১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছবির সেটে জুনিয়র আর্টিস্টের শ্লীলতাহানি !

ছবির সেটে জুনিয়র আর্টিস্টের শ্লীলতাহানি ! - ছবি : সংগৃহীত

#মিটু আন্দোলনের জেরে টালমাটাল অবস্থা বলিউডের।তবে তাতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বোধহয় ‘হাউসফুল-৪’ ছবির। যৌন নিগ্রহের জেরে আগেই পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাজিদ খান। তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ আনার পর সরতে হয়েছে নানা পটেকরকেও। তবে বিতর্ক থামেনি সেখানে। ছবির শুটিং চলাকালীন তার শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে এবার অভিযোগ আনলেন এক তরুণী জুনিয়র আর্টিস্ট। শুটিংয়ের সময় ঘটনাস্থলে হাজির এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন তিনি।

পেশায় নৃত্যশিল্পী ওই তরুণী জানিয়েছেন, ‘‘মুম্বইয়ের চিত্রকূট ময়দানে একটি দৃশ্যের শুটিং চলছিল। ছবির দুই মুখ্য অভিনেতা অক্ষয় কুমার এবং রিতেশ দেশমুখ হাজির ছিলেন সেখানে। মাঝে ৫-১০ মিনিটের টি ব্রেক পাই। সহশিল্পীদের সঙ্গে একপাশে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। সেই সময় সহকর্মী আমির এসে বসে আমার পাশে। আমাদেরই সংগঠনের আর এক নৃত্যশিল্পী সাগরও এসে পৌঁছয়। তার সঙ্গে আরো চারজন লোক ছিল। আচমকাই আমিরকে ধরে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করে তারা। একজনের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাবে বলে জোর করতে শুরু করে। সেই নিয়ে বচসা শুরু হলে আমি মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে যাই।কিন্তু উল্টে আমার উপরই চড়াও হয় ওদের মধ্যে পবন নামের একটি ছেলে। আমাকে পাঁজকোলা করে তুলে নেয়। অশ্লীল আচরণ শুরু করে।’’

সেই সময় নাকি চিৎকার করে ওঠেন ওই তরুণী। যা শুনে শুটিংয়ের লোকজন সেখানে ছুটে আসে। অক্ষয়কুমার এবং রিতেশ দেশমুখও এসে পৌঁছন। তাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন অক্ষয়। সকলকে সেখানে দেখে ঘাবড়ে যায় পবন। সেট ছেড়ে পালিয়ে যান।

তবে ছবির একজিকিউটিভ প্রডিউসার মনোজ মিত্র যদিও উল্টো দাবি করেছেন। ঝামেলা একটা হয়েছিল বলে মেনে নিয়েছেন তিনি। তবে তার ঢের আগেই অক্ষয় এবং রিতেশের প্যাক আপ হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারেতিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে শুটিং চলাকালীন তা ঘটেনি। শুটিং শেষ হওয়ার পর ঝামেলা বেঁধেছিল। পুরোটাই ওদের ব্যক্তিগত ঝামেলা। ছবির সঙ্গে কোনো যোগ নেই। অক্ষয় এবং রিতেশের প্যাক আপ হয়ে গিয়েছিল ঢের আগেই। তাদের সেখানে হাজির থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’’

শুটিং শেষ হওয়ার পরই ঝামেলা বেঁধেছিল বলে দাবি ছবিতে নৃত্যশিল্পীদের প্রধান রমন দাভেরও। যদিও সেই সময় তিনি ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন না। সেট অ্যাটেন্ড্যান্ট স্যান্ড্রার কাছ থেকে নাকি জানতে পেরেছিলেন! বহিরাগত এক ব্যক্তির সঙ্গেই নাকি ঝামেলা বেঁধেছিল পবনের! সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি তার।

মেয়েরা মি টু আন্দোলনে, বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ
বিবিসি

নন্দিতা দাস ও মল্লিকা দুয়া। প্রথমজন ভারতের নামী অভিনেত্রী ও পরিচালক, আর দ্বিতীয়জন দেশের সেরা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের একজন। অভিনয়ও করেন সিনেমাতে।

দুজনের আর একটা মিল, নারীদের অধিকার আন্দোলনের লড়াইতে তারা আগাগোড়াই সরব, পরিচিত মুখ। সাহসী ও বলিষ্ঠ মতামতের জন্য দুজনকেই মানুষ স্পষ্টভাষী বলে চেনে। কিন্তু এই মুহুর্তে তারা দুজনেই কিছুটা অস্বস্তিতে - কারণ ভারতে মি টু আন্দোলনের সুনামিতে ভেসে এসেছে তাদের দুজনেরই বাবার নাম। তারা যথাক্রমে শিল্পী যতীন দাস ও সাংবাদিক বিনোদ দুয়া।


‘পদ্মভূষণ’ খেতাবে ভূষিত যতীন দাস ভারতের জীবিত শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বললেও সম্ভবত ভুল হবে না। তিনি একাধারে চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর, বহু স্মরণীয় শিল্পকর্মের স্রষ্টা।

আর বিনোদ দুয়া গত প্রায় চার দশক ধরে ভারতের হিন্দি সাংবাদিকতার জগতের একজন দিকপাল, বিখ্যাত টিভি অ্যাঙ্কর। এই মুহুর্তে তিনি ‘জন গণ মন কি বাত’ বলে একটি সাপ্তাহিক ভিডিও বার্তা পরিবেশন করে থাকেন, সেটিও তুমুল জনপ্রিয়।

গত ১৬ অক্টোবর নিশা বোরা নামে একজন মহিলা প্রথম টুইটারে যতীন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, চোদ্দ বছর আগে তিনি ওই শিল্পীর হাতে যৌন লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন।

যতীন দাসকে ‘মাই মলেস্টর’ বলে অভিহিত করে নিশা বোরা বিশদে বর্ণনা দিয়েছেন, কীভাবে দিল্লিতে নিজের স্টুডিওতে ডেকে পাঠিয়ে শিল্পী তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন।

তার ওই বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার পর গারুশা কাটোচ, মালবিকা কুন্ডু ও অনুশ্রী মজুমদারের মতো আরও অনেক মহিলা প্রকাশ্যে এগিয়ে এসে যতীন দাসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, জানিয়েছেন শিল্পী কীভাবে তাদেরও বিভিন্ন সময়ে যৌন নিগ্রহ করেছিলেন।

এদিকে পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে ‘স্টকিং’ ও যৌন লাঞ্ছনার অভিযোগ এনেছেন নিষ্ঠা জৈন নামে আর এক চিত্রনির্মাতা ও সাংবাদিক।

১৯৮৯ সালে চাকরির ইন্টারভিউতে ডেকে ও পরে নিজের গাড়িতে বসিয়ে কীভাবে বিনোদ দুয়া তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন, প্রায় তিরিশ বছর বাদে সে ঘটনোরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন নিষ্ঠা। এরই মধ্যে যতীন দাস ও বিনোদ দুয়া দুজনেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন।

কিন্তু এই সব অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাদের মেয়েরা, যথাক্রমে নন্দিতা দাস ও মল্লিকা দুয়া, কী ধরনের অবস্থান নেন সে দিকে অনেকেরই সাগ্রহ নজর ছিল।

বিশেষত নন্দিতা দাসের ওপর, কারণ বলিউডের যে ১১জন নারী চিত্রনির্মাতা একসাখে মিলে অঙ্গীকার করেছেন ‘মি টু’-তে অভিযুক্ত কারও সঙ্গে কোনও কাজ করবেন না নন্দিতা তাদেরও একজন।

নন্দিতা দাস অবশ্য বেশিক্ষণ চুপ থাকেননি। নিশা বোরা টুইটারে তার অভিযোগ প্রকাশ করার পর দিনই নন্দিতা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘মি টু আন্দোলনের প্রতি আমি আমার সমর্থন চালিয়ে যাব’।

‘মি টু আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে আমি আবারও বলতে চাই, যদিও আমার বাবার বিরুদ্ধে কিছু বিচলিত করার মতো অভিযোগ উঠেছে ও সেগুলো তিনি অস্বীকার করেছেন, আমি এই আন্দোলনের পক্ষে সরব থাকব।’

‘প্রথম থেকেই আমি বলে আসছি এটা এমন একটা সময় যখন আমাদের শোনাটা খুব প্রয়োজন, যাতে নারীরা (ও পুরুষরা) মুখ খুলতে ভরসা পায়। পাশাপাশি অভিযোগগুলো নিয়ে নিশ্চিত হওয়াটাও কিন্তু জরুরি, যাতে এই আন্দোলনে বেনোজল না-ঢুকে যায়!’

‘আমি অভিভূত যে চেনা-অচেনা বহু লোক বিষয়টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আমার সততার ওপর আস্থা রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সত্যিটা একদিন সামনে আসবেই - আর এই মুহুর্তে আমার এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

কমেডিয়ান মল্লিকা দুয়াও নিজের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, তার বাবার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠেছে ‘তা সত্যি হলে’ কিছুতেই মেনে নেওযা যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement