সিনেমা চালু করব অথবা মুসলিমদের মন্দিরে যাওয়ার সুযোগ দেবো। সম্ভবত এখন মুফতিরা বলবেন, ঠিক আছে সিনেমাই চলুক। মোহাম্মদ বিন সালমান যা করছেন সেটি ওয়াহাবি সংস্কার, ইসলামের সংস্কার নয়। এটি বোঝা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দু’টির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।

প্রশ্ন : তিনি কি সত্যিই ওয়াহাবি মতবাদের সংস্কার করছেন, নাকি শুধু আইওয়াশ?
উত্তর : না তিনি তাও করছেন না। আমি নিশ্চিত যে, কট্টর ওয়াহাবিরা তার কাজে খুশি না। সিনেমা চালু করা, বিনোদন, সঙ্গীত নারী পর্দা... তিনি এমন কিছু করছেন, যা সামাজিক ইস্যুতে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত (ধর্মীয় ইস্যুতে নয়)। বিচার বিভাগ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং তিনি তা থেকে লাভবানও হতে পারেন। সমাজ, ব্যবসায়-বাণিজ্যও এ থেকে উপকৃত হতে পারে। ইসলামের নীতিগত বিষয়ে চিন্তার বৈচিত্র্য ও বিচার বিভাগ সংস্কার- যদি এ দুটো তিনি করেন তবেই তাকে সংস্কারক বলা যাবে।

প্রশ্ন : ইসলামের চিন্তার বিচিত্রতা মনে কী?
উত্তর : ইসলাম সব সময়ই একটি বৈচিত্র্যময় ধর্ম; কিন্তু ওয়াহাবি মতবাদের মূলনীতি এর বিরোধী। তারা নিজেদের সত্যের একক দাবিদার মনে করেন। যা অন্যদের সাথে ওয়াহাবি মতবাদের দূরত্ব তৈরি করেছে।

প্রশ্ন : তার সংস্কার কর্মকাণ্ডগুলো তরুণ ও নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে তার জনপ্রিয়তাও আছে, কারণ অনেক দিন রক্ষণশীলতার মধ্যে থাকার পর তারা সিনেমা, গান, খেলাধুলা ইত্যাদির স্বাদ পাচ্ছে; কিন্তু আমি ভাবছি বিচার বিভাগের সংস্কারের কথা, যেটি নারীকে পুরুষের অভিভাবকত্ব আইন থেকে মুক্তি দেবে। আমি শুনেছি এটির ভিত্তি ইসলামিক আইন, যেখানে খুব বেশি পরিবর্তন করার সুযোগ নেই; কিন্তু ইসলাম নারীকে পছন্দমতো বিয়ে করার এবং অন্য কাজ করার অনুমতি দিয়েছে।
উত্তর : বিচারব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়টিকে শুধু নারী অধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে চিন্তা করবেন না, যদিও এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাদশাহ আবদুল আজিজের সময় থেকে তারা আইনকে সুনির্দিষ্ট কোড অনুযায়ী বিধিবদ্ধ করা বন্ধ করেছে, তারা ভাবছে এটি সেক্যুলার চিন্তা-ভাবনা, ইসলামে হারাম। কিন্তু আমি সংস্কার বলতে এই বিষয়টিকেই বোঝাতে চাই, যা করতে হবে বিচারব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে। আদালতকে যথাযথভাবে পরিচালিত করতে, সারা বিশ্বে যেমনটি চলে। সুনির্দিষ্ট কোড অনুযায়ী বিধিবদ্ধ আইন থাকতে হবে যেটিকেই আমি সংস্কার হিসেবে চাই।

প্রশ্ন : এমবিএস যখন এক ডজন শাহজাদাসহ আরো অনেককে গ্রেফতার করে রিজ-কার্লটন হোটেলে রাখল, আমি ভেবেছি এদের মধ্যে অনেকেই আছেন দুর্নীতিবাজ যাদের গ্রেফতার হওয়া উচিত; কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। কোনো প্রমাণ উপস্থাপন কিংবা বিন্দুমাত্র স্বচ্ছতা ছিল না। কাজেই সে যদি প্রকৃত সংস্কারবাদী হয়ে থাকে কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণগুলো প্রকাশ করল না? কেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করা হলো না সব কিছু?
উত্তর : আমি তার মধ্যে এই মানসিকতা দেখি না। তিনি এসব কিছুর প্রয়োজন অনুভব করেন না। তিনি নিজের মতো করেই চলতে পছন্দ করেন, ভেতরে ভেতরে একজন পুরনো দিনের উপজাতীয় নেতার মতো। কুয়েতের বিচারব্যবস্থার দিকে তাকানÑ এ দেশটিও সামাজিক দিক দিয়ে সৌদি আরবের মতো হলেও কুয়েতের বিচারব্যবস্থা অনেক অগ্রগামী সৌদির তুলনায়, অনেক বেশি স্বচ্ছ।

এ বিষয়টিকে এমবিএস কেন তার সংস্কারের অংশ মনে করেন না? কারণ এতে তার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের গণ্ডি ছোট হয়ে যাবে, সেটি তিনি চান না। তিনি এসবের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। কাজেই মাঝে মাঝে আমার মনে হয়... তিনি উন্নত বিশ্বের আধুনিকতা, সিলিকন ভ্যালি, সিনেমাসহ সব কিছুর ফল ভোগ করতে চান, কিন্তু তার দাদা যেভাবে সৌদি আরবকে শাসন করতেন সেভাবে দেশ শাসন করতে চান না।

প্রশ্ন : সেটি তো সম্ভব নয়, এই বিপরীত চিন্তা ফলপ্রসূ হবে না।
উত্তর : তবু তিনি সেভাবেই চান।

প্রশ্ন : কিন্তু এভাবে কি চলা সম্ভব (আপনি আধুনিক হতে চাইবেন আবার শাসনপদ্ধতি রাখবেন নিজের ইচ্ছেমতো)?
উত্তর : গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সৌদি আরবে কোনো রাজনৈতিক দল নেই, যারা তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। দ্বিতীয়ত বাইরের বিশ্বও তার ওপর সন্তুষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের বার্নি স্যান্ডার্স ছাড়া আর কেউ নেই যে বিন সালমানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। সে একমাত্র ব্যক্তি, আর কারো মাথাব্যথা নেই এ বিষয়ে।

প্রশ্ন : ২০০৪ সালের দিকে মধ্যপ্রাচ্যে আরো একজনকে সংস্কারবাদী হিসেবে দেখা হতোÑ বাশার আল আসাদ। ১৯৮৪ সালে দিকে সাদ্দাম হোসেনকেও এই উপাধি দেয় আমেরিকা। কাজেই ইতিহাস বলছে, আমেরিকা আজ যা ভাবে পাঁচ কিংবা দশ বছর পর তা পাল্টে যায়। তাদের উপলব্ধির ওপর আস্থা রাখা যায় না।

উত্তর : হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু ১৫০ থেকে ৪০০ সৌদি নাগরিককে রিজ কার্লটন হোটেলে বন্দী করে রাখার বিষয়টি আমেরিকা কেন দেখেও না দেখার ভান করল। আমি নিশ্চিত যে আমেরিকা এমবিএসের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না, যতক্ষণ না একটি বড় সঙ্কট দেখা দেয় সৌদি আরবে।

প্রশ্ন : সেই বড় সঙ্কট আমেরিকাতেও হতে পারে ৯/১১-এর মতো।
উত্তর : হ্যাঁ কিংবা সে রকমই কিছু। তেমন কিছু হলেই কেবল তারা সৌদিকে নিয়ে গুরুত্বসহকারে ভাবতে শুরু করবে।

প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। যদি এমবিএসের পরিকল্পনা বিফল হয় তাহলে তাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন আপনি। মার্কিনিরা কি এই লোক সম্পর্কে সচেতন? সেকি সমর্থন পাওয়ার মতো যোগ্য?
উত্তর : আমি দেখতে পাচ্ছি বিষয়টি কিভাবে ভুল পথে যাচ্ছে। তিনি খুব বেশি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখেন, অন্য কাউকে বিশ্বাস করেন না। এমনকি যাচাইও করেন না কারো মতো। তার যোগ্য উপদেষ্টা নেই, নিজের মতো করে একটি সৌদি আরব গড়তে চলেছেন তিনি। যেটি হবে শুধুই মোহাম্মদ বিন সালমানের মতো।

প্রশ্ন : একটি ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাই- যদি এমবিএস আপনাকে আমন্ত্রণ জানায় আবার দেশে ফিরে গিয়ে তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে, যদিও আপনার লেখনীর পর সেটি তার জন্য কঠিন; কিন্তু তেমন কোনো প্রস্তাব দিলে আপনি গ্রহণ করবেন?
উত্তর : অবশ্যই আমি সেটি গ্রহণ করব। কারণ, এটিই (প্রকৃত সংস্কার) আমি চাই। একটি আদর্শ সৌদি আরব চাই আমি। আমি নিজেকে তার বিরোধী হিসেবে দেখতে চাই না। আমি সরকার উৎখাত করতেও আহ্বান জানাই না; কারণ আমি জানি সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অসম্ভব। তেমনটি করার মতোও কেউ নেই। আমি শুধু সরকারে সংস্কার চাই।

আমি তাকে অনুরোধ জানাব বড় বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থ খরচ না করে জেদ্দা ও রিয়াদের দরিদ্রদের দিকে নজর দিতে। তাদের কর্মসংস্থান দরকার, তারা একটু ভালো জীবন চায়। তাদের ভালো-মন্দের জন্য আপনার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে তারা আপনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসবে। এই গরিব মানুষের দিকে, অর্থনীতির দিকে নজর দিন। সৌদি সমাজকে একটি উৎপাদনশীল সমাজে পরিণত করুন। আমরা দ্বিতীয় পরামর্শ হবে মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দেয়ার পুরনো পদ্ধতিতে যুদ্ধ বন্ধ করুন। আরব বসন্ত একটি সত্য ঘটনা। এটিকে স্বাগত জানান। মিসর, সিরিয়া ও ইয়েমেনের লোকদের মুক্তির আকাক্সক্ষাকে স্বাগত জানান।

প্রশ্ন : আপনি সংস্কারের কথা বলছেন। অনেক লোককে এখনো কারাগারে রাখা হয়েছে। তারাও রাজনৈতিক সংস্কার চায়। তারা কারাগারে, আপনি নির্বাসনে। এর অর্থ এই নয় কি যে, আপনাদের এই সংস্কারপদ্ধতি এমবিএস চান না।
উত্তর : হ্যাঁ, তিনি চান তার নিজস্ব সংস্কারপদ্ধতি।

প্রশ্ন : তার মানে সেই একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা?
উত্তর : পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই এখন শাসকদের এই মানসিকতা চলছে। এই পদ্ধতিতে মিসরের সিসি তার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেন, সিরিয়ার বাশারও এই নীতিতে চলছেন। আরো অনেক আরব শাসক আছেন এই দলে। তবে জর্ডান ও মরক্কোর বাদশাহরা ব্যতিক্রম।

প্রশ্ন : এমবিএস যখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন তখন বলেছিলেন তিনি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবেন; কিন্তু যখন লন্ডন গেলেন কিছু লোক প্রস্তাব দিলো ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথে গোপন বৈঠক করতে। এমবিএস ঝুঁকি আছে বলে সেই বৈঠক করতে রাজি হলেন না। তিনি কি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার নীতিতে বিশ্বাস করেন? তাহলে কেন বিষয়টি নিয়ে সব জায়গায় কথা বলেন না? উদ্বেগ কোথায়?
উত্তর : সৌদি সরকার আরব লিগ সম্মেলন ডেকে সেটিকে ‘জেরুসালেম সম্মেলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করল। কেন? আমি মনে করি, সৌদি আরবের প্রতি আরব বিশ্বে যে ক্ষোভ জেগে উঠেছে তা প্রশমিত করতে। সৌদি আরবকে ইসরাইলিদের হাতে, ইহুদি লবির হাতে তুলে দিতে দেখা যাচ্ছে এবং তারা আশঙ্কা করছে ট্রাম্প হয়তো তাদের প্রত্যাশিত জিনিসগুলো সরবরাহ করতে পারবে না। তাই তারা কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে এবং বলছে- ‘আমরা এখনো ফিলিস্তিনকে সমর্থন করি’। যেমন করে লেবাননের প্রেসিডেন্ট সাদ হারিরিকে কারাবন্দী করার ইচ্ছে থেকে সরে এসে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রশ্ন : হ্যাঁ, সেটি অবিশ্বাস্য ঘটনাই বটে। কারাবন্দী করতে চেয়েছিলেন যাকে, তার সাথে প্যারিসের রেস্তোরাঁয় আলিঙ্গনের ছবি নিজেই টুইটারে পোস্ট করেছেন। মাত্র দু-তিন মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন।
উত্তর : ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ বিষয়ে তার ওপর খুব কঠোর হয়েছিলেন। যে কারণে এমবিএস বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার চেয়ে হারিরির সাথে ফরাসি সরকারের বন্ধুত্ব অনেক গভীর। যে কারণে তিনি এমনটি করেছিলেন, ম্যাক্রোঁকে দেখাতে চেয়েছেন-‘দেখুন হারিরির সাথে আমার সম্পর্ক ভালো’।

প্রশ্ন : কাজেই দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে চাপ দিলে তাকে দমানো সম্ভব।
উত্তর : অবশ্যই সম্ভব।

প্রশ্ন : অতএব, বোঝা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিরোধিতা করলে সৌদি আরব সেই পদক্ষেপটি আর নিতে পারবে না?
উত্তর : হ্যাঁ, এখন সেটিই আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা।

প্রশ্ন : ইয়েমেন যুদ্ধে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে সৌদি আরব, যে যুদ্ধে তার পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। কাতার অবরোধ করেও তার লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আগে কাতারিরা যে পণ্য সৌদি আরব থেকে কিনত, এখন তা বাইরে থেকে কেনে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই ভাবেই সৌদি আরবের জন্য লাভজনক হয়নি বিষয়টি। এর যুক্তি কী? যদি তিনি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চান, বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করতে চান তাহলে এমন প্রকল্পে কেন যাচ্ছেন যা লাভজনক নয়?

উত্তর : ইয়েমেনে ইরানি উপস্থিতি নিয়ে তিনি শঙ্কিত। তাদের সেখান থেকে তাড়াতে চান। আবার একই সাথে তিনি ইয়েমেনে তার মিত্রদের বিষয়েও সন্দিহান। কাজেই হাউছিদের তাড়িয়ে দেশটিতে বিজয় চান তিনি। মনে হচ্ছে সেটি সম্ভব নয়। কিন্তু এই এক ব্যক্তির শাসনে কেউ তাকে বলতেও পারবে না যে, ‘মহামান্য আপনার সিদ্ধান্ত ভুল হচ্ছে, ইয়েমেনের জন্য আপনাকে বিকল্প সমাধান খুঁজতে হবে।’ তিনি বিষয়টিতে আটকে গেছেন। তিনিই এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। এবং কাতারের সাথে বিরোধও হয়ে গেছে ব্যক্তিগত সঙ্কট।

প্রশ্ন : কাতার অবরোধের যুক্তি কী?
উত্তর : এমবিএসের নীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ এই অবরোধ। তিনি যতটা ইরানের বিষয়ে শঙ্কিত ঠিক ততটাই শঙ্কিত ইসলামপন্থী রাজনীতির বিষয়ে। যেমন- মুসলিম ব্রাদারহুড, যা আরব বসন্তের মূল শক্তি ছিল। দু’টি জিনিসকেই তিনি তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন। কাতারকে মনে করা হয় আরব বসন্ত ও ইসলামপন্থী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। আলজাজিরা চ্যানেলের ভূমিকা এবং আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাতার আরব বসন্তে কিংবা ইসলামপন্থী রাজনীতিতে যে সমর্থন দিয়েছে তার প্রত্যাহার চান এমবিএস। এটিই মূলত তার দাবি। কাতার যদি বাহরাইনের মতো আরব বসন্ত ও ইসলামপন্থী দলগুলোর ওপর সমর্থন প্রত্যাহার করে তবে তিনি আবার তাদের স্বাগত জানাবেন।

প্রশ্ন : তিনি কাতারকে অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে চান?
উত্তর : অবশ্যই। এমবিএস ও আরব আমিরাতের নেতা মোহাম্মদ বিন জায়েদ মনে করেন তারা আরব বসন্তের গলা চেপে ধরেছেন এবং কাতার হচ্ছে একমাত্র জায়গা যেখানে এই আন্দোলন নিঃশ্বাস নিতে পারছে। তারা সেটি বন্ধ করতে চান।
আরব বসন্ত একটি ধারণা। ধারণা প্রস্ফুটিত হতে দরকার প্ল্যাটফর্ম। কাতার সেই সুবিধা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তন আনতে পারলে সেটি হবে বড় বিপ্লব। এই পরিবর্তনের জন্য একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে আলজাজিরা। এটির কণ্ঠ রোধ করতে পারলে তা হবে এমবিএসের জন্য বড় বিজয়।

নয়া দিগন্তের মাসিক প্রকাশনা অন্য দিগন্তের সৌজন্যে


আরো সংবাদ



premium cement